ইউএসজি রিপোর্টে ভুল, বরাত জোরে প্রাণে বাঁচলেন মহিলা
বর্তমান | ০৯ অক্টোবর ২০২৪
সংবাদদাতা, রামপুরহাট: ইউএসজি রিপোর্টে ভুলের জেরে মরতে বসেছিলেন রামপুরহাটের এক মহিলা। দু’টি প্যাথলজিক্যাল সেন্টারে ইউএসজি করিয়ে পেয়েছিলেন দু’ রকম রিপোর্ট। সর্বশেষ রিপোর্ট দেখে চিকিৎসক অ্যাপেনডিক্স অপারেশন না করেই ফিরিয়ে দিয়েছিলেন মহিলাকে। ফলে আর একটু হলেই অ্যাপেনডিক্স বার্স্ট করে মৃত্যু হতে পারত তাঁর। ওই মহিলার পরিবারের তরফে
মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ও মহকুমা শাসকের কাছে পৃথক অভিযোগ করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন স্বাস্থ্যজেলার কর্তারা।
পাইকর থানার বোনহা গ্রামের বাসিন্দা লুৎফুলনেশা বিবি বেশ কিছুদিন ধরে পেটের যন্ত্রণায় ভুগছিলেন। গত জুলাই মাসের শেষের দিকে তিনি রামপুরহাটে এক মেডিসিনের চিকিৎসককে দেখালে তিনি ইউএসজি করার পরামর্শ দেন। সেই মতো রামপুরহাটের একটি স্ক্যান সেন্টারে ইউএসজি করান। তাতে অ্যাপেনডিক্স ধরা পড়ে। সাইজ ৬.৬ এমএম। এরপর সার্জারির চিকিৎসক তাঁকে অপারেশন করার পরামর্শ দেন। সেইমতো তিনি রামপুরহাটের একটি নার্সিংহোমে যান। সেখানে সর্বশেষ ইউএসজির রিপোর্ট চাওয়া হয়। গত ১৯ সেপ্টেম্বর তিনি অন্য একটি স্ক্যান সেন্টারে ইউএসজি করেন। কিন্তু তাতে অ্যাপেনডিক্সের সাইজ পাওয়া যায় ২.৪ এমএম। চিকিৎসক দেখে বলেন, কারেন্ট রিপোর্ট অনুযায়ী অপারেশন করানোর দরকার নেই। তাকে ওষুধপত্র দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর কিছুদিন ভালোই ছিলেন তিনি। গত ৩০ সেপ্টেম্বর ফের পেটের অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকেন মহিলা। পরিবারের সদস্যরা তাঁকে ফের রামপুরহাটের এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে আসেন। তিনিও ইউএসজি করতে বলেন। সেইমতো ওইদিন আগের স্ক্যান সেন্টারে গিয়ে ইউএসজি করে দেখেন অ্যাপেনডিক্সের সাইজ বেড়ে ৬.৭ এমএম হয়ে গিয়েছে। চিকিৎসককে দেখালে তখনই অপারেশন করানোর জন্য পরিবারের লোকদের বলেন। নতুবা অ্যাপেনডিক্স বার্স্ট হয়ে মৃত্যু হতে পারে। অবশেষে ওই চিকিৎসকের তৎপরতায় নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয় মহিলাকে। অপারেশনের পরে তিনি সুস্থ রয়েছেন।
পরের দিন দু’টি স্ক্যান সেন্টারের তিনটি রিপোর্টের কপি দিয়ে রামপুরহাট স্বাস্থ্যজেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ও মহকুমা শাসককে অভিযোগ করেন ওই মহিলা। তিনি বলেন, এভাবে ভুল রিপোর্ট দিতে থাকলে রোগীরা অসুবিধেয় পড়বে। মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
মহকুমা শাসক সৌরভ পান্ডে বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরই সিএমওএইচকে ফরোয়ার্ড করা হয়েছে। অন্যদিকে সিএমওএইচ শোভন দে বলেন, দু’টি রিপোর্টের বিরাট কিছু পার্থক্য নেই। তবুও ডিএমসিএইচওকে তদন্ত করে দেখার জন্য বলা হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই রামপুরহাট মহকুমাজুড়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে বহু ল্যাবরেটরি, স্ক্যান সেন্টার ও নার্সিংহোম। অভিযোগ, অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যদপ্তরের বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই চলছে সেইসব প্রতিষ্ঠানগুলি। আবার কিছুক্ষেত্রে লাইসেন্স থাকলেও স্বাস্থ্যদপ্তরের নির্দেশ মেনে সর্বক্ষণের চিকিৎসক, অভিজ্ঞ টেকনিসিয়ান, অপারেশন থিয়েটার বা অন্যান্য পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়নি। অধিকাংশ স্ক্যান সেন্টার ও ল্যাবের রিপোর্ট নিয়েও যথেষ্ট সন্দিহান চিকিৎসকরা। আর এদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন রোগীর আত্মীয়রা।
মহিলার অপারেশন করেছেন রামপুরহাট মেডিক্যালের সার্জেন সৌরভ মাজি। তিনি বলেন, ডিগ্রি নেই, এমন লোকদের দিয়ে স্ক্যান সেন্টার চালালে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। এই কারণেই বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসকদের নিগৃহীত হতে হচ্ছে।