• সরকারের নতুন পোশাক পরে মণ্ডপে বন্যা দুর্গতরা
    বর্তমান | ১০ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: মহাষষ্ঠীতে বোধনের মধ্য দিয়ে অশুভ শক্তির বিনাশ হল। অন্ধকার কেটে সুস্থ ও অনাচারমুক্ত নতুন ভোর। এরকম এক মুহূর্তে কোলাঘাটের দেড়িয়াচক শ্রীঅরবিন্দ বিদ্যামঠে ত্রাণশিবির থেকেই চণ্ডীপাঠ শুনে মন খারাপ সন্তোষ সাউ, সঞ্জয় মেট্যা ও শান্তনু দাসদের। স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে কবে বাড়ি ফিরতে পারবেন ঩সেই প্রহর যেন শেষই হচ্ছে না। টানা তিন সপ্তাহ ত্রাণশিবিরে থাকতে হবে এটা ভাবতেও পারেননি। পুজোর সময়ও ঘরে ফিরতে না পারার আফশোস চোখে মুখে। কিন্তু, এই দুঃসময়েও মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে পাশে দাঁড়িয়েছেন তাতে সন্তুষ্ট কোলাঘাট ও পাঁশকুড়ার দুর্গতরা। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে ত্রাণ শিবিরে পৌঁছে গিয়েছে নতুন জামাকাপড়। সেই নতুন পোশাকে দ্রুত ঘরে ফেরার আর্জি নিয়ে দুর্গতরা মায়ের মণ্ডপে যাবেন। 

    কোলাঘাট থানার অন্তর্গত দেড়িয়াচক শ্রীঅরবিন্দ বিদ্যামঠে এই মুহূর্তে আড়াইশো দুর্গত আশ্রয় নিয়ে রয়েছেন। দেড়িয়াচক, কামিনাচক এবং চাকদহ গ্রাম এখনও জলমগ্ন। অনেক বাড়িতে জল। ঘরে ফিরে যাওয়ার অবস্থা নেই। অগত্যা ওই স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন। গত ১৮সেপ্টেম্বর থেকেই স্কুলে আশ্রয় নেওয়া শুরু হয়েছিল। এক কাপড়ে সন্তানদের হাত ধরে দুর্গতরা স্কুলে এসেছিলেন। তারপর তিন সপ্তাহ সময় পেরিয়ে গিয়েছে। এখনও বাড়ি ফেরা সম্ভব হচ্ছে না। পুজোয় স্কুল পড়েছে। এখন সবকটি ক্লাসঘরে দুর্গতরা আশ্রয় নিয়ে রয়েছেন। গত ৪অক্টোবর পুলিস সুপার সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য ওই স্কুলে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ৭০জনের হাতে নতুন পোশাক তুলে দিয়েছেন। তারপর ৬অক্টোবর জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজী গিয়ে স্কুলে আশ্রয় নেওয়া আড়াইশো জন এবং তার বাইরে আরও ৫০জনকে নতুন পোশাক দিয়েছেন। রাজ্য সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপন দপ্তর থেকেই দুর্গতদের পুজোর মুখে আনন্দ দিতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। নতুন পোশাক পরে এখানকার দুর্গতরা স্থানীয় চাঁইপুর বাজারে মায়ের মণ্ডপ দর্শনে যান। স্কুলের প্রধান শিক্ষক নির্মলেন্দু ঘড়া বলেন, সোয়াদিঘি খালের জল না কমায় এই এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি পরিবর্তন হচ্ছে না। অনেক ঘরবাড়ি এখনও জলমগ্ন। মানুষজনের কষ্টের শেষ নেই। এই অবস্থার মধ্যেও দুর্গতদের পুজোর আনন্দ পৌঁছে দিতে রাজ্য সরকার তাঁদের পাশে রয়েছে।

    ভোগপুর কেনারাম মেমোরিয়াল হাইস্কুলেও ৩৫জন দুর্গত এখনও বাড়ি ফিরতে পারছেন না। ভোগপুরের অনেক এলাকা এখনও জলমগ্ন। পুজোর মধ্যেও ত্রাণশিবিরে থাকতে হচ্ছে ভোগপুরের তাপসী দাস, অঞ্জনা ঢুলি, কামিনাচকের সনকা সামন্তদের। তাঁরা বলেন, উৎসবেও ত্রাণ শিবিরে থাকতে হচ্ছে। এরচেয়ে মন খারাপের কিছু হয় না। বাড়িতে এখনও হাঁটুসমান জল। কবে বাড়ি ফিরতে পারব সেটাও অনিশ্চিত।পাঁশকুড়ার রঘুনাথবাড়ি পঞ্চায়েতের অধীন কামিনাচক শশীভূষণ কানাইলাল বিদ্যায়তনের গ্রাউন্ড ফ্লোর সম্পূর্ণভাবে জলের তলায়। গত ২৩দিন ধরে স্কুলের দোতলায় ২৫টি পরিবার রয়েছে। স্কুল ভবনও বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো। নৌকা ছাড়া যোগাযোগের কোনও সুযোগ নেই। গোটা কামিনাচক গ্রাম জলমগ্ন। এখানেও নমো নমো করে দুর্গাপুজো হচ্ছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মানসকুমার মাইতি বলেন, তিন সপ্তাহ ধরে স্কুল ভবন পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। ক্লাসরুমেও জল। উপরতলায় বন্যাদুর্গতরা আশ্রয় নিয়ে আছেন। এত খারাপ অবস্থা অতীতে কখনও হয়নি। 

    (কোলাঘাটের দেড়িয়াচকের চাঁইপুর দুর্গোৎসব কমিটির বস্ত্র বিতরণ। ছবিটি তুলেছেন চন্দ্রভানু বিজলি)
  • Link to this news (বর্তমান)