এই সময়: কড়া রোদের তেজ কমে গেল কয়েক মিনিটের মধ্যেই। ষষ্ঠীর দুপুরে আকাশ ঢেকে গেল ঘন কালো মেঘে। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছিল বৃষ্টি নামা বুঝি সময়ের অপেক্ষা। তারই মাঝে মেঘ চিরে দেখা দিয়ে যাচ্ছিল বিদ্যুৎ। তার পরেই কান ফাটানো বাজের আওয়াজ।বুধবার দুপুরে গড়িয়া থেকে ব্যারাকপুর — সর্বত্রই ভয় ধরিয়েছিল বজ্রবিদ্যুতের প্রাবল্য। পুজোর দিনগুলোয় কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে ভারী বৃষ্টি না হলেও বিক্ষিপ্ত ভাবে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির যে পূর্বাভাস জারি করেছিল হাওয়া অফিস, তার মধ্যে ছিল বজ্রবিদ্যুতের সতর্কতাও। সুতরাং পুজোর বাকি দিনগুলোয় বিশেষ করে বাজ থেকে সতর্ক থাকার বার্তা আরও একবার শুনিয়ে রাখলেন আবহবিদরা।
বুধবার দুপুর ২টোর পর যে অতি দ্রুত আবহাওয়ার এমন নাটকীয় পরিবর্তন হতে পারে সেটা সকালের আবহাওয়া দেখে একবারও বোঝা যায়নি। ঝকঝকে নীল আকাশে কড়া রোদের উপস্থিতিতে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় তখন পুরোদস্তুর ‘পুজো পুজো ভাব’। দুর্গাদুজোর দিনগুলোয় আবহাওয়া নিয়ে হাওয়া অফিসের যা পূর্বাভাস রয়েছে, হয়তো সে কথা মাথায় রেখেই এদিন সকাল থেকেই শহরের রাজপথে জনতার ঢল।
বেলা ১১টা নাগাদ দক্ষিণ কলকাতায় ভিড় কতটা সেটা বোঝানোর জন্য একটা উদাহরণই যথেষ্ট হবে। গড়িয়াহাট মোড় থেকে এদিন দেশপ্রিয় পার্ক যেতে বাসে লেগে যাচ্ছিল অন্তত ৩৫-৪০ মিনিট। ত্রিধারা সম্মিলনী, সমাজসেবী সংঘ, বালিগঞ্জ কালচারাল এবং অবশ্যই দেশপ্রিয় পার্কে ওই সময়েই তিল ধারণের জায়গা নেই। একই অবস্থা শহরের উত্তরেও কলেজ স্কোয়ার, সন্তোষ মিত্র পার্ক, হাতিবাগান সর্বজনীন বা টালা বারোয়ারি — সকালেই যেন দর্শক টানার প্রতিযোগিতা শুরু করে দিয়েছিল।
বেলার দিকে আকাশের কালো মেঘ প্যান্ডেল হপিংয়ের উৎসাহ বিন্দুমাত্র দমাতে পারেনি। সন্ধের মুখ থেকেই দক্ষইমের পাশাপাশি উত্তর কলকাতার বিস্তীর্ণ জায়গায় রাজপথ কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায়। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড, মানিকতলা, কাঁকুড়গাছি চত্বর এবং ভিআইপি রোডে যানচলাচলের গতি একেবারেই ধীর হয়ে গিয়েছিল। ষষ্ঠীর সকালে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বেশ কিছু জায়গায় কিছুক্ষণের জন্য বৃষ্টি হলেও সেই তালিকায় কলকাতার নাম ছিল না।
তবে সন্ধের পর নতুন করে বৃষ্টি শুরু হয় উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায়। পুজোর বাকি দিনগুলো কি তেমনই থাকবে? বুধবার মৌসম ভবন যে উপগ্রহচিত্র প্রকাশ করেছে তাতে দেখা গিয়েছে বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিম দিক অর্থাৎ তামিলনাডু ও অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূল বরাবর ঘন মেঘের আস্তরণ রয়েছে। মেঘের স্তর দেখা গিয়েছে আন্দামান সাগর এবং আরও পূর্ব দিকে মিয়ানমার-সংলগ্ন মার্তাবান উপসাগরের ওপরেও। এ ছাড়া বঙ্গোপসাগরের বাকি অংশ নতুন কেনা স্লেটের মতোই পরিষ্কার।
তবে বাংলাদেশের ওপর একটি ঘূর্ণাবর্ত এখনও অবস্থান করছে। এই কারণেই ওই ঘূর্ণাবর্ত বিদায়ী দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে রাজ্যের বেশ কিছু জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি নামাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অনেক জায়গায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির আবহও তৈরি হয়ে রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তারই মাঝে বজ্রবিদ্যুৎ থেকে বিশেষ ভাবে সতর্ক করেছেন আবহবিদরা।