জুতোর দোকান থেকে কেনাকাটা সেরে মোটরবাইকে চেপে ফিরছিলেন বাবা-ছেলে। আচমকা পিছন থেকে এসে বাইকে ধাক্কা মারে একটি বেপরোয়া স্কুলবাস। তার পরেই দেখা যায়, চলন্ত স্কুলবাসটির দরজার হ্যান্ডল ধরে কোনও মতে ঝুলে রয়েছেন যুবকটি। আর বাসের নীচে ঢুকে গিয়েছেন তাঁর বাবা। কিন্তু তার পরেও ওই প্রৌঢ়কে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে বাসটি। এমন ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে তত ক্ষণে আতঙ্কে চিৎকার করতে শুরু করেছে স্কুলবাসে থাকা পড়ুয়ারা।
সোমবার, চতুর্থীর দিন বেলা ১২টা নাগাদ এমনই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটল হাওড়া ময়দান সংলগ্ন মহাত্মা গান্ধী রোডে, হাওড়া ট্র্যাফিক গার্ডের অফিসের সামনে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ঘটনাস্থলের আশপাশের দোকানদার ও পথচলতি মানুষেরাই বেপরোয়া বাসটিকে আটকে ওই যুবক ও প্রৌঢ়কে উদ্ধার করে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। পুলিশ জানিয়েছে, ওই যুবক ও প্রৌঢ় সম্পর্কে বাবা ও ছেলে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ছেলেকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হলেও গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁর বাবা, ৫৩ বছরের স্বপনকুমার মাজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
হাওড়া হাসপাতাল সূত্রের খবর, গুরুতর আহত ওই প্রৌঢ় আন্দুল রোডের বাসিন্দা। তিনি ছেলের বাইকে চেপে মহাত্মা গান্ধী রোডের একটি জুতোর দোকানে এসেছিলেন। বাইক চালাচ্ছিলেন তাঁর ছেলে। এর পরে দোকান থেকে বেরিয়ে মহাত্মা গান্ধী রোডে উঠতেই হাওড়া ময়দান মেট্রো স্টেশনের দিকে যাওয়া স্কুলবাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাঁদের ধাক্কা মারে। বাইকচালক ওই যুবক কোনও মতে বাসের হ্যান্ডল ধরে ঝুলতে থাকলেও বাসের নীচে ঢুকে যান তাঁর বাবা। বাসটি সেই অবস্থাতেই তাঁকে টেনেহিঁচড়ে হাওড়া ময়দানের দিকে এগোতে থাকে। সে সময়ে স্কুলপড়ুয়াদের চিৎকারে ছুটে আসেন পথচলতি লোকজন।
তাঁরাই বাসটিকে থামান। দুর্ঘটনার পরে স্কুলবাসের চালক পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয়েরা তাঁকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন। চালক-সহ বাসটিকে আটক করেছে হাওড়া থানার পুলিশ।
এ দিকে, একটি বেসরকারি স্কুলের ওই বাসে থাকা আতঙ্কিত প্রায় ৫০ জন পড়ুয়াকে উদ্ধার করে অফিসে নিয়ে গিয়ে বসান হাওড়া ট্র্যাফিক গার্ডের পুলিশকর্মীরা। তাদের খাবার ও জল দেন। এর পরে খবর দিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের ডেকে তাঁদের হাতে পড়ুয়াদের তুলে দেওয়া হয়।
এই দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, মহাত্মা গান্ধী রোডের এক দোকানি দেবব্রত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘স্কুলবাসটির চাকা ঠিক নেই। অতগুলো বাচ্চাকে ওই ভাঙাচোরা বাসে করে নিয়ে যাচ্ছিল। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরবাইক আরোহীকে যে ভাবে বাসটি হিঁচড়ে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছিল, তা দেখে আমরা শিউরে উঠেছি।’’ হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘স্কুলবাসটি কী করে এখনও স্কুলে চলছিল, তা খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে। বাসটির সমস্ত কাগজপত্র পরীক্ষা করা হবে। পড়ুয়াদের জীবন যেখানে জড়িত, সেখানে কোনও রেয়াত করা হবে না।’’