নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: তৈরি ত্রিকুট পাহাড়। বৈষ্ণোদেবী মন্দির দর্শনের জন্য নীচে অপেক্ষায় ছিলেন ভক্তরা। আচমকাই প্রশাসনের পক্ষ থেকে সতর্কতা দিয়ে জানানো হল ‘মন্দিরে ওঠা বিপজ্জনক। যে কোনও সময় ধস নামতে পারে’। তারপরই মন খারাপ দর্শনার্থীদের। এই নোটিস জম্মু প্রশাসন লাগু করেনি। বর্ধমানের সর্বমিলন সঙ্ঘ বৈষ্ণোদেবী মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করেছে। সুউচ্চ পাহাড় রয়েছে। বয়ে যাচ্ছে জলরাশি। ঠিক যেমন ত্রিকূট পাহাড়ে রয়েছে। দর্শনার্থীদের সুরক্ষার কথা ভেবে প্রশাসনের আধিকারিকরা বেঁকে বসেন। তাঁরা জানিয়ে দেন, উঁচু এই মণ্ডপে উঠলে যে কোনও সময় বিপদ হতে পারে। চতুর্থীর সন্ধ্যা থেকেই মণ্ডপে জনতার ঢল আছড়ে পড়েছে। অষ্টমী বা নবমীর দিন এই ভিড় কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। সেইসময় একসঙ্গে বেশি সংখ্যক দর্শনার্থী উঁচু মণ্ডপে উঠলে তা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাতে প্রাণহানি হতে পারে। তাই মণ্ডপের উপর ওঠা যাবে না বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সমস্যা সমাধানের জন্য মঙ্গলবার আধিকারিকরা ক্লাবের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকও করেন। কিন্তু তাতেও প্রশাসন সিদ্ধান্ত থেকে নড়েনি। আইজি ট্রাফিক সুকেশ জৈন বলেন, নিরাপত্তার জন্য কিছু ব্যবস্থা নিতেই হয়।
এক পুলিস আধিকারিক বলেন, উঁচুতে না উঠে মণ্ডপ দেখা যাবে। বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস বলেন, উদ্বোধনের দিন থেকেই ওদের মণ্ডপে দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছে। আগামী দিনগুলিতে আরও ভিড় হবে। মটি ভিজে রয়েছে। একসঙ্গে অনেক দর্শক উঠলে বিপদ হতে পারে।
যদিও পুজো কমিটির দাবি, মণ্ডপ তৈরির সময় সুরক্ষার দিকটি দেখা হয়েছিল। প্রশাসন যেভাবে বলেছিল সেভাবেই মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। তিনদিন আগেও আমাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। সেগুলিও মেনে চলা হয়েছে। পুজো কমিটির পক্ষে বিশ্বজিৎ মণ্ডল বলেন, মানুষ আমাদের মণ্ডপ দেখার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। আচমকা তা বন্ধ করে দেওয়া হল। আধিকারিকরা বারবার মণ্ডপ ঘুরে দেখেছেন।
পূর্ব বর্ধমানের পুলিস সুপার সায়ক দাস বলেন, পুজো কমিটিগুলিকে বেশকিছু গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে। দর্শকদের কথা ভেবে তা সবাইকে মেনে চলতে হবে। পুলিস সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, সর্বমিলন সঙ্ঘে প্রায় ২০ফুট উচ্চতার মণ্ডপ তৈরি হয়েছে। উপরে ওঠার পথ ততটা প্রশস্ত নয়। উপরে উঠে কোনওরকম হুড়োহুড়ি হলে অঘটনের আশঙ্কা রয়েছে।
দর্শনার্থীরা অবশ্য বলছেন, বৈষ্ণোদেবী মন্দির এমনই। হিমালয়ের কোলে কখন ধস নামবে কেউ জানেন না। টাকা খরচ করে জম্মুতে গিয়েও অনেকেই মন্দির দর্শন না করেই ফিরে আসতে হয়েছে। তাই বর্ধমানের পুজো মণ্ডপে উপরে ওঠার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি হলেও হতাশ নন দর্শনার্থীরা। তাঁরা আবার অপেক্ষায় থাকবেন। আগামী বছরগুলিতে নিশ্চয়ই পাহাড়ে ওঠার সুযোগ আসবে। এই অপেক্ষায় তাঁরা দিন গোনা শুরু করেছেন।