মণ্ডপে ঢুকেই বৃষ্টি, বাড়ি ফেরার ‘দুশ্চিন্তা’য় মাথায় হাত দম্পতির
বর্তমান | ০৯ অক্টোবর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, বিধাননগর: ‘বাড়ি ফিরব কী করে? এত বৃষ্টি’! পঞ্চমীর সন্ধ্যা। ছ’মাসের মেয়ে কোলে মণ্ডপে ঢুকেছিলেন এক দম্পতি। তখনই মণ্ডপের উপরে টিনের ছাউনিতে শুনতে পেলেন বৃষ্টির আওয়াজ। কিছুক্ষণের মধ্যে অবশ্য বৃষ্টি কমল। স্বস্তি পেলেন দম্পতিও। তারপর শুরু হল ঢাকের আওয়াজ! ঢাক? কিন্তু, ঢাকি তো নেই! মণ্ডপের মাঝখানে মেঝের উপর রাখা গামলা, বালতি, ঘটি, হাঁড়ি, কলসি আর কত কী। সবই উল্টানো। তাতে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছে। সেই ফোঁটার শব্দেই গামলায় বেজে উঠছে ঢাকের আওয়াজ। দম্পতি তখন বুঝলেন, কোনও বৃষ্টিই হয়নি! আসলে বারিধারা দিয়ে গড়া হয়েছে থিম! সল্টলেকের এ কে ব্লকের মণ্ডপ এবার পুজোয় এমন অভিনব থিমে সেজে উঠেছে। থিমের নাম বারিবিন্দু। শিল্পী ভবতোষ সুতার। মণ্ডপের ভিতর এক অন্য স্বাদ পাচ্ছেন দর্শনার্থীরা।
মঙ্গলবার তখনও সন্ধ্যা হয়নি। সল্টলেকের এফডি ব্লকে তিল ধারণের জায়গা নেই। গোমুখ থেকে সাগর পর্যন্ত গঙ্গার যাত্রার উপর গড়ে উঠেছে থিম। মণ্ডপের সামনে দিয়ে বয়ে চলেছে ‘গঙ্গা’! রয়েছে পাহাড় থেকে সমতলের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া গঙ্গার প্রবাহ পথ। তার উপর গড়ে ওঠা হরিদ্বার, বারাণসী, দক্ষিণেশ্বর, কপিলমুনির আশ্রম– রয়েছে সবই। সল্টলেক থেকে লেকটাউন, নিউটাউন থেকে বাগুইআটি। সর্বত্রই থিমের ছড়াছড়ি। সর্বত্রই উপচে পড়া ভিড়। আর শ্রীভূমি? দুপুরের আগেই দর্শনার্থীদের অপেক্ষার লাইন। তবুও চোখে মুখে কারও ক্লান্তি নেই। ভিড় নিউটাউন সর্বজনীনেও। থিমেও রয়েছে অভিনবত্ব। নাম ‘মৃচ্ছকটিক’। সব মিলিয়ে উৎসব মুখর সিটি স্কোয়ারের মাঠ।
শান্তির কামনায় ‘স্বস্তিক’ থিমে সেজে উঠেছে সল্টলেকের এএ ব্লকের পুজো। সারা বিশ্বে শান্তি ফিরে আসুক, এই বার্তাই তুলে ধরা হয়েছে। মণ্ডপের ভিতরে রয়েছে মা দুর্গার ভৈরবী রূপ। ব্লক কমিটির সম্পাদক পার্থ চক্রবর্তী বলেন, পুজোর দিনগুলিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। চলবে ভোগ বিতরণও। অন্যদিকে, থিম না হলেও সাবেকিয়ানায় মেতে উঠেছে ‘নিউটাউন প্রকৃতি বান্ধব সমিতি’। যুগ্ম সম্পাদক তারক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, নারী শক্তির বার্তা দিতে আমাদের এখানে কুমারী পুজো হয়। পুজো মানে উৎসব। আচার-অনুষ্ঠান, সাবেকিয়ানার সঙ্গে আবাসিকরা সকলেই গল্প, আড্ডায় মেতে উঠেছেন।
বাগুইআটির দক্ষিণপাড়া যুব পরিষদের এবারের থিম ‘ন্যায়দণ্ড’। গণতন্ত্র নয়, ‘বনতন্ত্র’ বাঁচানোর আহ্বান করা হয়েছে এখানে। কারণ, যথেচ্ছভাবে চলছে বৃক্ষছেদন। ভারসাম্য হারাতে বসেছে পৃথিবী। তাই অরণ্য বাঁচাতে মা দুর্গার কাছে ন্যায় বিচার চেয়ে সেজে উঠেছে মণ্ডপ।