সাগর রজক, মানিকচক: বন্যা পরিস্থিতি কাটিয়ে পুজোর আনন্দে মাতলেন ভূতনিবাসী। রাজ্য সরকারের আর্থিক সহায়তায় শেষ মুহূর্তে পুজো প্রস্তুতি শেষ করে পুজোতে মাতলেন দুর্গতরা। প্রশাসনিক সহায়তা ও উদ্যোক্তাদের তৎপরতায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে পুজো। পুজোর প্রাক্কালে জলযন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ায় খুশি ভূতনির পুজো উদ্যোক্তা এবং স্থানীয় বাসিন্দারা। সমস্ত দুর্যোগ কাটিয়ে দেবী দুর্গার আরাধনায় ব্রতী হয়েছেন ভূতনির দুগর্তরা। ভূতনিতে মোট ২২টি দুর্গা পুজো হচ্ছে। সমস্ত কমিটিকে রাজ্য সরকার পুজোর ৮৫ হাজার টাকা অনুদান দিয়েছে। ভূতনির একটি পুজো মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভার্চুয়ালি উদ্বোধনও করেন। বিষাদ ভুলে ভূতনি যেন উত্সবের মেজাজে।
অথচ কিছুদিন আগেই ভূতনির পরিস্থিতি ছিল অন্যরকম। প্রথম ধাপের বন্যা পরিস্থিতি কাটতে না কাটতেই ফের জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল ভূতনির বহু এলাকা। বন্যা পরিস্থিতির কারণে প্রায় দু’মাস জলমগ্ন ছিল তিনটি অঞ্চল। উত্তর ও দক্ষিণ চণ্ডীপুর এবং হীরানন্দপুরের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পড়েছিলেন চরম দুর্দশার সম্মুখীন। প্রাণ বাঁচাতে ঘরের ছাদে বা ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন দুর্গতরা। বন্যার জলে শুধু সাধারণ মানুষই নয়, তাঁদের সঙ্গে বানভাসি হয়েছিলেন মা দুর্গাও। নদীর জলে ডুবে ছিল ভূতনির সমস্ত দুর্গা মণ্ডপ। পুজো নিয়ে চিন্তার ভাঁজ দেখা দিয়েছিল সমস্ত পুজো উদ্যোক্তাদের। কোথায় এবং কীভাবে পুজো হবে তা নিয়ে শুরু হয়েছিল দুশ্চিন্তা। কেউ বাঁধের উপর, কেউ আবার স্কুলের ত্রাণ শিবিরের ছাদে, নয়তো জলের মধ্যেই পুজো করবেন বলে মনস্থির করেছিলেন উদ্যোক্তারা।
তবে পুজোর আগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে অনেকেই আশাবাদী ছিলেন। সেই আশাই বাস্তবায়িত হয়েছে ঘরে মা আসার আগে। গত পাঁচ দিন ধরে প্রতিনিয়ত নামছে গঙ্গার জলস্তর। কমেছে ফুলহার ও কোশী নদীর জলও। এলাকায় জমে থাকা জল কয়েকটি গ্রাম ছাড়া নেই বললেই চলে। তবে হীরানন্দপুরের বেশকিছু পুজো মণ্ডপের সামনে জল জমে থাকায় সমস্যার সম্মুখীন পড়েছিলেন উদ্যোক্তারা। ব্লক প্রশাসনের সহায়তায় পাম্পের সাহায্যে সেই জল বের করা হয়। সেই জল এলাকা থেকে নামতেই জোর কদমে পুজো প্রস্তুতিতে নেমেছিলেন পুজো উদ্যোক্তারা। সেই প্রস্তুতি শেষ করে ষষ্ঠীর পুজোয় মেতেছেন ভূতনিবাসী। আমতলা নন্দীটোলা সামগ্রিক দুর্গোৎসব কমিটির সদস্য রাজেশ মণ্ডল বলেন, প্রথম বন্যার জল কমতেই আমরা পুজো প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম। কিন্তু দ্বিতীয় বন্যায় আমরা প্রস্তুতি বন্ধ করতে বাধ্য হই। দুর্গার প্রতিমা থেকে মণ্ডপ সমস্ত কিছুই জলে ডুবে ছিল। বর্তমানে পরিস্থিতির স্বাভাবিক। নতুন করে প্রতিমা বানিয়ে মণ্ডপসজ্জা করা হয়েছে। আগের বছরগুলির মতো জাঁকজমক করে না হলেও মায়ের আরাধনা হচ্ছে।
ঠিক একই অবস্থা দুর্গা রামতলা সর্বজনীন কমিটির পুজোয়। এই কমিটির সম্পাদক মনোরঞ্জন চৌধুরী বলেন, পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হতেই আমরা জোর তৎপরতার সঙ্গে পুজো প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম। এই প্রস্তুতিতে প্রশাসন আমাদের সহায়তা করেছে। এবার কোনও চাঁদা তুলে নয়, রাজ্য সরকারের দেওয়া পুজোর অনুদানেই হচ্ছে মা দুর্গার পুজো।
মানিকচকের বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র বলেন, ভূতনিতে বন্যা পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে। বেশকিছু জায়গার জমা জল পাম্পের সাহায্যে বের করে দেওয়া হয়েছে। পুজো সুষ্ঠুভাবে করতে সমস্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে।
(ভূতনির হীরানন্দপুর প্রগতি সঙ্ঘের প্রতিমা। - নিজস্ব চিত্র। )