• জমজমাট ছিনতাইয়ের দৃশ্য সাজিয়ে স্ত্রী খুনে ধৃত যুবক
    এই সময় | ০৭ অক্টোবর ২০২৪
  • মানস রায়, মালদা: কানের লতি ছিঁড়ে নেওয়া হয়েছে সোনার দুল। মোবাইল ফোনও গায়েব। আলুথালু কাপড়। মহিলার নিথর দেহ পড়ে রয়েছে তাঁরই বাবার বাড়ির পিছনে। শনিবার রাতে মালদার বৈষ্ণবনগর থানার জোলাপাড়া গ্রামে তদন্তে এসে পুলিশ ভেবেছিল, ছিনতাই করার সময়ে বাধা পেয়ে সম্ভবত রুকসানা খাতুন (১৯)কে খুন করা হয়েছে।স্ত্রীকে খুন করে নিজেকে আড়াল করার জন্য এমনই দৃশ্যপট সাজিয়েছিল বছর কুড়ির আব্দুল সালাম। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। নির্দিষ্ট প্রমাণ পেয়ে তাকেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তদন্তকারী পুলিশ অফিসারের বক্তব্য, ‘ওই সাজানো দৃশ্যই মহিলার স্বামীকে সন্দেহের তালিকায় রাখতে সাহায্য করেছিল।’

    অন্তঃসত্ত্বা রুকসানা সন্তান প্রসবের জন্য কয়েক দিন আগে বৈষ্ণবনগরের গোলাবাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে এসেছিলেন। শ্বশুরবাড়ি থেকে জোলাপাড়ার দূরত্ব আড়াই কিলোমিটার। শনিবার রাত পৌনে আটটা নাগাদ বাড়ির পিছনে দাঁড়িয়ে মোবাইলে কথা বলছিলেন তিনি। রাত দশটা নাগাদ খাওয়ার সময়ে তাঁর খোঁজ পড়ে। ঘরে না পেয়ে বাইরে খোঁজাখুঁজি করতে গিয়ে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয়।

    ডান কানের লতি ছেঁড়া, সোনার দুল, মোবাইল উধাও। অনাবৃত দেহ। গলা টিপে ধরার দাগ স্পষ্ট দেখে প্রতিবেশীদের সন্দেহ হয়, নিশ্চয় দুষ্কৃতীর খপ্পরে পড়েছিলেন মহিলা। ধর্ষণও হতে পারে। বাধা দিতে গিয়েই খুন করা হয়েছে তাঁকে।

    দেহ উদ্ধারের পরে স্থানীয় বেদরাবাদ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক জানান, ধর্ষণের কোনও ঘটনা ঘটেনি। এরপরেই পুলিশ অন্যরকম ভাবতে শুরু করে। একটা মোবাইল ও কানের দুলের জন্য খুন? নাকি দুষ্কৃতীকে চিনে ফেলার জন্য এই দুর্দশা! মালদার পুলিশ সুপার প্রদীপ কুমার যাদব বলেন, ‘চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলার পরে আরও নানা প্রশ্ন উঠে আসে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ), এসডিপিও কালিয়াচক এবং বৈষ্ণবনগর থানার আইসিকে নিয়ে তৈরি হয় বিশেষ টিম। নিহতের ঘনিষ্ঠদের রাতেই জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। নিহতের স্বামীকে জেরা করতেই অসংলগ্ন উত্তর মেলে।’

    রুকসানার পরিবার পুলিশকে জানায়, জামাইয়ের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে। সেটা নিয়ে অশান্তিও ছিল। এর পর টানা জেরায় ভেঙে পড়ে সালাম এক সময়ে খুনের কথা স্বীকার করে বলে দাবি করেছে পুলিশ। কারণ হিসেবে সে বলে, ‘শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে দেনাপাওনা নিয়ে একটা গোলমাল ছিল। অন্য এক মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে অশান্তি চলছিল। শেষ পর্যন্ত পথের কাঁটা দূর করতে খুনের পরিকল্পনা করে।’

    রুকসানা বাবার বাড়িতে চলে যাওয়ায় কাজটা আরও সহজ হয়ে যায়। অভিযুক্ত সালাম ফন্দি আঁটে, ‘শ্বশুরবাড়ির ওখানে গিয়ে খুন করলে তাকে কেউ সন্দেহ করবে না। পরিকল্পনা আরও নিখুঁত করার জন্য খুনের পরে স্ত্রীর কান ছিঁড়ে সোনার দুল নিয়ে যায়। যাতে অন্যরকম কিছু মনে হয়।’ পুলিশের সন্দেহ, রুকসানাকে ফোন করে ঘরের বাইরে এসে কথা বলতে বলেছিল সালামই। মোবাইল উদ্ধার হলেই বিষয়টি নিশ্চিত করা যাবে। ভোররাতেই গ্রেপ্তার করা হয় সালামকে।
  • Link to this news (এই সময়)