• 'রেড লাইট' ফেলে আলোর পথে যাত্রী ওঁরা
    এই সময় | ০৯ অক্টোবর ২০২৪
  • কাল সপ্তমী। লক্ষ্মীবারও বটে। তবে সমাজের চোখে ওঁরা এখন আর কেউ লক্ষ্মী নন। কেউ ‘অলক্ষ্মী’, কেউ ‘নষ্টা’, কেউ ‘কুলটা’ আবার কেউ ‘নোংরা।’ কারণ? ওঁদের জীবনের অনেকগুলো বছর কেটেছে শহর ও দেশের বিভিন্ন যৌনপল্লিতে। কেউ পাচার হয়ে, কেউ বাধ্য হয়ে আবার কেউ ফেরার পথ না পেয়ে থেকে যেতে একরকম বাধ্যই হয়েছিলেন এই পেশায়।পুজোর দিনগুলো বা যে কোনও উৎসবের মরশুম তাঁদের কাছে ছিল নিকষ অন্ধকারের অমাবস্যা। ওই সময়গুলোতে খদ্দেরদের আনাগোনা বেড়ে যেত (এখনও যায়), ফলে ‘ডিউটি’র সময় বাড়ত অনেকটাই। সেই বিভীষিকার থেকে বেরিয়ে যে সত্যিই মাতৃমূর্তির আরাধনায় সামিল হওয়ার সুযোগ পাবেন তাঁরা, এ কথা ভুলতেই বসেছিলেন প্রায়। তাঁরা এ বার সেই সুযোগ পাচ্ছেন।

    রাজারহাটের ‘ড্রিম অ্যাপার্টমেন্ট পূজা কমিটি’ এ রকম ৫৫ জন নানা বয়সের মহিলাদের নিয়ে তাঁদের পুজোর উদ্‌যাপন করছে। ওঁরা এখন একটি হোমে রয়েছেন, গত ২-৩ মাসে উদ্ধার হয়েছেন সকলেই। তাঁরা সকলেই এখন ন্যায়বিচারের অপেক্ষায়। এই পুজো কমিটির উদ্যোগকে কুর্নিশ জানিয়ে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ‘আনন্দ কেন্দ্র’ নামে একটি অনাথ আশ্রম-সহ অনেকেই।

    এ বারের পুজো তাঁর কাছে কতটা আলাদা? বছর ৪২-এর এক মহিলার কথায়, ‘আমরা তো পুজোয় অচ্ছুৎ, যে কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানেই... আমি তাই আমার মনের অবস্থা ভাষায় প্রকাশ করার মতো অবস্থায় নেই।’ তাঁর থেকে বয়সে অনেক ছোটরাও এখন ওই হোমেই থাকছেন। অনেকেই তার মধ্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। বাকিরা উপস্থিত থাকবেন। মানসিক দৃঢ়তা ও মানবপাচার ও যৌন-অপরাধের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস দেখানোয় তাঁদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে সংবর্ধনাও দেবে এই পুজো কমিটি। তাদের তরফে প্রত্যেকের জন্য থাকছে নতুন পোশাক ও কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।

    বেশ কয়েক বছর পরে ফের দুগ্গা মায়ের সামনে নাচবেন ২৫-এর তরুণী। নিজের উচ্ছ্বাস গোপন করলেন না — কত্ত দিন পরে বন্ধুদের সঙ্গে আবার পারফর্ম করব। ওঁদের সকলের সঙ্গে এখানেই থাকতেই পরিচয়। নতুন পোশাকও পাচ্ছি। খুব খুব আনন্দ হচ্ছে।’ ওঁর থেকে বয়সে কিছুটা বড় বছর ৩২-এর তরুণীর কথায়, ‘কোনও সেলিব্রেশনই আমাদের জীবনে আনন্দের আবহ আনতে পারত না। সে সুযোগ এসেছে। উদ্ধারের পরে আমার প্রথম দুর্গাপুজো। ঈশ্বর ও আমাদের মেন্টরদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’

    পুজো কমিটির দুই সেক্রেটারি প্রবাল আঢ্য ও অরুন্ধতী বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘আমরা সব সময়েই চাইতাম যে এই আলোয় ফেরা মহিলাদের এই উৎসবে সামিল করি। কিন্তু তা এত দিন সম্ভব হয়নি। এ বার স্বেচ্ছায় এগিয়ে এসেছেন অনেকে। তা এই পুজো কমিটির চলার পাথেয়।’ জানালেন, পাচারের অন্ধকার থেকে ফিরে আসা মহিলাদের স্বনির্ভর করার ভাবনাও রয়েছে তাঁদের।

    বহু বছর পরে শরতের নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে হোমের এক বাসিন্দা বললেন, ‘ড্রিম পুজো কমিটি আমাদের হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নকে বাস্তব করল। মা এ বার থেকে আমাদেরও।’
  • Link to this news (এই সময়)