চিল্কিগড়ের কনকদুর্গা অষ্টমীতে নিজের ভোগ নিজেই রান্না করেন মা দুর্গা
এই সময় | ০৭ অক্টোবর ২০২৪
দেবী এখানে সিংহবাহিনী এবং দশভূজা নন। দেবী এখানে রক্তমুখী, অশ্বারোহী, খড়্গধারিণী এবং চতুর্ভূজা। এই দেবীর পুজো ঘিরে আছে নানা রহস্য। পুজোর দিনগুলিতে দেবীকে ভোগ হিসেবে নিবেদন করা হয় সিদ্ধ হাঁসের ডিম, কালো পাঁঠার মাংস, মাছ পোড়া এবং পান্তা ভাত। এই সঙ্গে মানুষের বিশ্বাস, মহাষ্টমীর নিশিতে দেবী নিজের ভোগ নিজেই রান্না করেন। আর এর টানেই প্রতি বছর দুর্গাপুজোর দিনগুলিতে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয় ঝাড়গ্রাম জেলার জামবনি ব্লকের চিল্কিগড়ের কনকদুর্গা মন্দিরে।ডুলুং নদীর ধারে, ঘন জঙ্গলের মধ্যে অবস্থিত কনকদুর্গার মন্দির। এখানে দেবীকে তন্ত্রমতে এবং ষোড়শ উপাচারে পুজো করা হয়। কনকদুর্গা মন্দিরের দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে রয়েছে অনেক বিশ্বাস।
মন্দিরের পুরোহিত গৌতম ষড়ঙ্গী বলেন, ‘নিত্যপুজো হলেও দুর্গাপুজোর সময়ে বিশেষ পুজো হয়। পুজোর এই দিনগুলিতে দেবীকে দুর্গারূপে তন্ত্রমতে ষোড়শ উপচারে পুজো করা হয়। দীর্ঘদিনের যে রীতিনীতি, সেই রীতিতেই দেবীকে পুজো করা হয়।’ স্থানীয় এবং ভক্তদের বিশ্বাস, মা দুর্গা নিজেই অষ্টমীর ভোগ রান্না করেন। মন্দিরের পুরোহিত বলেন, ‘দেবী খুবই জাগ্রত। অষ্টমীর রাতে জঙ্গলে বিশেষ নিশিপুজো হয়। সেখানে মা নিজেই ভোগ রান্না করেন বলে আমাদের বিশ্বাস।’ এটাই বিরামভোগ নামে পরিচিত।
অষ্টমীর নিশিরাতে তিথি-নক্ষত্রে জঙ্গলের গভীরে রাজবাড়ির বিশেষ তরবারিতে কুচকুচে কালো পাঁঠা বলি দেওয়া হয়। পরিস্কার করে কাটা পাঁঠার মাংস মন্দিরের পিছনের রান্নাঘরে নতুন মাটির হাঁড়িতে মশলা মাখিয়ে রাখা হয়। তারপরে হাঁড়ির মুখ বন্ধ করে উনুন ধরিয়ে রান্নাঘর বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরদিন সকালে সেই ঘর খুলে দেবীকে নিজের হাতে রান্না করা বিরামভোগ নিবেদন করা হয়। দশমীতে এখানে দেবীকে পান্তা ভাত এবং মাছ পোড়া নিবেদন করা হয়। এছাড়াও সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত তিনবেলা বিশেষ ভোগ নিবেদন করা হয় দেবীকে।
চিল্কিগড়ের রাজা মত্তগজ রাজবংশের গোপীনাথ সামন্ত ৫০০ বছরের বেশি আগে প্রতিষ্ঠা করেন কনকদুর্গা মন্দির। স্বপ্নাদেশ পেয়ে রানীর হাতের সোনার কাঁকন দিয়ে তৈরি হয়েছিল দেবীর মূর্তি। সেই বিগ্রহ দু’বার চুরি যায়। বর্তমানে মন্দিরের ভিতরে রয়েছে অষ্টধাতুর বিগ্রহ।