চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ, জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে উত্তেজনা, ব্যাপক বিক্ষোভ
বর্তমান | ১০ অক্টোবর ২০২৪
সংবাদদাতা, জঙ্গিপুর: বুধবার সকালে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে এক প্রসূতির মৃত্যু ঘিরে উত্তেজনা ছড়াল জঙ্গিপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক কর্মীকে হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে ওই প্রসূতির পরিবারের বিরুদ্ধে। পরিবারের পাল্টা অভিযোগ, হাসপাতালের নিরাপত্তা কর্মীরাই তাঁদের হেনস্তা করেছেন। নার্স ও চিকিৎসকদের একাধিকবার ডাকলেও তাঁরা সাড়া দেননি। প্রসূতির পরিবার চিকিৎসকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করবেন বলে জানিয়েছেন।
হাসপাতাল ও পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ওই প্রসূতির নাম শিল্পা খাতুন (২০)। মৃতার বাড়ি রঘুনাথগঞ্জ থানার কাশিয়াডাঙায় দিঘিরপাহাড়ে। মঙ্গলবার দুপুরে ওই বধূর প্রসব বেদনা শুরু হয়। তাঁকে জঙ্গিপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এরপরে মঙ্গলবার রাতেই সিজার করে কন্যা সন্তান প্রসব করেন তিনি। সদ্যোজাতকে পরিবারের লোকজনের হাতে তুলেও দেওয়া হয়। কিন্তু প্রসবের পর রাত থেকেই ওই প্রসূতির শরীর খারাপ হতে শুরু করে। তীব্র রক্তক্ষরণ শুরু হয়। চিকিৎসক রোগীর শরীরে দু’ইউনিট রক্তের প্রয়োজন বলে জানান। রক্তও সংগ্রহ করে দেন পরিবারের লোকজন। তাঁদের অভিযোগ, মৃতার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কথা একাধিকবার ওয়ার্ডের নার্সকে জানানো হলেও তাঁরা কর্ণপাত করেননি। শিল্পার শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। তবুও প্রসূতিকে রক্ত দেওয়া হয়নি। অভিযোগ, চিকিৎসকও অনেকটা দেরিতে পৌঁছন। তারপর প্রসূতির পেটে একাধিকবার জোরে আঘাত করায় সেলাই কেটে যায়। দ্বিতীয়বার সেলাই করাই সময় ভোর চারটা নাগাদ ওই প্রসূতির মৃত্যু হয়। পুরো ঘটনায় হাসপাতালের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে মৃতের পরিজনেরা বিক্ষোভ শুরু করেন। রোগীর পরিজনরা প্রসূতি বিভাগে ঢুকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ওই ওয়ার্ডে পৌঁছে মৃতের পরিজনদের বের করে আনেন হাসপাতালের নিরাপত্তা কর্মীরা। সেই সময় হাসপাতালের নিরাপত্তা কর্মীদের মারধর করা হয়।
এরপরে পুলিসের তরফে পরিবারের লোক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। শেষ পর্যন্ত সকাল ন’টা নাগাদ শিল্পার দেহ হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে যান পরিবারের লোকেরা। মৃতার দাদা পিয়ারুল শেখ বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালে বোনকে ভর্তি করেছিলাম। মঙ্গলবার রাতে সিজারের পরই আমার বোন অসুস্থ হয়ে পড়ে। সেই সময় সেখানে উপস্থিত নার্স ও চিকিৎসকদের ডাকা হলেও তাঁরা কর্ণপাত করেননি। অনেক দেরিতে এসে পেটে জোরে জোরে আঘাত করে। ফলে সেলাই কেটে যায়। পরে সেলাই করলেও তাকে আর বাঁচানো যায়নি। পুরো ঘটনায় কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এবিষয়ে প্রতিক্রিয়া নেওয়ার জন্য হাসপাতালের সুপার কাশীনাথ পাঁজাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।