• ইটাহারে ত্রাণ! কোথায় ‘বন্যা’ প্রশ্ন সাধারণ ও বিরোধীদের
    এই সময় | ০৯ অক্টোবর ২০২৪
  • এই সময়, রায়গঞ্জ: জেলা-জুড়ে বন্যার নাম-গন্ধ নেই। নদীর জল উপচে উঠেছে কোথাও - ব্যাস ওইটুকুই। অথচ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ভিডিয়ো (যার সত্যতা যাচাই করেনি এই সময়)-তে কথোপথনের সঙ্গে ইটাহারের বিধায়ক দাবি করে বসেছেন, বন্যা হয়েছে। এখানেই না-থেমে তৃণমূল বিধায়ক মোশারফ হুসেন মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছেন, ‘এই তো বন্যা ত্রাণ দিয়ে এলাম।’তাঁর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর কথোপকথনটা অনেকটা এইরকম -

    মুখ্যমন্ত্রী: তোমার ওখানে বন্যা হয়েছে তো!

    বিধায়ক: হ্যাঁ, বন্যার জল নেমে গিয়েছে। এখন শুধু ভাঙন শুরু হয়েছে দিদি ইটাহারে।

    মুখ্যমন্ত্রী: ত্রাণ কমপ্লিট হয়েছে তো?

    বিধায়ক: হ্যাঁ, ত্রাণ দেওয়া কমপ্লিট হয়ে গিয়েছে।

    মুখ্যমন্ত্রী: বন্যাত্রাণ?

    বিধায়ক: বন্যাত্রাণ দেওয়া কমপ্লিট হয়ে গিয়েছে, দিদি। আমি এখনই নদী থেকে এলাম, বন্যা এলাকা থেকে।

    কিন্তু সাধারণ মানুষ ও বিরোধী দলের নেতারা অবশ্য অন্য কথা বলছেন। তাঁদের পাল্টা দাবি, এ বছর ইটাহারে তো বন্যাই হয়নি। এমনকী, ত্রাণ বিতরণের বিষয়টিও স্রেফ ‘গল্প’ বলে তাঁদের অভিযোগ। এই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছে তরজা। বিধায়ক বন্যা নিয়ে মিথ্যাচার করছেন বলে বিরোধীরা তীব্র কটাক্ষ ছুড়েছেন। কড়া জবাব দিয়েছেন ইটাহারের তৃণমূল বিধায়কও।

    তাঁর দাবি, ‘আমি সে দিন মহানন্দা তীরবর্তী সুরুন অঞ্চলের বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে এসেই ভার্চুয়াল পুজো উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলাম। ইটাহারের নদী তীরবর্তী বহু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তার ফলে অনেকের জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। তবে নদীর জল এখন কমতে শুরু করেছে। এটাই স্বস্তির কথা।’

    উল্লেখ্য, গত রবিবার ইটাহারের হাসুয়া সর্বজনীন দুর্গোৎসবের পুজোর ভার্চুয়াল উদ্বোধন করছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সময়ে ওই পুজো মণ্ডপে উপস্থিত ছিলেন মোশারফ। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ৪২ সেকেন্ডের ভার্চুয়াল কথোপকথনের ভিডিয়ো ক্লিপিং সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয় তরজা। প্রশ্ন উঠেছে, মুখ্যমন্ত্রীকে কোন ‘বন্যা এলাকা’ পরিদর্শনের কথা বলেছেন বিধায়ক? ত্রাণই বা ঠিক কোথায় বিলি করা হয়েছে।

    সে দিন মণ্ডপে বিধায়কের পাশেই ছিলেন ইটাহারের বিডিও দিব্যেন্দু সরকারও। পরে বন্যার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘সব অঞ্চলেই ত্রিপল, জামা-কাপড় ও শুকনো খাদ্যসামগ্রী বন্যাদুর্গতদের মধ্যে বিলি করা হয়েছে।’ যদিও ঠিক কোন কোন গ্রামে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে, ত্রাণ হাতে পাওয়া দুর্গত মানুষের সংখ্যা কত, তার নির্দিষ্ট হিসেব দিতে পারেননি বিডিও। তাঁর দাবি, সেই হিসেব এখনও করা হয়নি।

    আর এই সুযোগেই বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছেন, এ বছর ইটাহারে বন্যা না হওয়া সত্ত্বেও কেন বলা হচ্ছে বন্যার কথা? খোদ মুখ্যমন্ত্রীকেও বা কেন মিথ্যে বললেন বিধায়ক?

    বিজেপির উত্তর দিনাজপুর জেলা সভাপতি বাসুদেব সরকারের কথায়, ‘আমার বাড়ি ইটাহার ব্লকে। বৃষ্টির জলে ডুবে আমার তিন বিঘা জমির ফসল কিছুটা নষ্ট হয়েছে বটে। কিন্তু বন্যা কোথায়? এ বার ইটাহারে বন্যাই হয়নি। কোথাও ত্রাণও দেওয়া হয়নি। তা হলে কেন বিধায়ক বন্যার গুজব ছড়াচ্ছেন? এর পিছনে কি অন্য কোনও রহস্য রয়েছে? নাকি ত্রাণের নামে কোনও প্যাকেজ আদায় করে সেই টাকা হাপিশ করার বা তা উপরমহলের কোথাও পাঠানোর গোপন পরিকল্পনা রয়েছে?’

    জেলা যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক মহিদুর ইসলামের দাবি, ‘আমার তো ইটাহারে নদীর কাছেই বাড়ি। কোথায় বন্যা? বন্যা বলতে আমরা যা বুঝি, তা এ বার ইটাহারে হয়নি। নদীর ধারের নিচু এলাকার কিছু জমি জলে ডুবে ফসল নষ্ট হয়েছে। কিন্তু কারও ঘরবাড়ি ডোবেনি। নির্লজ্জ ভাবে বন্যা ও ত্রাণ বিতরণের মিথ্যা কাহিনী ছড়িয়ে মানুষকে বোকা বানানো হচ্ছে।’

    বিরোধীদের এই সব কটাক্ষের জবাবে মোশারফ বলেন, ‘বন্যা মানে তো শুধু মানুষের ঘরবাড়ি ডুবে যাওয়া নয়। বন্যার সংজ্ঞা জানতে হলে বিরোধীদের একটু পড়াশোনা করতে হবে। জমির ফসল ও নিচু এলাকার কিছু বাড়িও জলমগ্ন হয়েছিল। কিন্তু বিরোধীরা এ সব দেখতে পাবে না। কারণ তাঁরা শুধু সোশ্যাল মিডিয়াতেই চোখ রেখে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়ায়। মানুষের সঙ্গে তাঁদের কোনও যোগাযোগ নেই। আমি দুর্যোগে-দুর্বিপাকে সবসময় মানুষের পাশে থেকে কাজ করি। বিরোধীরা চাইলে বন্যার ও ত্রাণ বিলির ছবি তাঁদের পাঠিয়ে দিতে পারি।’
  • Link to this news (এই সময়)