অনশনরত জুনিয়রদের দাবিকে সমর্থন করে সিনিয়র চিকিৎসকদের ‘গণ-ইস্তফা’র হুঁশিয়ারিকে ‘হুমকি-প্রথা’ (থ্রেট কালচার) ও ‘রাজনৈতিক ব্ল্যাকমেলিং’ বলে চিহ্নিত করল শাসক দল। তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে বলা হয়েছে, রাজ্য সরকার সংবেদনশীল, সংযত। সেই সুযোগ নিয়ে গোলমালের নাটক চলছে। বিরোধীরা অবশ্য চিকিৎসকদের প্রতি সংহতি জানিয়ে দাবি করেছে, সরকার প্রতিশ্রুতি না-রাখার কারণেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। জেদাজেদি ছেড়ে সরকারের ফের চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনায় বসার দাবিও তুলেছে তারা।
জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন মঙ্গলবার তৃতীয় দিনে পড়েছে। এই অবস্থায় সরকারের কাছে ইতিবাচক পদক্ষেপ দাবি করে আর জি কর হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসকদের তরফে জানানো হয়েছে, জট কাটাতে সরকার এগিয়ে না-এলে তাঁরা ‘গণ-ইস্তফা’ দেবেন। এই অবস্থান নিয়ে সমাজমাধ্যমে তাঁদের তীব্র সমালোচনা করেছেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। সিনিয়র চিকিৎসকদের উদ্দেশে তিনি লিখেছেন, ‘গণ-ইস্তফা আইনি নয়। নাটক না-করে নিয়মমতো নিজস্ব চিঠিতে ইস্তফা দিন। ডিউটি না-করলে চাকরি ছাড়ুন!’
চিকিৎসকদের দাবি সম্পর্কে এখন শাসক দল কঠোর মনোভাবই নিয়েছে। কুণালের বক্তব্য, ‘‘সরকার সব ইস্তফা গ্রহণ করুক! বহু যোগ্য ডাক্তার অপেক্ষা করছেন।’’ সেই সঙ্গেই তিনি লিখেছেন, ‘কাজ বন্ধের দিনগুলিতে বেতন কাটা হোক।’ তৃণমূল নেতার মন্তব্য, ‘সরকার কী পদক্ষেপ নেবে, তাদের বিষয়। কিন্তু আর এই থ্রেট কালচার, ব্ল্যাকমেলিং বরদাস্ত করা ঠিক হবে না’!
এমতাবস্থায় ভাটপাড়ায় গিয়ে এ দিন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী পাল্টা দাবি করেছেন, ‘‘এর জন্য সম্পূর্ণ দায়ী মুখ্যমন্ত্রী ও মুখ্যসচিব। জুনিয়র চিকিৎসকেরা বারবার দাবি করেছিলেন, আলোচনার ‘লাইভ স্ট্রিমিং’ হোক। তা হলে সকলে জানতে পারতাম, সরকার তাঁদের কী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এখন আমরা জুনিয়র চিকিৎসকদের কথা বিশ্বাস করব। কারণ, তাঁরা অরাজনৈতিক ভাবে আন্দোলন করছেন। রাজ্য সরকারের উচিত তারা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সে সব পূরণ করা। না-হলে যে ভাবে গণ-ইস্তফা শুরু হয়েছে, তাতে পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে।’’ সিউড়িতে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও বলেছেন, ‘‘কয়েক দিন আগে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, হাতি চলে বাজার তো কুত্তে ভোঁকে হাজার! ওঁর এই যে উন্নাসিকতা, দাম্ভিকতা, বাংলার ভাগ্য বিধাতা হয়ে ওঠার যে ভাবনা—এটা তারই প্রতিবাদ।’’ সুকান্তের বক্তব্য, চিকিৎসকদের আন্দোলন ও দাবির প্রতি বিজেপির সমর্থন আছে।
সিনিয়র চিকিৎসকদের ঘোষণা প্রসঙ্গে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের মন্তব্য, ‘‘তাঁদের কুর্নিশ জানাব! একে বলে সংহতি। সরকার কালা হলে জোরে আওয়াজ করতে হয়। জুনিয়র চিকিৎসকদের অনশন চলছে, সরকারের টনক নড়ছে না। এত দিন তো সিনিয়র চিকিৎসকরাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হাসপাতাল চালাচ্ছিলেন। সরকার পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে গিয়েছে, তাই ইস্তফা দিয়ে একটু প্রাণ সঞ্চারের চেষ্টা করছেন।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারেরও বক্তব্য, ‘‘চিকিৎসকেরা বলেছিলেন, নিজেরা যন্ত্রণায় থাকলে তাঁরা অন্যদের যন্ত্রণা কমাবেন কী ভাবে? সরকারের উচিত, দাবিগুলি নিয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনায় বসা। আলোচনায় রফা তো বেরোতেই পারে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘এই সঙ্কটের সময়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রয়োজনে সর্বদল বৈঠক ডাকুন।’’