নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঘমুণ্ডি: ১৫ আগস্ট ভালো ব্যবসার আশা করেছিলেন পুরুলিয়ার অযোধ্যার পর্যটনশিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা। আর জি করের ঘটনা সব হিসেব ওলট পালট করে দিয়েছিল। তবে, পুজোর মুখে ভালো বুকিং হয়েছে। অনেকেই শর্ট ডেস্টিনেশন হিসেবে পুরুলিয়াকে বেছে নিয়েছেন। পর্যটনকে নিয়ে আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা।
রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে এখন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নাম পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়। পুজোর ছুটি পড়তেই অযোধ্যায় শুরু হয়েছে পর্যটকদের আনাগোনা। অযোধ্যা পাহাড়ের একটি অতিথি আবাসের মালিক তথা পুরুলিয়া ডিস্ট্রিক্ট হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহিত লাটা বলেন, পর্যটকদের অনেকেই এবার পুজো কাটাতে পুরুলিয়াকে বেছে নিয়েছেন। শুধু রাজ্য নয়, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা থেকেও পর্যটকরা আসেন। ভালো বুকিং হয়েছে।
বুধবারই বাইকে চড়ে অযোধ্যায় এসেছেন বর্ধমানের মেমারির যুবক সুব্রত মণ্ডল, হুগলির মৃন্ময় কোলে, দেবাশিস চোমর। সুব্রত বলেন, ‘আমরা গত সোমবার বর্ধমান থেকে একসঙ্গে রওনা দিয়েছি। বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর ঘুরে পুরুলিয়ার অযোধ্যায় এসে পৌঁছেছি। এর আগে শীতে অযোধ্যায় এসেছি। কিন্তু, এই শরতে অযোধ্যার রূপ একেবারে অন্যরকম। চারিদিকে সবুজের সমারোহ, আকাশে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ, কাশবন দেখে আমরা মুগ্ধ।’
পুজোয় ভালো বিক্রিবাটার আশা করতে শুরু করেছে মুখোশ গ্রাম চড়িদাও। মুখোশ শিল্পী রাজেন সূত্রধরের কথায়, ‘অন্যান্য বারের পুজোয় কলকাতার বিভিন্ন মণ্ডপ থেকে বুকিং আসে। কিন্তু এবার তা অনেকটাই কম ছিল। তবে, পর্যটকরা এসেছেন। আশা করছি, ভালোই বিক্রিবাটা হবে।’ একই বক্তব্য ভীম সূত্রধর, চাঁদ সূত্রধর, শুভদীপ সূত্রধরদের। তাঁরা বলেন, ‘পুজো থেকেই মোটামুটি আমাদের পর্যটনের মরশুম শুরু হয়ে যায়। বসন্তকাল পর্যন্ত পর্যটকদের আসা যাওয়া লেগেই থাকে। ১৫ আগস্ট ব্যবসা হয়নি। এবার আশা করছি ধীরে ধীরে ব্যবসা চাঙ্গা হবে।’
এতদিন অযোধ্যা পাহাড়ের আপার ড্যাম, লোয়ার ড্যাম, ময়ূর পাহাড়, মার্বেল লেক, মুরগুমা ড্যাম, খয়রাবেড়া ড্যাম, সুইসাইড পয়েন্ট, চড়িদার মুখোশ গ্রাম, মাঠার জঙ্গল, পাখি পাহাড়েই পর্যটকরা ভিড় জমাতেন। তবে, ফেসবুক ইউটিউবের মতো সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যে অযোধ্যার বিভিন্ন অফবিট জায়গা এখন পর্যটকদের টানতে শুরু করেছে। পিটিদিরি ঝর্ণা, ঘাঘেশ্বরী ঝর্ণা, মাছকান্দা ঝর্ণা, ঘাঘকচা ঝর্ণা, কেচা পাহাড় ভিউ পয়েন্ট সহ অজস্র অফবিট জায়গা রয়েছে অযোধ্যা পাহাড়ের আনাচে কানাচে। এখন নতুন করে সেইসব জায়গায় পৌঁছতে শুরু করেছেন পর্যটকরা। সেইসঙ্গে পর্যটকদের জন্য মেনুতেও পরিবর্তন এসেছে। তথাকথিত মেনুর বাইরে শালপাতায় মোড়া পোড়া মাংস, দেশি মুরগির ঝোলের সঙ্গে মোটা চালের ভাতই পর্যটকদের কাছে অতি প্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করেছে।