হুগলির জিরাটে কাতারের মুন টাওয়ার, রবিবার সকাল থেকেই মানুষের ঢল
আজকাল | ০৭ অক্টোবর ২০২৪
মিল্টন সেন,হুগলি: শুক্রবার সন্ধে থেকেই কার্যত উৎসব শুরু হয়ে গেছে জিরাট আদি বারোয়ারির পুজোয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগকে উপেক্ষা করে রবিবার সকাল থেকেই মানুষের ঢল পুজো প্রাঙ্গণে।
চারিদিকে আলোর রোশনাই, জমজমাট মেলা। মাঝে ঝকমকে মুন টাওয়ার। নতুন জামাকাপড় থেকে মেলাঘোরা, ঠাকুর দেখা সবই চলছে জোর কদমে। এই কয়েকটা দিনের জন্যই গোটা বছর অপেক্ষায় থাকে জেলা সদর চুঁচুড়া থেকে প্রায় ২৮ কিলোমিটার দূরে বলাগড় ব্লকের জিরাট গ্রাম।
শহর কেন্দ্রিক বা কলকাতা ঘেঁষা না হওয়ায় পুজো করতে হয় সম্পূর্ণই স্থানীয়দের নিজেদের টাকায়। এই পুজো জেলার অন্যতম বড় পুজোর মধ্যে একটি। পুজোর বাজেট বাড়তে বাড়তে বর্তমানে প্রায় ৩৬ লাখ টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে। এখনও শুধু মাত্র সরকারি অনুদান ছাড়া এই পুজো কোনও দিনই পায়নি কলকাতা ছাড়াও জেলার কোনও নামি দামী সংস্থার পৃষ্টপোষকতা। পুজোকে বড় করতে হবে তাই নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই ঝাপিয়ে পড়েন পুজোর কাজে।
পরিবার পিছু চাঁদা নয়। এই পুজোয় পরিবারের প্রত্যেক সদস্যই তাঁদের সামর্থ্য অনুযায়ী চাঁদা দিয়ে থাকেন। এই পুজোর বিশেষ গুরুত্ত্বপূর্ণ বিষয় হলো স্থানীয় মহিলাদের স্বতঃস্ফূর্ত যোগদান। পুজোর চাঁদা তোলা থেকে পুজোর আয়োজন বা মণ্ডপ সজ্জার কাজে যুক্তদের সাহায্য করা সব ক্ষেত্রেই মহিলাদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাই বর্তমানে জেলার অন্যতম বড় পুজো উদ্যোক্তাদের তালিকায় নাম উঠে এসেছে জিরাট আদি বারোয়ারির। প্রত্যেক বছরই এই পুজোর থিমে থাকে নতুন চমক। এবারেও তার অন্যথা হয় নি।
পুজোর ৭৪ তম বর্ষে উদ্যোক্তাদের নতুন চমক কাতারের মুন টাওয়ার। গত ২০ জুন খুঁটি পুজো করে মণ্ডপ তৈরির কাজ শুরু হয়। টানা চার মাস সময় ধরে ধরে চলে নির্মাণ কাজ। কোনও নামি দামী শিল্পী নয়, যত্নসহকারে সেই মণ্ডপ নির্মাণ কাজের দায়িত্ত্ব সামলেছেন স্থানীয় মণ্ডপ সজ্জার সঙ্গে যুক্ত মিস্ত্রিরা। মণ্ডপ গড়তে খরচ হয়েছে ২৪ লাখ টাকার কিছু বেশি। পুজো মণ্ডপের উচ্চতা প্রায় ৯০ ফুট। চওড়া ১২০ ফুট। তবে সমস্ত খরচ হিসেব করলে গোটা পুজোর মোট ব্যয় গিয়ে দাঁড়াবে প্রায় ৩৬ লাখ টাকায়। মুন টাওয়ারে দর্শনার্থীদের প্রবেশের মূল পথে থাকছে ক্রিস্টাল পাথরের তৈরি নানান কারুকাজ।
প্রতিমার সর্বাঙ্গ সাজানো হয়েছে বিভিন্ন ছোট ছোট রঙিন পাথর দিয়ে। সাধারণত দুর্গা পুজোয় প্রতিমার ডান দিকে থাকে লক্ষী গণেশ এবং বামদিকে থাকে কার্তিক সরস্বতী। আদি বারোয়ারির প্রধান বিশেষত্ব এই পুজোয় দুর্গা প্রতিমার ডান দিকে থাকে কার্তিক সরস্বতী এবং বাম দিকে থাকে লক্ষী গণেশ। যা বিগত দীর্ঘ সময় ধরেই হয়ে আসছে। শুরু থেকেই এই পুজোর প্রতিমা নির্মাণ কুরে আসছেন গুপ্তিপাড়ার মৃত শিল্পী বাবু পাল। পুজো উপলক্ষে পুজো প্রাঙ্গণ জুড়ে বসে মেলা। দুর দূরান্ত থেকে বহু মানুষ এসে দোকান বসিয়েছেন পুজো প্রাঙ্গণে। গত শুক্রবার ভার্চুয়াল মাধ্যমে পুজোর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রাজ্যের মুখ্য মন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তার পর শনিবার অর্থাৎ তৃতীয়ার দিন মণ্ডপের উদ্বোধন করেন মণ্ডপ সজ্জার সঙ্গে যুক্ত কর্মচারী মিস্ত্রিরা। এই প্রসঙ্গে পুজো কমিটির সম্পাদক অসিত সিংহ জানিয়েছেন, স্বাধীনতার কয়েক বছর আগে ওপার বাংলা থেকে কিছু মানুষ চলে আসে বলাগড়ের জিরাটে। সেখানে এসেই তারা দুর্গাপুজোর সূচনা করেন। তখন থেকে এক চালার কাঠামোয় পুজো হয়ে আসছে। ধীরে ধীরে সেই পুজো বর্তমানে উৎসবের আকার ধারণ করেছে। কার্যত জিরাট অঞ্চলের প্রত্যেকটি মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে এই পুজোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। বলতে গেলে পুজোর সূচনা হয়ে যায় চার মাস আগে খুঁটি পুজোর মধ্যে দিয়ে। সেদিন সারাদিন বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূলক কর্মসূচি থাকে জিরাট আদি বারোয়ারীর। বিকেলে থাকে বাইক র্যালি। আর উৎসবের দিনগুলি বারোয়ারির মাঠ ভিড়ে উপচে পড়ে। তৃতীয়া থেকে এই উৎসব শুরু হয়েছে শেষ হবে দশমীতে।