বীরভূমের খয়রাশোলে কয়লাখনিতে বিস্ফোরণে মৃতদের পরিবারপিছু একটি করে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ সেই সঙ্গে বিস্ফোরণে মৃতদের পরিবারকে মোট ৩০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণও দেবে রাজ্য সরকার। সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে এমনটাই জানিয়ে দিলেন মুখ্য সচিব মনোজ পন্থ।
সোমবার বিকালে সাংবাদিক বৈঠকে মনোজ বলেন, ‘‘বীরভূমে একটি দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। কয়লা খনিতে বিস্ফোরণ ঘটেছে। ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে এখনও পর্যন্ত। আহতদের মধ্যে তিন জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে আর্থিক সহযোগিতার জন্য মোট ৩০ লক্ষ টাকা দেবে সরকার। পরিবারপিছু আরও দুই লক্ষ টাকা দেওয়া হবে ক্ষতিপূরণ হিসাবে। এ ছাড়া, প্রতি পরিবারের এক জনকে হোম গার্ডের চাকরিও দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী।’’
সোমবার সকালেই বীরভূমের খয়রাশোল ব্লকের লোকপুর থানার অন্তর্গত ভাদুলিয়া গ্রামে দুর্ঘটনাটি ঘটে। ভাদুলিয়ার গঙ্গারামচক মাইনিং প্রাইভেট লিমিটেড কোলিয়ারিতে (জিএমপিএল) বিস্ফোরণে নিহত হন অন্তত ছয় জন শ্রমিক। মৃতেরা হলেন জয়দেব মুর্মু, সোমলাল হেমব্রম, মঙ্গল মারান্ডি, জুডু মারান্ডি, পলাশ হেমব্রম, রুবিলাল মুর্মু। মৃতদের সকলেরই বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে৷ বিস্ফোরণের অভিঘাতে তাঁদের দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। এদিক ওদিক ছিটকে পড়ে দেহাংশ। আহত হন আরও বেশ কয়েক জন শ্রমিক। ঘটনার পরেই এলাকা ছেড়ে পালান জিএমপিএল-এর আধিকারিক এবং উপরতলার কর্মীরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁরা এখনও সিউড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁদের মধ্যে তিন জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এক জনের অবিলম্বে অস্ত্রোপচারও করতে হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যসচিব।
স্থানীয় সূত্রে খবর, কয়লাখনিতে বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য একটি ট্রাকে করে বিস্ফোরক আনা হয়েছিল। অন্য দিন যে পরিমাণ বিস্ফোরক দু’টি ট্রাকে আনা হয়, সোমবার তা একটি ট্রাকে করেই নিয়ে আসা হয়েছিল। তাই ওভারলোডিংয়ের জেরেই এই বিস্ফোরণ কি না, প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনাকে ঘিরে দিনভর উত্তপ্ত ছিল ভাদুলিয়া। উত্তেজনা ছড়ায় কয়লাখনি এলাকা জুড়ে। ঘটনাস্থলে বহু মানুষ জড়ো হন। পুলিশকে দেহ নিয়ে যেতেও বাধা দেন স্থানীয়েরা।
সোমবার বিকালে বীরভূমের অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার (বোলপুর) রাণা মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ফরেন্সিক দলকে খবর দেওয়া হয়েছে। তারা এসে নমুনা সংগ্রহ করবে৷ তিনি বলেন, ‘‘খাদান কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন। আমরা দেহ উদ্ধার করেছি। তিন জনের চিকিৎসা চলছে৷ তবে পরবর্তী সময়ে কেউ যদি মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ দায়ের করেন, তখন তদন্ত করা হবে৷’’ যদিও, ঘটনায় ইতিমধ্যেই এনআইএ তদন্ত চেয়েছেন দুবরাজপুরের বিজেপি বিধায়ক অনুপ সাহা। ঘটনাস্থলে গিয়ে মানুষজনের সঙ্গে কথাও বলেছেন তিনি৷ তাঁর অভিযোগ, সঠিক পরিকাঠামো ছাড়াই ওই খনি থেকে কয়লা উত্তোলন হত৷ অনুপের কথায়, ‘‘যা ঘটেছে, তা খুবই মর্মান্তিক৷ বিস্ফোরণে এতগুলো প্রাণ গেল। প্রশাসনের মদতে এই কয়লা খনি চলে। জঙ্গল কেটে খনি করা হয়, অনুমোদন ছা়ড়াই গভীর খনন করা হয়৷ আর বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি খোলা রাস্তা দিয়ে আসছে? আজ যদি এই বিস্ফোরণ জনবহুল এলাকায় ঘটত কী হত? প্রশাসন এ ভাবে দায়িত্ব এড়াতে পারে না৷ আমরা চাই এনআইএ তদন্ত হোক। তা হলেই সত্য সামনে আসবে।’’