বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোর আনন্দে সক্কলে মেতে উঠলেও, জলপাইগুড়ির তিস্তা নদীর পাড়ে একদল কচিকাচা থেকে শুরু করে মহিলা বা পুরুষ দিন যাপনের জীবনযুদ্ধে লিপ্ত। পেট চালানোর জন্যে রান্নার গ্যাস নয় বরং কাঠের লাকড়ি দিয়েই হয় রান্নাবান্না। আবার অনেকে এসব কাঠ বাইরে বিক্রি করে কিছু অর্থ উপার্জনের পথ খুঁজে নেয়। কিন্তু, এখন সেসব কিনতে গেলেও ভালই দাম চোকাতে হয়।
তাই ভরসা জলের তোড়ে তিস্তার বুকে ভেসে আসা কাঠ! দুর্গাপূজার আগে থেকেই তাই তিস্তা পাড়ের বাসিন্দারা নদীতে নেমে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহে ব্যস্ত। এই কাঠই তাদের সারা বছরের জ্বালানির প্রধান উৎস। তিস্তার নদীর তীব্র স্রোতের মধ্যে নেমে কাঠ সংগ্রহ করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণভাবে। তবুও জীবনের প্রয়োজনেই এই কাঠ সংগ্রহ ।
বর্ষাকালে অত্যন্ত ফুলে ফেঁপে উঠে এই তিস্তা নদী। তিস্তার জল উপচে পড়ে জলমগ্ন হয় তিস্তাপাড় সংলগ্ন এলাকাগুলো। সেই সময় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় তিস্তা পারের বাসিন্দাদের। কিন্তু এই তিস্তা তাদের জীবনকে এগিয়েও নিয়ে যায়। বর্ষাকাল পেরোনোর পর সম্প্রতি নিম্নচাপের প্রভাব কাটিয়ে উঠছে তিস্তা। নদীতে জল সবেই কমতে শুরু করেছে। বর্ষায় স্রোতস্বিনী তিস্তায় জলের তোড়ে ভেসে আসে বহু কাঠ। জীবনের ঝুঁকি থাকলেও সেই কাঠ সংগ্রহ করার জন্য লুকিয়ে থাকে এলাকার বাসিন্দারা।
কার্যত জীবনের ঝুঁকি নিয়েই প্রতিটা তিস্তাপাড়ের বাসিন্দাদেরই দেখা যায় কাঠ কুড়ানোর উৎসবে মেতে উঠতে। মুখে এক গাল হাসিই স্পষ্ট জানান দেয়, তিস্তার থেকে পুরনো এই কাঠ আগামী এক বছর জ্বালান উৎস তাই খানিক স্বস্তি! তাদের প্রতিদিনকার জীবন যুদ্ধে তিস্তা নদী জুড়ে রয়েছে অঙ্গাঙ্গীভাবে। একদিকে যেমন জীবিকার উৎস, অন্যদিকে তাদের জীবনকেও হুমকির মুখে ফেলে এই তিস্তাই!