নিজস্ব প্রতিনিধি, আরামবাগ: আরামবাগ শহরে পঞ্চমীর রাতে এক যুবককে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছে। পুলিস জানিয়েছে, মৃতের নাম দেবাশিস আশ (৩২)। তাঁর বাড়ি আরামবাগের শ্রীনিকেতনপল্লিতে। মঙ্গলবার রাতে আরামবাগ শহরের পুরাতন বাজার সংলগ্ন এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। ভাগ্নেকে বাঁচাতে গেলে দেবাশিসকে পিটিয়ে খুন করা হয়। ঘটনায় এক তৃণমূল নেতা সহ দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। ধৃতদের নাম হেমন্ত পাল ও অচিন্ত্য প্রতিহার। তাদের বাড়ি যথাক্রমে শহরের ২ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে। ধৃতদের মধ্যে হেমন্ত তৃণমূলের আরামবাগ শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি হিসেবে পরিচিত। শহরের প্রায় সব নেতা-নেত্রীর সঙ্গেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তার ছবি রয়েছে। ঘটনা নিয়ে পুজোর মধ্যেই রাজনৈতিক তরজাও শুরু হয়েছে।
পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাত ১০টা নাগাদ আরামবাগ শহরের পুরাতন বাজার এলাকায় দেবাশিসকে মারধর করা হয়। জখম অবস্থায় তাঁকে আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। খবর পেয়ে আরামবাগ থানার আইসি রাকেশ সিংয়ের নেতৃত্বে বিশাল পুলিস বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পাশাপাশি মৃতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে দু’জনকেই গ্রেপ্তার করে পুলিস। মৃতের ভাগ্নে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সায়ন চক্রবর্তী বলেন, ওই রাতে হেমন্ত ও অচিন্ত্য আমাকে গালিগালাজ করছিল। সেই সময় আমার মামা দেবাশিসবাবু তার প্রতিবাদ করেন। উভয় পক্ষের মধ্যে বচসা হয়। তখনই মামাকে মারধর করা হয়। পাশাপাশি ওরা আমাকেও মারে। দোষীদের শাস্তি চাই।
মৃতের জামাইবাবু সুবীর চক্রবর্তী বলেন, দেবাশিস আমার ছেলেকে আনতে গিয়েছিল। কিন্তু, তাকে এভাবে হেমন্তরা মদ খেয়ে মেরে ফেলবে ভাবতে পারিনি। ও খুব ভালো ছেলে ছিল। অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। হুগলি গ্রামীণের পুলিস সুপার কামনাশিস সেন বলেন, পুরনো কোনও বিবাদ আগে থেকেই ছিল। অভিযুক্তরা মদ খেতে খেতে নিজেদের মধ্যে বচসায় জড়িয়ে পড়ে। সায়নের সঙ্গে ঝামেলার সময় ওর মামা দেবাশিস সেখানে পৌঁছন। তাঁকে মারধর করা হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনায় দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযুক্তদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
তৃণমূলের আরামবাগ শহর সভাপতি প্রদীপ সিংহ রায় বলেন, লোকসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগেই হেমন্তকে দলের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তাছাড়া এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতি বা তৃণমূলের কোনও যোগ নেই। নিজেদের মধ্যে মদ খেয়ে গণ্ডগোলের জেরে এই ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি। পুলিস আইনি পদক্ষেপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। আমরা মৃতের পরিবারের পাশে রয়েছি।
বিজেপির আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিমান ঘোষ বলেন, বিগত দিনে হেমন্ত আমাদের কর্মী ও সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার করেছে। আমরা বারবার অভিযোগ করার পরও পুলিস শুধু ওকে সতর্ক করে ছেড়ে দেয়। সেই জন্য ওর সাহস অত্যধিক বেড়ে গিয়েছিল। এখন খুনের ঘটনা সামনে আসায় তৃণমূল দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলছে। আমরা চাই ঘটনার প্রকৃত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
যদিও এদিন আদালতে তোলার সময় সংবাদ মাধ্যমের প্রশ্নে হেমন্ত নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে। সে বলে, বিনা দোষে মিথ্যা করে আমাদের ফাঁসানো হয়েছে।
(অভিযুক্তদের আদালতে নিয়ে যাচ্ছে পুলিস। (ইনসেটে) নিহত যুবক দেবাশিস আশ। নিজস্ব চিত্র)