• চাইনিজ ব্রাত্য, মুর্শিদাবাদে পেট-পুজোয় এবার বাঙালিয়ানার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধল নবাবিয়ানা
    বর্তমান | ১০ অক্টোবর ২০২৪
  • অভিষেক পাল, বহরমপুর: পুজো মানেই দেদার খানাপিনা। প্যান্ডেল হপিংয়ের সঙ্গে রসনাতৃপ্তিতে পিছিয়ে থাকতে চায় না ভোজন রসিক বাঙালি। সেক্ষেত্রে নবাবি মুলুকে এবার অন্তত ব্রাত্য চাইনিজ খাবার দাবার। পুজোর উৎসব মেনুতে বাঙালি এগিয়ে রেখেছে মুঘল কুইজিন। বিরিয়ানি থেকে কাবাব সহ হরেক মেনুতে প্রস্তুত রেস্তোরাঁগুলি। মুর্শিদাবাদে বিরিয়ানির কদর বরাবরই। উৎসবের মরশুমে সেই কদর আরও কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে। প্রথমত, কম সময়ে একটা মাত্র ডিশেই পেট ভরে খাওয়া যায়। বিশেষ করে তরুণ ব্রিগেডের প্রথম পছন্দ বিরিয়ানি। নানা রকমের, নানা স্বাদের রকমারি কাবাব এবার বিরিয়ানির সঙ্গে জোট বেঁধেছে।  খাদ্য তালিকায় চাইনিজ ফ্রাইড রাইস, চিলি চিকেন ও নুডুলসের বদলে এবার বিরিয়ানি, নিহারি, চিকেন চাপ, মাটন চাপ, কোরমা, মোগলাই পরোটা বেশি মন কাড়ছে নতুন প্রজন্মের। পাশাপাশি বাঙালি পদের বিভিন্ন থালি বিশেষ পছন্দ হচ্ছে আম জনতার। বাঙালি পদের মধ্যে ডাল, আলু পোস্ত, এঁচোড় চিংড়ি, কাতলা মাছের কালিয়া বা রুই পোস্ত, খাসির মাংস পছন্দ অনেকের। যাঁরা একটু অন্যরকম পছন্দ করছেন, তাঁরা প্রথমেই ইলিশের দিকে ঝুঁকছেন। ডাল ভাজা আলু পোস্তের সঙ্গে, ইলিশ ভাজা, সরষে ইলিশ, ইলিশ ভাপা ও ইলিশ পাতুরির পদ খেয়ে পেট ও মন ভরাচ্ছেন খাদ্য রসিক বাঙালিরা। 

    রানিবাগানের বাসিন্দা সোমা চৌধুরী বলেন, গালৌটি কাবাব একবার মুখে দিলে সঙ্গে সঙ্গে মিলিয়ে যায়। তাই স্টার্টার হিসেবে আমার প্রথম পছন্দ এই কাবাব। স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয়। সঙ্গে মাটন বিরিয়ানি আমার বেশি পছন্দ। তবে রেস্তোরাঁ বুঝে সিদ্ধান্ত নেব। সারা বছর মাঝেমধ্যেই চাইনিজ খাবার আমরা খেয়ে থাকি। তাই পুজোর ক’টা দিন একটু স্পেশাল। এবার বেশ কিছু জায়গায় বাঙালি ডিশের ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে ইলিশ মাছের কম্বো ডিশ আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। পুজোর একদিন অবশ্যই বাঙালি ডিশ ট্রাই করব।   

    বহরমপুরের মোহন মলের ফুড জংশনের কর্ণধার অরিজিৎ গুপ্ত বলেন, পূজো মানেই বরাবরই আমাদের স্পেশাল মেনু থাকে। তবে চাইনিজ মোগলাই কুইজিনের পাশাপাশি আমরা বাঙালি ডিশ রাখছি। পুজোর সময় চাইনিজের থেকে মোগলাই কুইজিনের প্রতি মানুষের ঝোঁক বেশি থাকে। সেইমতো আমরা নানা স্বাদের বিরিয়ানি নিয়ে হাজির হয়েছি। সঙ্গে বিভিন্ন কাবাব ও চাপ তো থাকছেই। 

    রানিবাগানের এক রেস্তোরাঁর কর্ণধার সঞ্চালী মন্ডল বলেন, সারা বছরের গতানুগতিক মেনুর সঙ্গে পুজোর ক’টা দিন আমরা স্পেশাল মেনু ব্যবস্থা করি। মাছের বেশ কিছু পদ আমাদের এবার নতুন। যেমন, ইলিশ ভাপা, ইলিশ পাতুরি ও ইলিশ ভাজা। এছাড়া ভেটকি মাছের বিভিন্ন পদ আছে, যা মানুষ পছন্দ করবে। সম্পূর্ণ নিরামিষ বনেদি হেঁশেল থালিরও ব্যবস্থা রয়েছে। পুজোর সময় এই থালি মানুষের পছন্দের প্রথম তালিকায় থাকে। পুজোর এই ক’টা দিন অনেকেই নিরামিষ খান। তাদের কথা ভেবে আমরা বিভিন্ন পদ দিয়ে এই থালি সাজিয়েছি। প্রচুর ননভেজ আইটেম রয়েছে। যার মধ্যে নবাবী চিকেন দোম বিরিয়ানি ও নবাবী মাটনাম বিরিয়ানি এবার ভালো অর্ডার হচ্ছে।

    গোরাবাজারের বাসিন্দা সৌমিমা চট্টরাজ বলেন, পুজোর মধ্যে অষ্টমীতে নিরামিষ খেতেই হয়। ওইদিন লুচি আমার ফেভারিট। সেদিন রাতে অবশ্যই বাঙালি থালি ট্রাই করব। বাকি দিনগুলি মোগলাই কুইজিনের দিকে ঝুঁকব। মাটন বিরিয়ানি আমার প্রথম পছন্দ। সঙ্গে চিকেন চাপ। ষষ্ঠী থেকেই বাইরে খাওয়া দাওয়া শুরু হবে। রেস্তোরাঁগুলি নতুন নতুন সম্ভার সাজিয়ে রেখেছে। সবকিছু ট্রাই করার জন্য মুখিয়ে রয়েছি। 

    অতঃপর, মুর্শিদাবাদে পুজো মানেই নবাবিয়ানার সঙ্গে বাঙালিয়ানার গাঁটছড়া বাঁধা। অতীতে ছিল, আজও বর্তমান।  
  • Link to this news (বর্তমান)