সংবাদদাতা, জঙ্গিপুর: গঙ্গার আগ্রাসন আর কিছুতেই থামছে না। মঙ্গলবার সকালে ফের ভয়াবহ ভাঙনে তলিয়ে গেলো সামশেরগঞ্জের লোহারপুরের অন্তত ন’টি বাড়ি। আনন্দ রবিদাস, গঙ্গা রবিদাস ও জয়ন্তী রবিদাসদের মাঝে পঞ্চমীর সকালেই নেমে এল বিসর্জনের সুর। চোখের সামনেই তলিয়ে গেল মাথা গোঁজার আশ্রয়। ঘরের আসবাবপত্র থেকে জিনিসপত্র সবই তলিয়ে গিয়েছে। মা দুর্গার আগমনেও মুখে হাসি নেই লোহারপুরবাসীর। নিরানন্দেই কাটছে এবারের পুজো। আরও অন্তত ৩০টিরও বেশি বাড়ি পাড়ের কিনারে ঝুলছে। সেগুলিতে ফাটল ও ধরেছে। যে কোনও মুহূর্তে তলিয়ে যাবে গঙ্গার গর্ভে। আতঙ্কে এলাকাবাসী।
সামশেরগঞ্জের বিধায়ক আমিরুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রায় দেড় হাজার মানুষকে শুকনো খাবার সহ ত্রাণ সামগ্রী তুলে দিয়েছি। এইসময় বিরোধী কিছু নেতা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতেই এলাকায় আসেন। তারপর ছবি তুলে ও বড় বড় কথা বলে চলে যান। তাঁরা মানুষের ভালোর জন্য আসেন না। আমরা অসহায় মানুষের পাশে রয়েছি ও আগামীদিনে থাকবে।
জানা গিয়েছে, পঞ্চমীর দিন সকাল পৌনে ন’টা নাগাদ আচমকাই নদী তীরবর্তী এলাকায় কয়েকটি বাড়িতে ফাটল দেখা দেয়। কিছুক্ষণ পরই প্রায় পাঁচটি কাঁচা ও পাকা বাড়ি নদীতে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। পাঁচটি বাড়ি তলিয়ে যেতে না যেতেই ফের পার্শ্ববর্তী আরও প্রায় চারটি বাড়ি আচমকাই সবকিছু নিয়ে বসে যায়। ধীরেধীরে সেটিও নদীগর্ভে তলিয়ে যায়। প্রায় ২০ মিনিটের মধ্যেই বসত ভিটে নদীর রূপ নেয়। কয়েক মিনিট আগেও যেখানে একটি পাড়া ছিল, সেখানে নদীর প্রবল স্রোত। এইভাবে লোহারপুর গ্রামের মানচিত্রটাই মুঝে যেতে বসেছে। কিছু মানুষ আতঙ্কে আগেই ঘরের জিনিসপত্র সরিয়ে নিয়েছেন। ঘরের ইট, দরজা জানালা ও ভেঙে নিয়েছে। তবে গ্রামের অধিকাংশই ঘরবাড়িই গঙ্গার পেটে চলে গিয়েছে। তাঁরা আসবাবপত্র সরানোর অবকাশ টুকু পাননি। পার্শ্ববর্তী উত্তর চাচণ্ডের আরও প্রায় ৩০টিরও বেশি বাড়ি নদীর পাড়ে ঝুলছে। বাড়িগুলোতে ইতিমধ্যেই ফাটল ধরেছে।
আনন্দ, গঙ্গা ও জয়ন্তী রবিদাসরা বলেন, ঘরের কোনও কিছুই সরাবার সময় পাইনি। সবই চলে গিয়েছে। আর সরিয়ে কোথায় নিয়ে যাব? আমাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। ভেবেছিলাম মা এবার আমাদের রক্ষা করবেন। এই অবস্থায় কোথায় যাব, কেউ থাকতে দিলে তাঁদের ঘরের বারান্দায় আপাতত আশ্রয় নেব। নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে উত্তর চাচন্ডের বাসিন্দা আব্দুল গনি বলেন, লোহারপুর একরকম প্রায় শেষ। চাচন্ডে কিছু বাড়ি ঝুলছে। এমন অবস্থায় আমরা কোথায় যাব। সরকার কোনও স্থায়ী সমাধান না করলে আমরা রেললাইন ও জাতীয় সড়কে বসে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করব।