এই সময়, কৃষ্ণনগর: কোথায় বীরভূমের মল্লারপুর থানার খরাশিংপুর গ্রাম। আর কোথায় নদিয়ার শান্তিপুর থানার গোবিন্দপুর। মঙ্গলবার মিলেমিশে একাকার হলো দুই গ্রাম। দু’বছর ধরে নিখোঁজ থাকা মানসিক ভাবে অসুস্থ এক যুবককে খুঁজে দিল দুর্গাপুজোর ঢাকের বাজনা। পুজোর আগে হারানো ছেলেকে খুঁজে পেয়ে ঢাকিদের দু’হাত তুলে দোয়া করলেন নুরের পরিবার।নদিয়ার শান্তিপুরের গোবিন্দপুর গ্রামের সবুজ সংঘের পুজো উদ্যোক্তারা সোমবার ঢাকিদের আনতে গিয়েছিলেন শিয়ালদহ স্টেশনে। ঢাকের বাজনা শুনে তাঁরা ৬ জন ঢাকিকে পছন্দ করে রাত ১০টা ৪০-এর শেষ শান্তিপুর লোকালে চাপিয়ে রওনা দেন গন্তব্যে। ট্রেনে ফেরার পথে তৈরি হয় নাটকীয় দৃশ্য। ওই কামরার এক কোণে নোংরা পোশাকে থাকা এক যুবককে দেখে চিনতে পারেন কুমার বাদ্যকর নামে এক প্রৌঢ় ঢাকি।
কোথায় বাড়ি জিজ্ঞেস করতেই তাঁকে দেখে ফিক করে হেসে ফেলেন যুবকটি। তাঁর হাসি দেখে চিনতে পারেন প্রৌঢ়। এ যে দু’বছর আগে নিখোঁজ হওয়া তাঁদের গ্রামের নুর ইসলাম! নিশ্চিতভাবে বুঝতে পেরে নুরকে আর ছেড়ে আসতে পারেননি বৃদ্ধ ঢাকি। তাঁকে সঙ্গে করে নিয়ে আসেন শান্তিপুরের পুজো মণ্ডপে। মঙ্গলবার শান্তিপুর স্টেশনে পৌঁছনোর পরে নুরের বাড়ির লোকজনকে ফোন করেন কুমার। পুজো কমিটির সভাপতি ভিডিয়ো কলে নিখোঁজ ছেলের ছবি দেখালে কেঁদে ফেলেন তাঁর মা। দুপুরেই ছুটে আসেন গোবিন্দপুরে।
গোবিন্দপুর সবুজ সংঘ পুজো কমিটির সভাপতি গৌতম সমাদ্দার বলেন, ‘আগের দু’বার শিয়ালদহ থেকে তাসা পার্টি এনেছিলাম। এ বার শেষমুহূর্তে মত বদল করে ঢাকি আনার সিদ্ধান্ত নিই। শিয়ালদহ থেকে ৬ জন ঢাকিকে শান্তিপুর লোকালে তুলে গোবিন্দপুর ফিরছিলাম। কুমার বাদ্যকর ওই কামরার মধ্যে বসে থাকা এক যুবককে চিনতে পারেন। আমরা ওকে মণ্ডপে এনে স্নান করিয়ে নতুন পোশাক পরিয়ে দিই।’ কুমার বাদ্যকর বলেন, ‘আমাদের গ্রামেই বাড়ি নুরের। মানসিক ভাবে অসুস্থ। ওঁর বাবা-মা দু’বছর ধরে হন্যে হয়ে খুঁজে না পেয়ে মনমরা হয়েছিল।’
এ দিন নুরকে নিতে খরাশিংপুর গ্রাম থেকে এসেছিলেন তাঁর কাকা-সহ পরিবারের অন্যরা। শামিরুল আলম নামে নুরের এক আত্মীয় বলেন, ‘আমরা যে কী খুশি হয়েছি তা ভাষায় বোঝাতে পারব না।’ বাড়ি ফেরার সময়ে নুর এক দৃষ্টে তাকিয়ে ছিলেন কুমার কাকার দিকে। ঘরের ছেলেকে ঘরে ফেরাতে পেরে প্রৌঢ়ের চোখে তখন জলের ধারা। খুশিতে কাঁধে তুলে নেন ঢাক। সঙ্গীদের নিয়ে বাজালেন অনেকক্ষণ। যতক্ষণ না দৃষ্টিতে আবছা হয়েছে নুর।