• ধর্ষণের অভিযোগে ব্যবস্থা নেয়নি ​​কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়, রিপোর্ট ডিএমের
    এই সময় | ০৮ অক্টোবর ২০২৪
  • এই সময়: যৌন নির্যাতনের ঘটনা অনুসন্ধানে যে কোনও প্রতিষ্ঠানে ‘ইন্টারনাল কমপ্লেন্টস কমিটি’ (আইসিসি)-র গুরুত্ব অপরিসীম। আইসিসি-র সুপারিশ কার্যকরী করাও আইনে নির্দিষ্ট। আইসিসি-র সুপারিশ যদি কর্তৃপক্ষ কার্যকরী না করেন তা হলে আইন অনুযায়ী তা দেখার কথা লোকাল কমপ্লেন্টস কমিটি (এলসিসি)-র। এই কমিটির চেয়ারপার্সন হন সাধারণত জেলাশাসকরা।কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে মহিলা গবেষককে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকের সাসপেনশন-সহ একাধিক সুপারিশ আইসিসি করলেও তা মানা হয়নি। বরং অভিযুক্তকে বিভাগীয় প্রধানের পদে উন্নীত করে বিশ্ববিদ্যালয় কার্যত পুরস্কৃত করেছিল বলে অভিযোগ।

    ওই ঘটনায় উচ্চশিক্ষা দপ্তরে কড়া রিপোর্ট পাঠাল এলসিসি। এরই মধ্যে বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায় নামে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির আরও একটি অভিযোগ জমা পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে। অভিযোগ, নতুন একটি কমিটি তৈরি করে ফের বাঁচানোর চেষ্টা হচ্ছে অভিযুক্তকে। আইসিসি-র আগের সুপারিশ না মেনে কেন নতুন করে কমিটি তৈরি করা হলো, সে প্রশ্ন উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে।

    কমিটির আগের রিপোর্টের ভিত্তিতে অভিযুক্তকে কেন বিভাগীয় প্রধানের পদ থেকে সরানো হচ্ছে না, সে প্রশ্নও উঠেছে। নির্যাতিতা যেহেতু তফসিলি জাতিভুক্ত, তাই জাতীয় এসসি-এসটি কমিশন রিপোর্ট চেয়েছিল জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারের কাছে। দু’টি অফিস থেকেই রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ, রাজনৈতিক চাপেই বিবেকানন্দকে বাঁচানোর চেষ্টা চলছে।

    আইসিসি-র সুপারিশ বিশ্ববিদ্যালয় না মানায় নির্যাতিতা জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ করেছিলেন। তার ভিত্তিতেই জেলার সমাজকল্যাণ আধিকারিক উচ্চশিক্ষা দপ্তরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারিকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিসি যে যে ব্যবস্থার সুপারিশ করেছিল, তার কোনওটিই মানা হয়নি। আইসিসি-র সুপারিশপত্র এবং নির্যাতিতার অভিযোগপত্র উচ্চশিক্ষা দপ্তরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারিকে পাঠানো হয়েছে। এরই মধ্যে ভিজ়্যুয়াল আর্টস বিভাগের আর এক মহিলা গবেষক উপাচার্যকে ই-মেল করে বিবেকানন্দের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন। বর্তমানে তিনি বিদেশে রয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, বিবেকানন্দ তাঁর এবং অন্য সহপাঠীদের সঙ্গেও অশ্লীল আচরণ করেতেন।

    ভিজ়্যুয়াল আর্টস বিভাগের যে মহিলা গবেষক বিবেকানন্দের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন, তিনি ওই শিক্ষকের অধীনে গবেষণা করতেন। অভিযোগ, নির্যাতিতার পারিবারিক এবং আর্থিক অসহায়তার সুযোগ নিয়ে একাধিক বার তাঁকে ধর্ষণ করা হয়। গবেষণা ছেড়ে দিলে স্কলারশিপের টাকা ফেরত দিতে হতো বলে তিনি ভয়ে মুখ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছিলেন। নির্যাতিতার অভিযোগ পাওয়ার পরে আইসিসি সুপারিশ করেছিল, বিবেকানন্দকে ছ’মাসের জন্যে সাসপেন্ড করা হোক এবং বিভাগীয় প্রধানের পদ এবং সব কমিটি থেকে সরিয়ে দেওয়া হোক। তা করা হয়নি।

    এরই মধ্যে বর্তমান উপাচার্য একটি কমিটি তৈরি করেন। সেই কমিটি বিবেকানন্দের বিষয়ে একটি রিপোর্ট দিয়েছে। তাতে অভিযোগের পাশাপাশি বিবেকানন্দের যুক্তি কী হতে পারে, তাও লেখা হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি বিবেকানন্দকে বাঁচানোর চেষ্টা শুরু হয়েছে? বিবেকানন্দ শাসকদলের কলেজ শিক্ষকদের সংগঠন ওয়েবকুপা’র রাজ্য কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।

    অভিযোগ ওঠার পরেও কেন শিক্ষকের পক্ষে দাঁড়ানো হচ্ছে, তা নিয়ে ওই সংগঠনের অন্দরেও প্রশ্ন উঠেছে। তবে এক প্রভাবশালী নেতা তাঁর পিছনে রয়েছেন বলেই সূত্রের খবর। অন্য দিকে ফৌজদারি মামলায় বিবেকানন্দের জামিন চ্যালেঞ্জ করে নতুন মামলা দায়ের হতে পারে খবর। সরকারি আইনজীবীর পাশাপাশি নির্যাতিতাও আইনজীবী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
  • Link to this news (এই সময়)