সিংহ, বসু মল্লিক ও রায় পরিবারে মা অভয়া রূপে পুজিত হন। চার হাত বিশিষ্ট দেবীর গায়ের রঙ তপ্ত কাঞ্চন। মায়ের বাঁদিকের উপরের হাতে থাকে চক্র, নিচের হাতে সাপ, ডান দিকের উপরের হাতে খড়্গ নিচের হাতে ত্রিশূল। গুপ্ত পঞ্চিকা মতে আরাধনা হয় দেবীর। পাঁচ খিলান যুক্ত ঠাকুর দালান। মন্দিরের মাথায় ত্রিমুখী তিনটি ত্রিশুল মাঝে চক্র। এক ই কাঠামোতে বছরের পর বছর ধরে তৈরী হচ্ছে প্রতিমা। দশমীতে বিসর্জনের পরেই মাটি কিছুটা ধুয়ে গেলে তুলে আনা হয় কাঠামো। মন্দির দালানে সেই কাঠামো রেখে শান্তি জল দেওয়া হয়। তারপর সাদা কাগজে লাল কালী দিয়ে শ্রী শ্রী দূর্গা মাতা সহায় লেখেন পরিবারের সকলে। প্রাচীন কাল থেকে এমন ই চলে আসছে। সপ্তমী, অষ্টমীর সন্ধিক্ষন পুজো ,ও নবমীতে ছাগ বলির পাশাপাশি ফল বলিও দেওয়া হয়।
ঠাকুর মন্দিরে প্রবেশ পথের বাঁ দিকে রয়েছে বংশের প্রাচীন শিব মন্দির। আর ডান দিকে অর্থাৎ মন্দিরের ঠিক উল্টোদিকে সোজাসুজি রয়েছে বংশের প্রাচীন রাসমঞ্চ ও আরো একটি শিব মন্দির । মন্দিরের পিছনে রয়েছে নারায়ন ঘর। নিত্য পুজো হয় সমস্ত ঠাকুরের। এক ই বংশের পুরোহিত পুজো করে আসছেন সমস্ত দেব দেবীর। হুগলি র দামোদর নদের ওপার থেকে এখনো এক ই বংশের ঢাকীরা আসেন ঢাক বাজাতে। প্রতিমাও তৈরী করেন প্রাচীন কালের শিল্পীদের বংশধর। ডাকের সাজ ও দিয়ে যান প্রাচীন কালের সোলা শিল্পীদের বর্তমান শিল্পীরা । নবমী রাতে ঢাকীদের বিশেষ রঙ বাজনা দেখতে এলাকার অনেক মানুষ সমবেত হন মন্দির চত্বরে।। হাঁড়ি কাঠ বসে গেলে বাড়ির বিধবা মহিলারা কেউ ভাত খান না। দূর্গার পাশাপাশি দোল পূর্নিমায় নারায়ন এনে পুজো করা হয় । রাস পুজো, চাঁচোর ইত্যাদি প্রাচীন পুজো এখনো অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে মন্দির চত্বরে।
বংশের এক প্রবীন সদস্য অসীম সিংহ জানান, বোধন শুরু হয়ে গেলে বাড়ির কেউ ক্ষার দিয়ে জামা কাপড় কাচতে পারেন না। একবার বোধনের পর কেউ পুকুরে কাপড় ধুচ্ছিলেন। তখন এক মহিলা এসে বলেন সিংহ বাড়ির পুজো শুরু হয়ে গেছে তোরা এখনো কাপড় ধোয়ার কাজ করছিস। বলেই সেই মহিলা অদৃশ্য হয়ে যায়। সেই থেকে বোধন বসে গেলে সাবান কাঁচা,ক্ষার কাঁচা বন্ধ। দশমীতে বিসর্জনের পর ক্ষার কাঁচা হয়।। বর্তমান প্রজন্মের সদস্যা সৌমিলী সিংহ জানান, ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত বাড়িতে প্রচুর লোক। অনেক হ ই হুল্লোর হয়। তা নিয়েই মেতে থাকি। কোন প্যান্ডেলে যাওয়া হয় না। সেই উল্টো রথের দিন কাঠে ঘা দিয়ে প্রতিমা তৈরীর কাজ শুরু হয়। তার পর এক মেটে ,তিন মেটে সমস্ত কিছুই ঠাকুর দালানে বসে বসে দেখি ও খুব উপভোগ করি। কিছু ভিডিও তৈরী করি। অষ্ঠমীর সন্ধি পুজো বা নবমীর হোমের সময় মায়ের দিকে তাকানো যায় না। যেন মনে হয় মা জীবন্ত। নবমীতে যেন দেখা যায় মায়ের চোঁখের এক কোন জল এসেছে, যেন ঠাকুর ভাবছেন এবার হয়তো বাপের বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে। এতটাই জাগ্ৰত আমাদের অভয়া।