• পুজোর নির্ঘণ্ট জুড়ে মিশে থাকছে মনখারাপের ছবিও
    এই সময় | ০৮ অক্টোবর ২০২৪
  • দেশের মাটি হোক বা বিদেশ — শারদোৎসবের উন্মাদনার যেন কোনও তফাত থাকে না। যেখানে সবটুকু জুড়েই থাকে বাংলার রূপ-রস-গন্ধ। পাত পেড়ে খিচুড়ি থেকে লুচি, তারতম্য থাকে না মেনুতেও।ইংল্যান্ডের এসেক্সের চেমসফোর্ড শহরই বা বাদ যায় কেন। তবে, এ বারের পুজো ঘিরে বাঙালি এমনকী ব্রিটিশদের আনন্দ, তোড়জোড়ে খানিকটা দখল নিয়েছে মন খারাপ — আরজি করের ঘটনা ঘিরে থাকা মন খারাপ। চেমসফোর্ডের পুজো কমিটির নাম ‘সংকল্প’। সেই পুজোর উদ্যোক্তা মেঘদূত বিশ্বাস লং ডিসেন্স কলে জানালেন, ‘জাস্টিস ফর আরজি কর’ প্ল্যাকার্ড থাকবে দুর্গা ঠাকুরের সামনে।

    চেমসফোর্ডেই থাকেন অপরাজিতা গঙ্গোপাধ্যায়। শুধু পেশায় চিকিৎসকই নন, আরজি করের প্রাক্তনীও। ‘আমাদের সময়ে পরিবেশটাই আলাদা ছিল। সেই কলেজের আজ এই হাল! এমন একটা নিন্দনীয় ঘটনা! শুনছি, দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় নাকি প্রাণ গেল মেয়েটার। নির্যাতিতার আর্তনাদ চেমসফোর্ডে বসেও যেন শুনতে পাচ্ছি। ভিতরটা কেঁপে কেঁপে উঠছে।’ সারা বছরই কিছু না কিছু অনুষ্ঠান করেন সংকল্পের সদস্যরা। দিন কয়েক আগেই আয়োজিত ফুড ফেস্টিভ্যালেও ‘জাস্টিস ফর আরজি কর’- প্ল্যাকার্ড জ্বলজ্বল করেছে।

    মাত্র ১২ জন প্রবাসী মিলে ২০২০-তে সংকল্পের পথ চলা শুরু। শুধু বাঙালি নন, দক্ষিণ এশিয়ার অনেক মানুষই আছেন সংগঠনের সঙ্গে। ফলে নানা ভাষা, নানা ধর্মীয় উৎসবের আয়োজন হয় সংকল্পে। সদস্য সংখ্যা বেড়ে এখন প্রায় হাজার। বাঙালি ছাড়াও ভারতীয় বহু মহিলা দুর্গাপুজোর কাজ করেন। এ বার পাঁচ বছরে পড়ল দুর্গাপুজো। সংগঠনের সদস্য দেবলীনা গুপ্তর কথায়, ‘মা আসছেন। আনন্দ তো হচ্ছেই। তবে যত দ্রুত সম্ভব আরজি করের ঘটনার বিচার চাই আমরাও।’

    কলকাতার পুজো খুব মিস করেন তাঁরা। কারও ছেলেমেয়ে তো কলকাতার পুজো দেখার সুযোগই পায়নি। তাই দুধের স্বাদ যাতে অন্তত ঘোলে মেটে — তাই নিয়মনিষ্ঠা মেনেই আয়োজন করা হয় চেমসফোর্ডের দুর্গাপুজো। আরও মজার বিশয় হলো, স্থানীয় একটি চার্চের ভিতরের হলেই আয়োজন করা হয় পুজোর। সেখানে ধর্মে-ধর্মে কোনও বিভেদ নেই। মেঘদূত ওরফে ববি ২৩ বছর ধরে চেমসফোর্ডে।

    কলকাতায় থাকাকালীন পাড়ার দুর্গাপুজোর সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন। সেখান থেকেই সব শেখা। কাজের চাপে এখন আর দুর্গাপুজোয় দেশে ফেরা হয় না। বলেন, ‘আমাদের ছেলেমেয়েরা যাতে পুজোর সঠিক ফিল-টা পায়, চুটিয়ে আনন্দ উপভোগ করতে পারে, তাই এমন আয়োজন। কলকাতার মতো পুজো করা হয়তো সম্ভব নয়। কিন্তু এই প্রজন্মকে বোঝানোর দরকার যে বাঙালির কাছে দুর্গাপুজো কতটা আবেগের। পুজোর ক’টা দিন আমরা নানারকম অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করি। অনেক ছেলেমেয়েরাই তাতে অংশ নেয়। এমনকী আমাদের ব্রিটিশ বন্ধুরাও এই সময় আমাদের সঙ্গে অনুষ্ঠানে যোগ দেন।’

    দেশের মাটি থেকেই প্রতিমা পাড়ি দেয় চেমসফোর্ডে। ভারতীয়রাই দেবীর ভোগ রান্না করেন। খিচুড়ি, লুচি, পাঁচ রকমের ভাজা, পায়েস, চাটনি, মিষ্টি ভোগ দেওয়া হয়। পোলাও, তরকারি, আলুর দমও থাকে মায়ের ভোগের মেনুতে। পুজোর কয়েকদিন আগে মহিলারা একদিন সবাই মিলে বসে আনন্দ নাড়ু তৈরি করেন, মায়ের জন্য মালা গাঁথেন।

    বিজয়া দশমীর দিন লুচি, আলুর তরকারি, হালুয়া তৈরি হয়। ওই দিন শিখ সম্প্রদায়ের মানুষজন এই সব রান্না করেন। তা ছাড়া পুজোর কয়েকটা দিন বিভিন্ন স্টল দেন মহিলারা। সেখানে কমলা ভোগ, নলেন গুড়ের রসগোল্লা, কালাকাদ, মাখা সন্দেশ, ক্ষীরকদম নিয়ে বসেন অনেকেই। তা ছাড়া থাকে হরেক রকমের খাবারের স্টলও।কোনও এক সপ্তমীর সকালে সংকল্পের পুজোর সামনে গিয়ে দাঁড়ালে তাই মনে হতেই পারে কলকাতা আছে চেমসফোর্ডে।
  • Link to this news (এই সময়)