১০০ দিনের কাজ বন্ধ, উৎসবের দিনেও ম্লান মুখ গ্রামের গরিবদের
বর্তমান | ০৯ অক্টোবর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: উৎসব ফিরেছে ঠিকই। কিন্তু সেই উৎসবে মেতে ওঠার মতো মনে উৎসাহ নেই ওদের। একসময় সকাল হলেই ঝোড়া-কোদাল নিয়ে ‘কাজে’ যেতেন তাঁরা। কিন্তু আজ সেই ‘কাজ’-টাই নেই। তাই আজ উৎসবের মাঝেও সেই আঁধারেই গ্রাম বাংলার ১০০ দিনের শ্রমিকরা। অর্থকষ্টে কেউ আজ পরিযায়ী শ্রমিক, তো কেউ এখনও বেকার।
মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ মিশন প্রকল্পের আওতায় ১০০ দিন কাজ পেতেন গ্রাম বাংলার শ্রমিকরা। কিন্তু আজ দু’ বছর হতে চলল কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্পের টাকা দিচ্ছে না। গ্রামীণ অর্থনীতিতে তার প্রভাব পড়েছে। পুজোর মুখেও তাই মনমরা গ্রামবাসীরা। জেলার উত্তর থেকে দক্ষিণ, মোট পঞ্চায়েত রয়েছে ১৮৫টি। নদীয়ায় সব মিলিয়ে প্রায় নয় লক্ষের কাছাকাছি পরিবার এই ১০০ দিনের কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। শুধু তাই নয়, এর মধ্যে বহু মানুষের এটাই ছিল একমাত্র আয়ের উৎস। কিন্তু কেন্দ্র আজ দু’ বছর ধরে টাকা দিচ্ছে না। চরম অর্থ কষ্টের মাঝে বঙ্গের শ্রমিকরা। পুজোর মুখে সেই সমস্ত শ্রমিকদের খোঁজ করায় দেখা গিয়েছে, উৎসবে ফেরার উৎসাহ নেই তাদের। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে দুষছেন তাঁদের এই বেহাল অবস্থার কারণে। নিদারুণ অর্থ কষ্টে এখন তাদের অনেকের সংসারেই নুন আনতে পান্তা ফুরায়। যেমন রানাঘাট ১ ব্লকের পায়রাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের পারনিয়ামতপুর গ্রামের বাসিন্দা বিজয় ঘোষ। প্রায় ষাটের কাছাকাছি তাঁর বয়স। ১০০ দিনের কাজ বন্ধ হতেই ‘বেকার’ তিনি। পাড়ায় পাড়ায় সকলে পুজোয় মেতে উঠলেও, তাঁর পরিবারে অন্ধকার। তিনি বলেন, ছেলেমেয়েদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। আমি যা রোজগার করতাম তাই দিয়েই আমাদের চলে যেত। কেন্দ্রীয় সরকার তো টাকাই দেওয়া বন্ধ করে দিল। কিছু সব্জি ফলাই। কোনওমতে দু’ বেলার অন্ন জুটছে তাতে। একই সুর তারাপুর এলাকার বিপিন দাসের। তিনি বলেন, নতুন জামা কেনার পয়সা কোথায় পাব। কাজ নেই। বাধ্য হয়ে টোটো চালাচ্ছি। তাও অন্যের গাড়ি। ১০০ দিনের কাজ থাকলে দুটো পয়সা পেতাম। কেন্দ্রীয় সরকার বেহাল অবস্থা করে ছাড়ল আমাদের।
সময় যত এগিয়েছে নিজের পরিধি ততই বাড়িয়েছে শারদীয়া। এখন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে উৎসব হয়ে ওঠে দেবী দুর্গার আগমন। এমনকী সম্প্রতি সেই স্বীকৃতিও এসেছে ইউনেস্কো থেকে। কিন্তু গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা করে এবং গ্রামের মানুষের হাতে কাজ পাইয়ে দেয় এমন প্রকল্পে দু’ বছর টাকা নেই। তাই উৎসবে ফেরা এখন সেই সমস্ত মানুষগুলোর কাছে আড়ম্বর ছাড়া আর কীই বা হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের রানাঘাট সংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, বিজেপি সরকার জনস্বার্থ বিরোধী। তাই প্রকল্পের টাকা আটকে রেখেছে। বাংলা বছরের পর বছর বঞ্চিত হচ্ছে। আমাদের সরকার কর্মশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে পঞ্চাশ দিনের কাজের ব্যবস্থা করছে। দ্রুত তা চালু হবে।