এই সময়: আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় সোমবার চার্জশিট জমা দিয়েছে সিবিআই। সেখানে ঘটনার মূল অভিযুক্ত হিসেবে এখনও পর্যন্ত কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কেই চিহ্নিত করা হয়েছে। গত ৯ অগস্ট ওই ঘটনার পরে কলকাতা পুলিশ তদন্তের বিষয়ে যে বিবৃতি দিয়েছিল তার সঙ্গে সিবিআইয়ের চার্জশিটে তেমন কোনও পার্থক্য নেই।
কী বলা হয়েছে চার্জশিটে?
ঘটনার বিবরণে সিবিআই উল্লেখ করেছে, ৮ অগস্ট দুপুরে সঞ্জয় রায় সল্টলেকের কলকাতা পুলিশের চতুর্থ ব্যাটেলিয়ন থেকে আরও একজন সিভিক ভলান্টিয়ার সৌরভ ভট্টাচার্যকে নিয়ে বাইকে চেপে বেরোয়। আরজি কর হাসপাতালে গিয়ে সৌরভের আত্মীয় সাগর ভট্টাচার্যের চিকিৎসা সংক্রান্ত খোঁজ নেয় তারা। সেখান থেকে পৌনে দুটো নাগাদ বেরিয়ে শোভাবাজারের এলাহাবাদ ব্যাঙ্কে এএসআই অরূপ দত্তের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করতে গেলেও ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকায় তা সম্ভব হয়নি।সময় নষ্ট না করে সেই টাকায় দুজনে মদ কিনে খায়। এরপর সঞ্জয় হাসপাতালে ফিরে এলেও সৌরভ ফিরে যায় ব্যারাকে। ফের রাত পৌনে এগারোটা নাগাদ সঞ্জয়ের ফোন পেয়ে সৌরভ হাসপাতালে আসে। সেখান থেকে বেরিয়ে ফের একসঙ্গে তারা খাবার এবং মদ খায়। এরপর বাইক নিয়ে চলে যায় চেতলার যৌনপল্লিতে। সেখানে একটি বাড়িতে ঢুকে বিয়ার কেনে। সৌরভ এক যৌনকর্মীর ঘরে ঢুকলেও সঞ্জয় বাইরে বসে মদ্যপান শুরু করে।
রাত তিনটে কুড়ি নাগাদ তারা হাসপাতালে ফিরে এলেও সৌরভ ভিতরে না গিয়ে ব্যারাকে ফিরে যায়। অন্যদিকে, সঞ্জয় একতলায় ট্রমা সেন্টারে গিয়ে শুভ দে নামে এক রোগীর অপারেশনের বিষয়ে খোঁজ নিতে থাকে। কিন্তু শুভর বাড়ির কাউকে না পেয়ে ইমার্জেন্সি বিল্ডিংয়ের চতুর্থ তলে উঠে পড়ে। এরপর নেমে আসে তৃতীয় তলে চেস্ট মেডিসিন বিভাগে। ভোর চারটে তিন মিনিট নাগাদ ঢুকে পড়ে সেমিনার রুমে। সেখানে ম্যাট্রেসে শুয়ে ছিলেন তরুণী চিকিৎসক। চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে, এরপর ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ঘটায় অভিযুক্ত।
কী করে বোঝা গেল সঞ্জয়ের উপস্থিতি?
চার্জশিটে বলা হয়েছে, সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গিয়েছে, ভোর তিনটে ৩৪ মিনিট ১০ সেকেন্ড থেকে পরবর্তী ২৪ সেকেন্ড সময়ে টিশার্ট-জিনস পরা সঞ্জয় বাঁ হাতে হেলমেট নিয়ে ট্রমা সেন্টারের গেটের কাছে গিয়ে সিকিউরিটি গার্ডের সঙ্গে কথা বলছে। তার গলায় ঝোলানো ব্লুটুথ ইয়ারফোন। চারতলার ক্যামেরায় ধরা পড়েছে, চারটে তিন মিনিট নাগাদ সে সেমিনার রুমের দিকে যাচ্ছে। বেরিয়ে আসছে চারটে ৩২ মিনিটে।
তখন অবশ্য গলায় সেই ব্লুটুথ এয়ারফোন নেই। ফোনের সেই অংশ পরে পুলিশ ক্রাইম অফ সিন থেকে উদ্ধার করে। তদন্তে নামার পরে কলকাতা পুলিশ যে সিডিআর (কল ডিটেইলস রেকর্ড) সংগ্রহ করে তা থেকে প্রমাণ মেলে সঞ্জয় অকুস্থলে উপস্থিত ছিল। এমনকী, মেডিকেল পরীক্ষায় অভিযুক্তের শরীরে নখের দাগ সহ মোট পাঁচটি আঘাতের চিহ্নও মেলে। সিবিআই আদালতকে জানিয়েছে, তরুণী চিকিৎসকের চশমার একটি গ্লাস মিসিং ছিল। সম্ভবত নির্যাতিতার উপরে বল প্রয়োগের ফলে ওই ঘটনা ঘটে