• রাজ্যের অনুদানে বন্ধ চা বাগানে এল দুর্গা, উৎসবে মাতল রায়পুর
    বর্তমান | ০৯ অক্টোবর ২০২৪
  • ব্রতীন দাস, জলপাইগুড়ি: রা‌জ্যের অনুদানে বন্ধ চা বাগানে এল মা দুর্গা। উৎসবে মেতে উঠল জলপাইগুড়ির পাতকাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের রায়পুর। 


    বারবার মালিক বদলেছে। বন্ধ হয়েছে বাগান। সঙ্কটের কালো মেঘ ঘনিয়েছে রায়পুর চা বাগানের শ্রমিক মহল্লায়। কিন্তু কাজ হারানো শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়েছে রাজ্য। রাজ্যের দেওয়া বিনামূল্যের রেশন মিলছে। প্রতিমাসে দেড় হাজার টাকা করে ফাউলাই দেওয়া হচ্ছে শ্রমিকদের। বাগান বন্ধ থাকলেও পানীয় জল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা, স্কুলে ছেলেমেয়ের পড়াশোনা সবেরই ব্যবস্থা করেছে রাজ্য। এবার বন্ধ বাগানেও যাতে ছড়িয়ে পড়ে পুজোর গন্ধ, সেকারণে দেওয়া হয়েছে অনুদান। 


    রাজ্য সরকারের দেওয়া ৮৫ হাজার টাকায় পুজো করছেন রায়পুর চা বাগানের শ্রমিকরা। পঞ্চমীতে প্রতিমা এসেছে। মণ্ডপের সামনে বসেছে তেলেভাজা, বেলুন, ক্যাপ-বন্দুকের দোকান। ঢাকে কাঠি পড়তেই উৎসবের আনন্দে মেতে উঠেছে কচিকাঁচারা। কিন্তু পুজো মিটলেই যে মিলিয়ে যাবে এই খুশি! তাই মা দুর্গার সামনে দাঁড়িয়ে বাগানের একসময়ের সাবস্টাফ মোংলা রজক, শ্রমিক মিনতি ওরাওঁ, বানু ওরাওঁয়ের একটাই প্রার্থনা—  মা, বাগান খুলে দাও তুমি। আবার কর্মচঞ্চল হয়ে উঠুক রায়পুর। 


    ২০ বছরের বেশি সময় ধরে টানাপোড়েন চলছে রায়পুর বাগানে। কখনও মালিক বাগান ছেড়ে চলে গিয়েছেন। ফলে বন্ধ হয়েছে ফ্যাক্টরি। তারপর নতুন মালিক এসেছেন। কিছুদিন বাগান চালিয়েছেন। আবারও একই পরিণতি। বাগানের সাবস্টাফ রজনী ঘোষ বলেন, ২০০৩ সালের ১৭ অক্টোবর বাগান প্রথম বন্ধ হয়। এরপর মালিক বদলে বাগান চালু হয় ২০০৯ সালে। তিন বছর চলার পর ফের মালিক বদলায়। ২০১৮ সাল থেকে বাগান পুরোপুরি বন্ধ। 


    শ্রমিক কাংলু ওরাওঁ বলেন, একসময় রায়পুর চা বাগানে ছ’শোর বেশি শ্রমিক ছিলেন। সকালে ভোঁ বাজতেই সবাই যোগ দিতেন কাজে। গোটা মহল্লা কর্মচঞ্চল হয়ে উঠত। এখন বেশিরভাগ শ্রমিক বাইরে কাজে গিয়েছেন। কেউবা পেট চালাতে ডুয়ার্সের নদীতে পাথর ভাঙছেন। বর্তমানে কিছু শ্রমিক পাতা তুলে দেন। গাড়ি বোঝাই করে নিয়ে যান শিলিগুড়ির এক মালিক। পরিবর্তে তিনি শ্রমিকদের ১৬০ টাকা দৈনিক মজুরি দেন। প্রাপ্তি বলতে এটুকুই। মোংলা রজকের কথায়, ফ্যাক্টরি বন্ধ। বাংলো ছেড়ে চলে গিয়েছেন ম্যানেজার। দিনে ১৬০ টাকায় কী হয়! নিজেরা খাব, না ছেলেমেয়েদের মুখে তুলে দেব? 


    বাগান বন্ধ থাকায় প্রভিডেন্ট ভান্ড, বোনাস বন্ধ। ফলে মন খারাপ নিয়েই দিন কাটে শ্রমিকদের। কিন্তু পুজোর ক’টা দিন সব ভুলে তাঁরা ছেলেমেয়েদের মুখে হাসি দেখতে চান। শ্রমিক বানু ওরাওঁ বললেন, রাজ্য সরকারের অনুদান আর আমাদের মজুরি থেকে অল্প কিছু টাকা দিয়ে পুজো করছি। প্যান্ডেল, ঠাকুর, ঢাকের বাদ্যি শুনে ছেলেমেয়েরা আনন্দে মেতে উঠেছে। মায়ের কাছে একটাই প্রার্থনা, শিশুদের মুখের হাসি তুমি কেড়ে নিও না।
  • Link to this news (বর্তমান)