সুদূর সাইবেরিয়া থেকে দলে দলে, ঝাঁক বেঁধে আসে এই পরিযায়ী পাখিরা। আর ঝাড়গ্রামে বাসা বাঁধে। কয়েক মাস পরম নিশ্চিন্তে এদেশে দিন গুজরানের পরে তারা ফিরে যায় আপন দেশে, আপনঘরে।
এখানে এসে ইদানীং তারা যে খুব তবে নিশ্চিন্তে থাকে, তা অবশ্য নয়। এই পরিযায়ী বিদেশি অতিথিদের কাছে চরম আতঙ্ক ও সংকট হল চোরাশিকার। রাত হলেই তাদের বাসায় হানা দেয় এই চোরাশিকারিদের দল।
বর্ষার শেষে ঝাঁকে ঝাঁকে এই পাখির দল উড়ে এসে বাসা বাঁধে কেন্দুয়া গ্রামের যতীন্দ্রনাথ মাহাতর তেঁতুল গাছে। কার্তিক মাসের পরে ফিরে যায় সাইবেরিয়ায়। কয়েক দশক ধরে এই ভাবেই চলছে সাইবেরিয়ার এই অতিথিদের আনাগোনা। যতীন্দ্রনাথবাবুর জীবদ্দশায় এই অতিথিদের উপর আঘাত হানার সাহস কেউ দেখায়নি। তবে তাঁর মৃত্যুর পরে ছবিটা বদলায়।
তাঁর অনুপস্থিতিতে ওই পরিযায়ীদের পাখির উপর আঘাত নামতে শুরু করে। রাতের অন্ধকারে গাছে জালের ফাঁস লাগিয়ে, বিষ মাখানো খাবার দিয়ে পাখিদের ধরে বাজারে চড়া দামে বিক্রি করছে একদল চোরাশিকারি। এমনকি পাখি মেরে তার মাংস বিক্রিও করা হচ্ছে।
জঙ্গলমহলের পর্যটনের অন্যতম দর্শনীয় স্থান চিলকিগড়, রামেশ্বর, বেলপাহাড়ি, কাঁকড়াঝোড়, হাতিবাড়ি, সীমান্তের চিত্রেশ্বর, লালজলের আদিম মানুষের গুহা। এসবের পাশাপাশি পর্যটকদের কাছে অতি প্রিয় কেন্দুয়া গ্রামের এই পরিযায়ী পাখিরাও। ফি-বছর বাংলার বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি ঝাড়খণ্ড-ওড়িশার ভ্রমণপিপাসু মানুষেরা এদের টানে কেন্দুয়া ছুটে আসেন। তাই স্থানীয়রা পাখির দলকে রক্ষার জন্য প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে নিজেরাও রাত জেগে পাখিদের পাহারা দিচ্ছেন। পরিযায়ী পাখির কলরবে সকালে গ্রামবাসীদের ঘুম ভাঙে। তাই তারা আসার পর গ্রামবাসীরা আনন্দে থাকেন। ফিরে গেলেই মনখারাপ।