সময় যত এগোচ্ছে, আদিগঙ্গায় বর্জ্য ফেলার পরিমাণ ততই বাড়ছে। ফলে দূষণের মাত্রাও ঊর্ধ্বগামী। দীর্ঘদিন ধরেই এর বিরুদ্ধে সরব পরিবেশ প্রেমীরা। এ নিয়ে যে তিনিও উদ্বিগ্ন, সে কথা আগে একাধিকবার বলেছেন কলকাতায় মেয়র ফিরহাদ হাকিম। ঘটনাচক্রে ‘মেয়রের পুজো’ বলে পরিচিত চেতলা অগ্রণীর শারদোৎসবে এ বারের থিম ‘গঙ্গাবক্ষে দূষণ’। বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়ে পরিবেশকর্মীরা দাবি তুলছেন, শুধু পুজোর মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করলেই হবে না। আগামী প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে গঙ্গাদূষণ রোধে পরিকল্পনা করে তার বাস্তবায়নও জরুরি।এ বার ৩৩তম বছরে পা দিয়েছে চেতলা অগ্রণী। ‘গঙ্গাবক্ষে দূষণ’ থিমের মাধ্যমে কলকাতা ও বারাণসীকে মিলিয়ে দিয়েছেন পুজোর উদ্যোক্তারা। প্যান্ডেলে ঢুকলে দর্শকরা দেখতে পাবেন বারাণসী ঘাটের গঙ্গা-আরতি। আবার, মণ্ডপেরই একপাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে আদিগঙ্গা। বিশেষ প্রযুক্তির সৌজ্যনে গঙ্গার ঢেউও দেখতে পাবেন দর্শনার্থীরা। হিমালয় থেকে কোন পথে জল প্রবাহিত হয়, তা থেকে শুরু করে মানুষের রোজকার বর্জ্য কী ভাবে জলকে দূষিত করছে, সবই তুলে ধরা হচ্ছে মণ্ডপে।
উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, যে কোনও পুজোয় গঙ্গার জল প্রয়োজন। কিন্তু, সমাজের একটা অংশের মানুষ নির্বিচারে বর্জ্য ফেলেন গঙ্গায়। সেটা যে কতখানি ক্ষতিকর, তা জানানোর জন্যই এই থিম। ফিরহাদের কথায়, ‘গঙ্গা না বাঁচলে কলকাতা-সহ অনেক কিছুই বাঁচবে না। এই পুজো দেখতে প্রচুর মানুষ আসেন। তাই মণ্ডপ দেখে কিছু মানুষ অন্তত সচেতন হবেন বলে আমার বিশ্বাস।’ পরিবেশবিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তীর কথায়, ‘গঙ্গাদূষণের অন্যতম কারণ হলো প্লাস্টিক। বিশেষত, মাইক্রো-প্লাস্টিক। যা বহু গাঙ্গেয় জীব, বিশেষ করে ডলফিন, শুশুক, কচ্ছপ, বিভিন্ন মাছের অস্তিত্ব বিপন্ন করে তুলছে।’ পুজোর থিমের বাইরেও এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে উদ্যোগী হওয়া এখন ভীষণ জরুরি বলে মনে করেন স্বাতী।
পরিবেশ রক্ষার্থে সচেতনতা প্রচারে এ বার সামিল হয়েছেন মানিকতলা লালাবাগান নবাঙ্কুরের উদ্যোক্তারাও। তাঁদের কথায়, চারপাশে যে ভাবে সবুজ কমছে, তাতে দূষণজনিত রোগ বাড়ছে কলকাতায়। এই পরিস্থিতিতে শহরবাসীর সামনে সবুজায়নকে তুলে ধরার ভাবনা থেকেই নানা ধরনের গাছ দিয়ে তৈরি হয়েছে এই প্যান্ডেল। গাছগুলির মধ্যে রয়েছে, লেবু, মাশরুম, তুলসী, বাঁশ ইত্যাদি।
প্যান্ডেল তৈরির জন্য সব মিলিয়ে ৮ হাজারের বেশি গাছ ব্যবহার করা হয়েছে। উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, শহরে যাতে আরও বেশি করে সবুজ ফিরে আসে, সে দিকে নজর রেখেই তাঁদের এই উদ্যোগ। পুজো-শেষে গাছগুলিকে কোনও সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে উদ্যোক্তাদের। কমিটির সম্পাদক তাপস রায় বলেন, ‘পুজোর ক’টা দিন এই মণ্ডপে এসে আট থেকে আশির মানুষ যাতে শান্তিতে শ্বাস নিতে পারেন, সে জন্যই গাছ দিয়ে প্যান্ডেল তৈরির সিদ্ধান্ত।’