নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ অক্টোবর। ইতিমধ্যে পেরিয়ে গিয়েছে ২৩ দিন। তবে ডিভিসি জল ছাড়ায় বন্যা পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ রূপ নেয় যে এখনও বহু জায়গায় লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে দুর্গত মানুষকে। তাঁদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন নেতা-মন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রশাসনের একটি বড় অংশ। এরই মধ্যে মঙ্গলবার মুর্শিদাবাদের সামসেরগঞ্জে বাঁধ ভেঙে জনবসতিতে জল ঢোকার খবর পাওয়া গিয়েছে। এই ঘটনা পরিস্থিতিকে আরও ঘোরালো করে তুলছে। মনে করছেন প্রশাসনিক কর্তারা। রাজ্য প্রশাসনের মতে, দক্ষিণবঙ্গের আট জেলায় একসঙ্গে ১২৫টি জায়গা ভাঙনের কবলে পড়েছে। এবার ভাঙনের দৈর্ঘ্য ১০ হাজার মিটারের বেশি। দু’দশকের ভিতরে বাংলার প্রান্তিক মানুষের জীবনে এ এক বিরল বিপর্যয়।
এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া বলেন, এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওইসব জায়গায় ছুটে গিয়েছিলেন। যেখানে যেমন প্রয়োজন সেখানেই মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে রাজ্য প্রশাসন। ইতিমধ্যে ৪৯টি জায়গায় বিপন্ন বাঁধ মেরামতের কাজ পুরোদমে শুরু করা হয়েছে। এগুলির মধ্যে সম্পূর্ণও হয়েছে দুই স্থানের কাজ।
প্রসঙ্গত, উৎসবের মরশুমেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের ত্রাণের কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এজন্য ওই মন্ত্রীরা এবছর দুর্গাপুজোর উদ্বোধনে সময় দিতে পারেননি। হাতে গোনা দু-একটি পুজোর উদ্বোধন তাঁরা করেছেন। কারণ, তাঁদের অধিকাংশ সময়ই কাটছে দুর্গত এলাকায় পৌঁছে ত্রাণ বিলি এবং পুনর্গঠনের কাজ তদারকিতে।
রাজ্য সরকার সূত্রের খবর, ডিভিসি পাঁচ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়ায় সর্বাধিক ভাঙনের ঘটনা ঘটেছে হুগলি জেলায়। এখানে খানাকুল ১ ও ২, পুরশুড়া ও আরামবাগে মোট ৪২টি জায়গায় ভাঙন হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পরিস্থিতিও যথেষ্ট ভয়াবহ। কারণ, সেখানে দাসপুর ১, চন্দ্রকোনা ১, ডেবরা, কেশপুর, ঘাটাল মিলিয়ে মোট ৩৪টি জায়গায় ভাঙনের ঘটনা ঘটেছে। হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর, আমতা ২ এবং বাগনান ১ ব্লকে ভাঙন হয়েছে মোট ৩০টি জায়গায়। পূর্ব মেদিনীপুর, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, পূর্ব বর্ধমান এবং বাঁকুড়াতেও বাঁধ ভেঙে যাওয়ার খবর রয়েছে।
রাজ্যের এক পদস্থ কর্তা জানান, একসঙ্গে এতগুলি জায়গায় বাঁধ ভেঙে যাওয়ার ঘটনা আগে তেমন শোনা যায়নি। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কী মারাত্মক হবে। আশা করি, ডিভিসি আর কোনোদিন এইভাবে জল ছাড়বে না।