প্রথম চার্জশিটে স্পষ্ট, কীভাবে খুন হলেন ‘অভয়া’? রাজনীতি খুঁজতে গিয়ে ফোকাস থেকেই সরে গিয়েছে সিবিআই!
বর্তমান | ১০ অক্টোবর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: অভয়ার ধর্ষণ-খুনের নেপথ্যে কী? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ও দ্রুত বিচারের দাবিতে শুরু হয়েছিল আন্দোলন। তদম্তভার দেওয়া হয়েছিল সিবিআইয়ের কাঁধে। এখন সেই আন্দোলনের অভিমুখ বদলেছে। আর সেইসঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা দিল্লি থেকে ৪৮ জনের টিম নিয়ে এসে কী করল? কলকাতা পুলিসের প্রাথমিক তদন্তে যা যা উঠে এসেছিল, ৫৫ দিন পর জমা দেওয়া চার্জশিটে সেই তথ্য ও শব্দই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পেশ করেছে সিবিআই। সঞ্জয়কেই খুনি-ধর্ষক চিহ্নিত করে আদালতের সামনে খাড়া করেছে তারা। যে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব প্রথম থেকে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী অফিসাররা খোঁজার কাজ শুরু করেছিলেন, সে ব্যাপারে একটি বাক্যও খরচ করা হয়নি। চার্জশিটে শুধু বলা হয়েছে, এখনও পর্যন্ত তদন্তে যা পাওয়া গিয়েছে।
যা পাওয়া গিয়েছে, সেটা তো মাত্র ২৪ ঘণ্টায় কলকাতা পুলিস পেয়েছিল! তাহলে সিবিআই কী করল? তথ্যভিজ্ঞ মহল ও রাজ্যের শাসক দলের একাংশ সাফ অভিযোগ করেছে, খুন নয় বরং ঘটনার পরের খুঁটিনাটি খুঁজতেই ৫৫ দিন কাটিয়ে ফেলেছে সিবিআই। বিভিন্ন মাধ্যমে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুন নিয়ে যে ‘থ্রিলার স্টোরি’ পরিবেশিত হয়েছে, তাও যে কল্পনাপ্রসূত, চার্জশিটে তার প্রমাণ রয়েছে। ওই থ্রিলার স্টোরি ঘিরেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল বাংলার রাজনৈতিক বাতাবরণ। আকাশকুসুম কল্পনাকে সামনে রেখে নিজেদের এজেন্ডাও সাজিয়ে ফেলেছিল রাম-বাম এবং অতিবাম পক্ষ। রাজ্য সরকার ও কলকাতা পুলিসকে কতভাবে অপদস্থ করা যায় রাজনীতির সেই খেলা চলেছে দুমাস ধরে। আর সেই সঙ্গে চাপা পড়ে গিয়েছে মূল ঘটনা এবং কীভাবে সেই অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তার কারণ। তাই প্রশ্ন উঠেছে এর পিছনে শুধুই রাজনীতি নেই তো? এখন চার্জশিট প্রকাশ্যে আসায়, মোহভঙ্গ হওয়া প্রতিবাদী ও আন্দোলনকারীরা সিবিআইকে দুষতে শুরু করেছে।
সিবিআইয়ের জমা পড়া চার্জশিটে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১০৩ (১) (খুন). ৬৬ ( ধর্ষণের সময় বারবার জোরালো আঘাতের কারণে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়া) ও ৬৪ (ধর্ষণ) এই তিনটি ধারার উল্লেখ রয়েছে। ধর্ষণের ধারায় মামলা শক্তপোক্ত করতে সমস্ত তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করে দিয়েছিল লালবাজার। সমস্ত নমুনা ও তার রিপোর্ট তুলে দিয়েছিল তারা। এজেন্সি কেবল কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক দপ্তর থেকে সেগুলি যাচাই করেছে। “রসগোল্লা” সাজিয়ে প্লেটে তুলে দেওয়ায় মাথা ঘামাতে হয়নি দিল্লি থেকে আসা সিবিআইয়ের অফিসারদের। খুনের তদন্তের কাজ অনেকটাই করে দিয়েছিল কলকাতা পুলিস। তারপরেও গোটা চার্জশিটে সিবিআই স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা দিতে পারেনি কীভাবে সঞ্জয় অভয়াকে খুন করল। এই অপরাধ করার জন্য অভিযুক্ত সিভিক কী পরিকল্পনায় কাজ করেছিল সেটিও তুলে ধরতে ব্যর্থ এজেন্সি। ধর্ষণ ও খুন যে একইসঙ্গে সংঘটিত হয়েছে সেটিও চার্জশিটে স্পষ্ট করে তুলে ধরতে পারেনি। কোথাও যেন খেই হারিয়ে গিয়েছে তাদের সমস্ত লেখা। আইনজীবী মহলের ব্যাখ্যা এজেন্সির জমা পড়া চার্জশিটে ভাষার ব্যবহার ঠিকমতো করা হয়নি। আইনি ব্যাখ্যাও তারা সঠিকভাবে তুলে আনতে পারেনি এই চার্জশিটে। আইনজীবীদের একটা বড় অংশই বলছেনল ধর্ষণও খুনের মতো বড় ঘটনায় এত দুর্বল চার্জশিট তাঁরা আগে দেখেননি।