নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আর জি কর ধর্ষণ-খুন মামলায় মাত্র ২৪ ঘণ্টায় লালবাজার যা করেছিল, ৫৫ দিন পর তদন্তের সেই অঙ্কেই চার্জশিট পেশ করল সিবিআই। শিয়ালদহ আদালতে প্রায় ১০০ পাতার চার্জশিটে কেন্দ্রীয় এজেন্সি জানিয়ে দিল, খুন-ধর্ষণ করেছে মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়। ৯ আগস্টের ভয়াবহ ঘটনার ঠিক পরদিনই এই সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেপ্তার করেছিল কলকাতা পুলিস। প্রাথমিক তদন্তে জানিয়েছিল, আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুন করেছে সঞ্জয়ই। তার ঠিক তিনদিনের মাথায় হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের কাছে। তারপর ৫৫ দিন অতিক্রান্ত। শতাধিক ব্যক্তিকে জেরা, মৃত্যুর পর ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগে তদন্ত, আর জি করে আর্থিক দুর্নীতি—পরতে পরতে জুড়েছে নয়া আঙ্গিক। কিন্তু ধর্ষণ-খুনের মূল মামলায় সঞ্জয়েই আটকে থেকেছে সিবিআই। মাঝখান থেকে আন্দোলনে উত্তাল হয়েছে মহানগরী। জুনিয়র ডাক্তাররা ন্যায়বিচারের দাবিতে কর্মবিরতিতে গিয়েছেন। অথচ, ধর্ষণ-খুনের তদন্তে নতুন কোনও নাম উঠে আসেনি। আর তারই প্রাথমিক সিলমোহর পড়েছে চার্জশিটে।
সোমবার শিয়ালদহ আদালতে সিবিআইয়ের জমা পড়া চার্জশিটে লালবাজারের তদন্তকে মান্যতা দিয়ে জানানো হয়েছে, অভয়ার খুন ও ধর্ষক সঞ্জয়ই। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১০৩(১), ৬৬ ও ৬৪ ধারায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। ৫৯ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে। সিবিআই চার্জশিটে জানিয়েছে, ঘটনার দিন, অর্থাৎ ৯ আগস্ট ভোরে আর জি কর হাসপাতালে সঞ্জয়ের উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ছাড়াও ডিজিটাল নথি তুলে ধরেছে তারা। বারবার জিজ্ঞাসাবাদে অপরাধের কথা ওই সিভিক অস্বীকার করলেও, সে যে খুন ও ধর্ষণে জড়িত, তার প্রমাণ মিলেছে। উদ্ধার হয়েছে সঞ্জয়ের রক্তমাখা জামাকাপড় ও জুতো। আর সেখান থেকে সংগ্রহ করা নখ, চুলের নমুনা যে অভিযুক্তেরই, তা প্রমাণ হয়েছে ফরেন্সিক পরীক্ষার রিপোর্টে। শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে তরুণীকে। এবং তাঁর গলায় হাতের ছাপ মিলেছে সঞ্জয়ের। চার্জশিটে উল্লেখ, ধর্ষণের সময় একাধিক আঘাত করাতেই মৃত্যু হয়েছে তরুণীর। সিবিআই ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৬ নম্বর ধারায় চার্জশিট দেওয়ায় এটা স্পষ্ট যে, তরুণী গণধর্ষণের শিকার হননি। কেন সে এই ঘটনা ঘটাল? ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, মদ্যপ অবস্থায় থাকার কারণেই এই নৃশংস অপরাধ ঘটিয়েছে সঞ্জয়। এই একই তথ্য প্রাথমিক তদন্তের পর কলকাতা পুলিসও জানিয়েছিল।
তবে তাদের তদন্ত যে এখনও শেষ হয়নি, সেটাও জানিয়েছে সিবিআই। সেই কারণে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দেওয়ার পথ খোলা রেখেছে এজেন্সি। তারা বলছে, ঘটনার নেপথ্যে বৃহত্তর ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। তাই অন্য কেউ এতে জড়িত কি না, সে ব্যাপারে তথ্যসংগ্রহ চলছে।