অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি! যে ইজ়রায়েল সম্ভাব্য তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বাজিয়ে দিয়েছে, যার ভয়ে থরহরি কম্প গোটা বিশ্ব, যার টেকলোনজি-র সামনে তাবড় দেশ নতজানু, সেই ইজ়রায়েল মিসাইলের খোল বানাতে দ্বারস্থ হয়েছে কলকাতার!গল্প নয়, সত্যিই।
দিল্লির একটি সূত্রের দাবি, গত ১৭ সেপ্টেম্বর কলকাতার ইছাপুরের মেটাল অ্যান্ড স্টিল ফ্যাক্টরি (এমএসএফ) ঘুরে গিয়েছেন জ়োহার ল্যাচম্যান, ইয়োরাম মুসাফি-সহ চার ইজ়রায়েলি সেনা অফিসার। সঙ্গে সে দেশের নাগরিক, ভারতীয় বংশোদ্ভূত জীতেন্দ্র পালও ছিলেন। তিনি বাঙালি কি না, তা অবশ্য জানা যায়নি।
যেটুকু জানা গিয়েছে, তা হলো — ইজ়রায়েলের একের পর এক মিসাইল হানায় কার্যত তছনছ হয়ে যাওয়া গাজা ও লেবানন বাঁচার জন্য বাঙ্কার তৈরি করছে। যদিও গত ২৭ সেপ্টেম্বর হেজবোল্লা-প্রধান হাসান নাসরাল্লা লেবাননে বাঙ্কারে থাকাকালীনই নিহত হন। তবে, সে ক্ষেত্রেও মিসাইল আক্রমণে নয়, কয়েক মাস ছক কষে ৮০ টন বিস্ফোরক ব্যবহার করে বাঙ্কারের মধ্যে নাসরাল্লাকে খতম করে আইডিএফ বা ইজ়রায়েলি ডিফেন্স ফোর্সেস।
ভারতের একটি সূত্র জানাচ্ছে, মাটি খুঁড়ে বাঙ্কার পর্যন্ত পৌঁছতে পারছে না ইজ়রায়েলি মিসাইল। তার আগেই নাকি ফেটে যাচ্ছে তার খোল। তাই মিসাইলের শক্তপোক্ত খোল বানাতে চায় ইজ়রায়েল। প্রযুক্তির জন্য যে দেশ সারা বিশ্বে সমাদৃত, সেই ইজ়রায়েলের অবশ্য এই ধরনের খোল বানানোর কারিকুরি জানা নেই। তাই খোঁজ করতে শুরু করে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সরকার। ব্রাজ়িল, ইউকে-তে এই ধরনের শক্তপোক্ত খোল বানানো হলেও জানা যায়, এই কলকাতার ইছাপুরে এমএসএফ, এ কাজে নাকি সবচেয়ে পারদর্শী। বোফর্স কামানের গোলার খোলও নাকি এখান থেকেই বানানো হয়েছে।
সূত্রের দাবি, মাস কয়েক আগে কূটনৈতিক পথেই অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরির অধীনে এমএসএফ-এর সঙ্গে যোগাযোগ হয় ইজ়রায়েলের। নিজেদের স্পেসিফিকেশন দিয়ে তারা জানায়, ঠিক কী ধরনের কতটা শক্তিশালী খোল তারা চাইছে। সূত্রের খবর, সেই স্পেসিমেন খোল বানিয়ে রাখা হয়েছিল ইছাপুরে। ১৭ সেপ্টেম্বর এসে তা-ই পরীক্ষা করে গিয়েছেন ইজ়রায়েল সেনার চার অফিসার। সেই সূত্রেই জানা গিয়েছে, এক হাজার কেজি বিস্ফোরক-বাহী মিসাইলের শেল এবং বডি নিয়ে তাঁদের সঙ্গে নাকি আলোচনাও হয়েছে এমএসএফ-এর উচ্চপদস্থদের সঙ্গে। সে দিন সকালে কারখানায় গিয়ে আলোচনা সেরে বিকেলেই বেরিয়ে যান তাঁরা।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ১৮৭২ থেকেই অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে গোলা-গুলি, কামান, বন্দুকের খোল বানিয়ে আসছে এমএসএল। আগে তারা ছিল কাশীপুর গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরির অধীনে। ১৯২০ থেকে সরাসরি অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরির অধীনে চলে আসে এটি। বিশেষজ্ঞদের কথায়, ডাই বা ছাঁচে গরম ধাতু ফেলে সেখানে থেকে খোল বানানো যায়। কিন্তু, ইতিহাস বলছে, গরম লোহা পিটিয়ে তা থেকে ফোর্জ পদ্ধতিতে (তিন ধরনের পদ্ধতিতে ফোর্জিং করা যায়) খোল তৈরি করলে এবং তা মিসাইলে ব্যবহার করলে তার নিশানা যেমন ভালো হবে তেমনই তার শক্তিও বাড়বে। তখন হয়তো মাটি খুঁড়ে বাঙ্কার পর্যন্ত পৌঁছতে সক্ষম হবে সে। আধুনিক পদ্ধতিতে সেই খোল বানাতে পারে এমএসএল।
বিশেষজ্ঞদের কথায়, টেকনোলজি তো ইজ়রায়েলের কাছেই রয়েছে। মিসাইলে ইছাপুরের খোল লাগিয়ে তার ভিতরে কন্ট্রোল কম্পোন্যান্ট বসিয়ে দূর থেকে কম্যান্ড বা নির্দেশ দিয়ে তাকে সঠিক নিশানায় পৌঁছে দেওয়াটা তো তাদের কাছে হাতের ময়লা।
ভারত চায় যুদ্ধ বন্ধ হোক। শুধু তো লেবানন বা গাজা নয়, ইরানও বিস্তর ক্ষেপেছে ইজ়রায়েলের উপরে। বিশেষ করে নাসরাল্লার মৃত্যুর পরে ইরানের সুপ্রিম লিডার আয়াতোল্লা আলি খামেনেই সরাসরি হুমকি দিয়েছেন। ১ অক্টোবর ইজ়রায়েলে শিলাবৃষ্টির মতো মিসাইল আক্রমণ করে ইরান। তার বেশিরভাগই অবশ্য নিষ্ক্রিয় করে দেয় ইজ়রায়েলের বিশ্ব-বন্দিত টেকনোলজি। কিন্তু, এই বিরোধে ফুটে উঠছে এক অবর্ণনীয় কষ্টের ছবি। ভারত তারই অবসান চায়। এই আবহেই ইজ়রায়েলি সেনার কলকাতা-সফর। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি!