• কলকাতার পুজো মণ্ডপে ডাক বাড়তি আয়ে খুশি ছৌ শিল্পীরা
    বর্তমান | ০৮ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: মুখোশের আড়ালে তাঁদের মুখ দেখা যায় না। জানা হয় না তাঁদের মনের কথাও। আগস্ট পেরিয়ে সেপ্টেম্বরেও যখন কোনও জায়গায় অনুষ্ঠানের বরাত আসছিল না, তখন যে তাঁদের কী অবস্থা হচ্ছিল, সেই খোঁজ নেয়নি কেউই। বছরে হাজার টাকা ভাতা, আর কিছু সরকারি অনুষ্ঠানের বাইরেও এই পুজোর কয়েকটা দিনের দিকেই যে সারাবছর তাকিয়ে থাকেন পুরুলিয়ার ছৌ-শিল্পীরা। শেষ মুহূর্তে পুজোর বুকিং পেতেই শিল্পীদের মুখে হাসি ফুটেছে। 


    শিল্পীরাই জানাচ্ছেন, পুজোর সময় প্রতি বছরই কলকাতার বিভিন্ন পুজো উদ্যোক্তারা তাঁদের সঙ্গে অনুষ্ঠানের জন্য যোগাযোগ করেন। দুর্গাপুজো থেকে শুরু করে লক্ষ্মীপুজো, কালীপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজোয় অনুষ্ঠান চলতেই থাকে। কিন্তু, এবছর আর জি কর কাণ্ডের জেরে পরিস্থিতি মোটেই অনুকূলে ছিল না ছৌ-শিল্পীদের কাছে। অন্যান্য বছর যেখানে আগস্ট থেকেই পুজোর অনুষ্ঠানের বুকিং শুরু হয়ে যায়, এবছর সেরকমটা হয়নি। যদিও তারপর ধীরে ধীরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতেই পুজোর বুকিং আসতে শুরু করেছে। পুরুলিয়া জেলা তথ্য সংস্কৃতি আধিকারিক সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী বলেন, শুধু কলকাতা কিংবা অন্য জেলা নয়, কলকাতার বাইরেও বরাত পান শিল্পীরা। এবছর এখনও পর্যন্ত রাজ্য ও দেশের বাইরে মিলিয়ে শতাধিক অনুষ্ঠান করেছেন জেলা শিল্পীরা। পুজোর সময়েও অনেকে বরাত পেয়েছেন।। ছৌ-শিল্পীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, দর্শকদের মধ্যে এখনও জনপ্রিয় সেই ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। এছাড়াও রামায়ণ, মহাভারত ও বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনিরও জনপ্রিয়তা রয়েছে। পুরুলিয়ার পুঞ্চার মা শীলাবতি ছৌ অ্যাকাডেমি দলের ম্যানেজার বিকাশ মাহাত বলেন, রাজ্যের যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তাতে ভেবেছিলাম এবছর সেইভাবে কোনও অনুষ্ঠানে বরাতই পাব না। কিন্তু, ধীরে ধীরে বরাত এসেছে। সোমবার হলদিয়ায় একটি পুজোর উদ্বোধন করলাম। পুজোর বাকিদিনগুলিতেও বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান রয়েছে।


    পুরুলিয়া-২ ব্লকের ছৌ শিল্পী জলধর বাউরি বলেন, গত বছরের তুলনায় কম হলেও এবছর বরাত পেয়েছি। দলের ছেলেদের মুখে হাসি ফুটেছে। পুরুলিয়ার রক্তে ছৌনাচ। প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই শিল্পকে বয়ে নিয়ে চলেছে। পুরুলিয়ার ছৌয়ের কদর ছড়িয়ে রয়েছে দেশে বিদেশে ছড়িয়ে রয়েছে। আশির দশকের গোড়ার দিকে চড়িদা গ্রামের ছৌশিল্পী গম্ভীর সিং মুড়ার হাত ধরে প্রথম ‘পদ্মশ্রী’ আসে জেলায়। বছর দুয়েক পরে ১৯৮৩-এ বরাবাজারের আদাবনা গ্রামের ছৌশিল্পী নেপাল মাহাতো ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে ভূষিত হন। তারপর চলতি বছরে প্রয়াত ছৌশিল্পী নেপাল সূত্রধরের হাত ধরে ‘পদ্ম সম্মান’ এসেছে পুরুলিয়ায়। বর্তমান সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সহায়তায় ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন শিল্পীরা। 
  • Link to this news (বর্তমান)