হলদিয়ার রামকৃষ্ণ-সারদা মিশন আশ্রমের পুজোর পুরোভাগে থাকেন দুঃস্থ পরিবারের ছেলেমেয়েরা
বর্তমান | ১০ অক্টোবর ২০২৪
সংবাদদাতা, হলদিয়া: মা সারদা দেবীকে দুর্গারূপে পুজো করা হয় হলদিয়ার রামকৃষ্ণ-সারদা মিশন আশ্রমে। সাবেকি আদলের প্রতিমার সামনে সারদা দেবীর ফটো রেখে আরাধনা করে মিশন আশ্রম। আশ্রমে পাঠরত শিশু, কিশোর, কিশোরীরাই মূলত আয়োজনের পুরোভাগে থাকে। পুজোর পরিকল্পনা থেকে মণ্ডপসজ্জা, প্রতিমা আনা, মাঙ্গলিক আয়োজন, ভোগ বিতরণ সমস্ত কিছুতে রয়েছে তাঁদের আন্তরিকতার ছোঁয়া। একদিকে মিশন আশ্রমে দুর্গার মৃন্ময়ী মূর্তির আরাধনা চলছে, অন্যদিকে পুজোর দিনগুলিতে গ্রামে ঘুরে জীবন্ত মায়েদের সুস্বাস্থ্যের লক্ষে হেল্থ ক্যাম্প করছে রামকৃষ্ণ-সারদা মিশন আশ্রম। এবছর দুর্গার দুই রূপের আরাধনার অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে আশ্রম কর্তৃপক্ষ। মিশন আশ্রমে ‹মানবিক উৎকর্ষ বিকাশ প্রকল্পে একদল পথশিশু ও কিশোর-কিশোরী পড়াশোনার পাশাপাশি নাচ-গান- আবৃত্তি শেখে। এদের কারও মা পরিচারিকার কাজ করে, কারও বাবা ভ্যানচালক, কেউ আবার একেবারেই অনাথ। গত কয়েক বছর ধরে মিশনের আদর্শে অনেক বদলে গিয়েছে ওই শিশু কিশোররা। মিশনের পুজোয় এখন তারাই মূল হোতা।
এবছর মিশনের পুজো ষষ্ঠ বর্ষে পড়েছে। মহালয়ার পর থেকেই মিশনে সাজসাজ রব পুজো ঘিরে। পঞ্চমীর সন্ধ্যায় ওই কিশোর কিশোরীরাই মূর্তি এনেছে মণ্ডপে। ষষ্ঠীর সকাল থেকে তাদের ব্যস্ততা তুঙ্গে। পুজোর কয়েকদিন তারাই ভক্তিগীতি গাইবে, নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মাতিয়ে রাখবে পুজো। পুজোর দিনগুলিতে দর্শনার্থীদের ভোগ বিতরণের দায়িত্বও থাকে তাদের কাঁধে। মিশন আশ্রমের সাধারণ সম্পাদক স্বামী বিবেকাত্মানন্দ মহারাজ বলেন, ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের মধ্যে সংগঠন ও সামাজিক চেতনা তৈরি করতে এই পুজোর ভার দেওয়া হয় আশ্রমের শিশু বিকাশের পড়ুয়াদের উপর। খুবই সুচারুভাবে দীপঙ্কর কর, আরাধ্যা সামন্ত, মৌপ্রিয়া দাস, অঙ্কিতা কুমারী, স্নিগ্ধা সরকার, ঋত্বিক সিংরা এই কাজ করে। অতিথিদের আপ্যায়ন থেকে ভোগ বিতরণের কাজ সামলায় তারা। মিশনের পক্ষ থেকে এবছর দু›শো জন ভ্যান রিকশ চালক ও দরিদ্র মায়েদের নতুন শাড়ি উপহার দেওয়া হয়েছে। ওই কিশোর কিশোরীরাই সে কাজ করেছে যত্নের সঙ্গে। পুজোর সময়ে প্রতিবেশীদের উপহার দেওয়ার অভ্যেস গড়ে তোলার শিক্ষা হয় এর মাধ্যমে। পাশাপাশি এবছর থেকে পুজোর সময়ে মায়েদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে হলদিয়ার গ্রামে গ্রামে।
মিশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মিশন আশ্রমের উদ্যোগে ও হলদিয়া পেট্রকেমের অনুসারি সংস্থা অ্যাডপারমার সহযোগিতায় পঞ্চমী থেকে শুরু হয়েছে পুজো হেল্থ ক্যাম্প। বিবেকাত্মানন্দ মহারাজ বলেন, কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা প্রকল্পে ৬টি বিনা ব্যয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির হচ্ছে। ৮ অক্টোবর হলদিয়া সাহু বাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এবং ১০ অক্টোবর হলদিয়ার পানা দক্ষিণ পল্লি যুব গোষ্ঠীর ব্যবস্থাপনায় প্রায় দু› শতাধিক মানুষকে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়েছে। এদিন পানা ক্যাম্পে যান বিকেকাত্মানন্দ মহারাজ ও পেট্রকেমের জেনারেল ম্যানেজার (প্ল্যান্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) সমীরণ সরকার। এলাকায় হেল্থ ক্যাম্পে মহিলাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। ক্যাম্পে চোখ, দাঁতের চিকিৎসার পাশাপাশি জেনারেল হেল্থ চেক আপ করছেন নামী চিকিৎসকরা। রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, প্রেসার মাপা সহ একাধিক পরীক্ষা হচ্ছে ওই শিবিরে। দুঃস্থদের বিনামূল্যে ওষুধ ও চশমাও দেওয়া হচ্ছে মিশনের উদ্যোগে। পুজোর সময়ে মূলত মহিলা ও বয়স্ক ব্যক্তিদের দিকে তাকিয়েই গ্রামে এই শিবির করা হচ্ছে বলে জানান বিবেকাত্মানন্দ মহারাজ।-নিজস্ব চিত্র