ওঁরা অনশন থেকে উঠুন, সব আলোচনাই ইতিবাচক: জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে আলোচনা শেষে মুখ্যসচিব
আনন্দবাজার | ০৯ অক্টোবর ২০২৪
স্বাস্থ্য ভবনে বৈঠকে যা আলোচনা হয়েছে, তার উপর বিশ্বাস রাখারই বার্তা দিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। বৈঠকে জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন তুলে নেওয়ার বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়ে মুখ্যসচিব বলেন, ‘‘আমাদের বিশ্বাস, আজকের আলোচনাকে ইতিবাচক এবং গঠনমূলক আলোচনা হিসাবেই নেবেন ওঁরা।’’ বুধবার রাতে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের সঙ্গে বৈঠক শেষে বেরিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। বৈঠক ‘নিষ্ফল’ হয়েছে বলে দাবি করে তাঁদের বক্তব্য ছিল, তাঁরা সরকারের কাছ থেকে কোনও সদর্থক উত্তর পাননি। তার প্রেক্ষিতে মুখ্যসচিবের বলেন, ‘‘সব আলোচনাই ইতিবাচক হয়। আজকের আলোচনাকে সদর্থক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা হলে ভালই হবে।’’
ধর্মতলায় আমরণ অনশনে বসেছেন সাত জন জুনিয়র ডাক্তার। তাঁদের অন্যতম দাবি স্বাস্থ্যসচিবের পদত্যাগ। চারদিন পার হয়েছে জুনিয়র ডাক্তারদের অনশনের। এর পর বুধবার সন্ধ্যায় জুনিয়র ডাক্তারদের ইমেল করেন মুখ্যসচিব মনোজ। বৈঠকের জন্য স্বাস্থ্যভবনে আহ্বান জানানো হয় জুনিয়র ডাক্তারদের। সেই মতো জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি দল স্বাস্থ্যভবনে যায়। প্রায় তিন ঘণ্টা বৈঠকের পর জুনিয়র ডাক্তারেরা বাইরে বেরিয়ে দাবি করেন, সরকার শুধুই মৌখিক আশ্বাস দিয়েছে। নতুন করে কিছু বলা হয়নি।
মুখ্যসচিব অবশ্য সেই সব দাবি প্রকারান্তরে খণ্ডনই করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা আলোচনা করলাম। অনুরোধ করলাম। জুনিয়র ডাক্তারের এই মুহূর্তে সময়সীমা জানতে চাইছেন। আমরা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা মেনে কাজ করছি। সেই মতোই কাজ এগোচ্ছে।’’ প্রয়োজনে আবার আলোচনায় বসা হতে পারে বলেও জানিয়েছেন মনোজ। তিনি বলেন, ‘‘দরকার হলে আমরা আবার বৈঠকে বসব। কিছু দিন পর আবার দরকার হলে মিটিং করব। ওদেরও এগিয়ে আসতে হবে।’’ ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবির প্রেক্ষিতে মুখ্যসচিব বলেন, ‘‘সকলে এক মত যে, নির্বাচন হবে। যেখানে যেখানে নির্বাচন হয়নি, সেখানে নির্বাচন হবে। পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে পরিস্থিতি বিবেচনা করে।’’
প্রসঙ্গত, জুনিয়র ডাক্তারেরা অবশ্য স্পষ্টই বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, বুধবারের বৈঠক নিয়ে তাঁরা একেবারেই খুশি নন। বৈঠক থেকে কোনও সমাধানসূত্র না মেলায় জুনিয়র ডাক্তারেরা বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের আমরণ অনশন চলবেই। বৈঠক শেষে বেরিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে দেবাশিস হালদার বলেন, ‘‘সরকারের এতটা অনমনীয়তা আশা করিনি। শুধুই সময় নষ্ট। নিষ্ফলা বৈঠক। কোনও সদর্থক পদক্ষেপ রাজ্য সরকার নেয়নি। রাজ্য সরকারের সদিচ্ছার অভাব, তাই আমরা আন্দোলনে। একটাও সদর্থক উত্তর পাব না ভাবিনি।’’ বলতে বলতে প্রায় কেঁদেই ফেলেন দেবাশিস। তিনি বলেন, ‘‘এতদিন সরকার বসেছিল কতদিনে আমরা অনশনে বসব? শুধু মৌখিক আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। নতুন কিছু বলা হয়নি। আমরা বলেছি সময় লাগে সবাই জানে, কিন্তু নির্দিষ্ট কিছু জানান। ওরা বলছেন এখনই নির্দিষ্ট কিছু বলা সম্ভব নয়। বৈঠকে বলা হল পুজো কাটিয়ে নেওয়া হোক। ফের আমরণ অনশন তুলে নিতে বলা হয়েছে। আমরা বলেছি আপনারা অনশন মঞ্চে এসে অনুরোধ করুন।’’
জুনিয়র ডাক্তারদের অন্যতম দাবি তাঁদের স্বাস্থ্যসচিবের পদত্যাগ। বৈঠক থেকে বেরিয়ে তাঁরা জানান, প্রিন্সিপাল হেলথ সেক্রেটারিকে নিয়েও মুখ্য সচিবের কাছে সরকারের মনোভাব জানতে চাওয়া হয়েছিল। সেখানেও সরকারের তরফে বলা হয়েছে যে, এই বৈঠকে এ নিয়ে কিছু বলা যাবে না। এক জুনিয়র ডাক্তার বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের যে সদিচ্ছার অভাব রয়েছে, আজ ফের বোঝা গেল। আমরা বলেছি সময় লাগে সবাই জানে। কিন্তু নির্দিষ্ট কিছু জানান। বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য সচিব নিয়ে এই বৈঠকে আলোচনার কিছু নেই। কবে দাবি পূরণ, তা নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের কথা বলেছি।’’
বৈঠক শেষে ধর্মতলার অনশন মঞ্চে ফিরে গিয়েও সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁদেরই এক জন আশফাকউল্লা বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য ভবনে ডেকে অপমান করা হয়েছে। মিটিং ডাকতে হয়, তাই ডেকেছেন। কোনও অ্যাকশন প্ল্যান হাতে ছিল না। মিটিংয়ে যা হয়েছে, ইমেল করে দিলেও বুঝে যেতাম। আমরা মৃত্যুকে ভয় পাই না। মিথ্যেকে ভয় পাই।’’