ঝাড়গ্রামে পুজোর থিমে মানুষ ও বন্যপ্রাণীর সহাবস্থানের বার্তা
বর্তমান | ০৯ অক্টোবর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্রাম: ঝাড়গ্ৰামে জ্বলন্ত শলাকা বিঁধে হাতিমৃত্যুর ঘটনা এখনও মানুষের মনে তাজা। বিভিন্ন জায়গা থেকে বারবার বন্যপ্রাণীদের বিপন্ন হওয়ার খবর সামনে আসছে। যা নিয়ে পরিবেশপ্রেমীদের উদ্বেগ বাড়ছে। সেজন্য জেলার একাধিক পুজোর থিমে অরণ্য ও বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের ভাবনা উঠে আসছে। এবার ঝাড়গ্ৰামের আঁধারিশোলে ৫ নম্বর অঞ্চল সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির থিম ‘বিপন্ন অরণ্যের বন্যপ্রাণী’। ঝাড়গ্রামে হাতিমৃত্যুর ঘটনায় বিচারের দাবির পাশাপাশি বন্যপ্রাণী ও মানুষের সহাবস্থানের বার্তা এখানে তুলে ধরা হয়েছে।
ঝাড়গ্ৰামের নেদাবহড়া পঞ্চায়েত এলাকার আঁধারিশোল গ্ৰামে আগে কোন দুর্গাপুজা হতো না। গ্ৰামবাসীদের পুজো দেখতে অনেক দূরে যেতে হতো। বিষয়টি নিয়ে গ্ৰামের মানুষের আক্ষেপ ছিল। বাবা অমৃতেশ্বর সেবাশ্রম সংঘের উদ্যোগে ২০১৯ সালে এই গ্রামে পুজোর সূচনা হয়। এবছর পুজোর ষষ্ঠ বর্ষ।
আগস্ট মাসে ঝাড়গ্ৰাম শহরে জ্বলন্ত শলাকা বিদ্ধ হয়ে একটি হাতির মৃত্যু হয়। সে ঘটনায় সারা দেশের পাশাপাশি এই গ্ৰামের মানুষও বিচলিত হয়েছিলেন। পুজোর থিমে সেই হাতিটির মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। জঙ্গলমহলের চাটান পাহাড়ের আদলে তৈরি করা হয়েছে। পাহাড়ের গুহার ভিতরে দেবী প্রতিমা-এমনই দৃশ্য দেখা যাবে এখানে। মণ্ডপের সামনে একাধিক হাতির মডেল রাখা হয়েছে। একটি হাতির পিঠ থেকে রক্ত বের হওয়া দেখানো হয়েছে।
পুজো কমিটির সম্পাদক রাজেশ মাহাত বলেন, জঙ্গলের বন্যপ্রাণীদের সঙ্গে এই এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের সহাবস্থান। ঝারগ্ৰাম শহরে আগস্টে জ্বলন্ত শলাকা বিদ্ধ হয়ে হাতির মর্মান্তিক মৃত্যু আমাদের নাড়িয়ে দিয়েছে। গত কয়েকবছরে এখানে একাধিক হাতিমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এই বিষয়টি মাথায় রেখে আমাদের থিম ‘বিপন্ন অরণ্যের বন্যপ্রাণী’। পুজোর ট্যাগলাইন, ‘মা হাতির বিচার চাই। বাঁচবে ওরা, বাঁচব মোরা।’
পুজা কমিটির সভাপতি তুষার মাহাত বলেন, মণ্ডপের কাজ শেষ পর্যায়ে। ষষ্ঠীতে পুজোর উদ্বোধন করা হবে। সাংসদ দোলা সেন পুজোর উদ্বোধন করবেন। বাবা অমৃতাশ্রম সঙ্ঘের পরিচালনায় এই পুজো করা হচ্ছে। সঙ্ঘ সারাবছর ধরে সমাজকল্যাণের কাজে যুক্ত থাকে।
গ্ৰামের সমস্ত মানুষ পুজোর উদ্বোধনে উপস্থিত থাকবেন। আমরা মৃত হাতিকে স্মরণ করব। পুজোর অপর এক কর্মকর্তা রবীন্দ্র মাহাত বলেন, জঙ্গলমহলে জঙ্গল কমে আসছে। জঙ্গলে পর্যাপ্ত খাবার নেই। হাতির স্বাভাবিক চলাচলের পথ অবরুদ্ধ হচ্ছে। ফলে হাতির পাল খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। হাতির হানায় প্রাণহানি হচ্ছে। হাতির নিজস্ব বিচরণভূমি হারিয়ে যাওয়ায় এসব ঘটনা ঘটছে। তাই পুজোয় অরণ্য সংরক্ষণ ও বন্যপ্রাণীদের সঙ্গে সহাবস্থানের বার্তা দেওয়া হয়েছে।