• কেশপরে পুজোর উপকরণ তৈরি করেন যাঁরা তাঁদের গ্রামেই আসেন না মা দুর্গা
    বর্তমান | ১০ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কেশপুর: গ্রামের কেউ তৈরি করছেন দুর্গা ঠাকুরের মূর্তি। কেউ ঠাকুরের পুজোর ঘট , প্রদীপ। আবার কেউ দিনরাত পরিশ্রম করে তৈরি করছেন শোলার গয়না।  তবে পুজো শুরু হলেই অন্ধকার নেমে আসে গ্রামে। পুজোর আগে ব্যস্ততা, তোড়জোড় থাকলেও পুজোর ক’টা দিন কাটে হতাশায়। কারণ এই গ্রামে হয় না দুর্গা পুজো। ছবিটা কেশপুর ব্লকের আকুলসাড়া গ্রামের। গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিলেও শেষ অবধি আর হয়নি দুর্গাপুজো। এর ফলে কয়েক কিলোমিটার দূরে গ্রামের পুজোয় অংশ নিতে হয়। তবে এবছর বিক্রি ভালো হওয়ায় খুশি শিল্পী গ্রামের মানুষ। আকুলসাড়া গ্রামে দুর্গা ঠাকুরের মূর্তি গড়েন শান্তি কর ও বুলটি কর। তাঁরা বলেন, প্রতিবছর ঠাকুর তৈরি করি। এবছরও ভালো সংখ্যক ঠাকুর তৈরি করেছি। কিন্তু নিজেদের গ্রামেই আর পুজো হয় না। তাই পুজো শুরু হলেই গ্রামের মানুষের মন খারাপ হয়। কারণ বেশিরভাগ গ্রামে পুজো উপলক্ষ্যে আলো জ্বলে ওঠে। আট থেকে আশি পুজোয় মেতে ওঠে। কিন্তু আমাদের গ্রামে এই ছবি দেখা যায় না। জানি না কবে গ্রামে মা আসবেন। 

    প্রসঙ্গত, বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো শুরুর কয়েক মাস আগে থেকেই এই গ্রামে বিশেষ তোড়জোর শুরু হয়ে যায়। সেই সময় নাওয়া খাওয়ার সময় পান না গ্রামের শিল্পীরা। গ্রামের মানুষের একাংশ পুজোর আয়োজনে থাকা মাটির হাড়ি, প্রদীপ কিংবা অন্যান্য মাটির জিনিস তৈরি করেন। যা পুজো শুরুর আগেই জেলার বিভিন্ন দশকর্মার দোকানে চলে যায়। এবছরও তাঁদের তৈরি মাটির জিনিস ভালোই বিক্রি হয়েছে। এছাড়া গ্রামের একপাশে মালাকারদের বসবাস। তাঁরা শোলা ব্যবহার করে ঠাকুরের বিভিন্ন গয়না তৈরি করেন। পুজো শুরুর কয়েকমাস আগে থেকেই তাঁরা গয়না তৈরির কাজ শুরু করে দেন। এবছরও পুজো শুরু আগেই নানা গয়না কিনেছেন ঠাকুর তৈরির কারিগররা। এছাড়া গ্রামের একাংশ মানুষ পুজোর জন্য বাজিও তৈরি করেন। তাঁদের তৈরি বাজি অনেকেই কিনতে আসেন। কিন্তু পুজো না হওয়ায় মন খারাপ গ্রামবাসীদের। 

    গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, দুর্গাপুজোর অনেক খরচ। গ্রামবাসীদের পক্ষে একসঙ্গে এত টাকা জোগাড় করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। গ্রামের এক অংশের মানুষ রাজি হলেও অপর অংশের মানুষ রাজি হয় না। সব থেকে বেশি সমস্যা গ্রামের শিশুদের। পুজোর চারটে দিন তাঁদের বাড়িতেই বেশিরভাগ সময় কাটাতে হয়। এদিন কথা হচ্ছিল গ্রামের প্রদীপ, ঘট তৈরির কারিগর শম্ভু দাস, প্রশান্ত দাসের সঙ্গে। তাঁরা বলেন, বংশ পরম্পরায় প্রায় দুশো বছরের বেশি সময় ধরে এই গ্রামে শিল্পীদের বসবাস। পুজোর জন্য যা যা লাগে, তার বেশিরভাগ গ্রামেই তৈরি হয়। কিন্তু পুজো আর হয় না। তবে আমরা আশা ছাড়ছি না। একদিনে হবে না কিন্তু একদিন হবেই।
  • Link to this news (বর্তমান)