• চোখের জল ফেলা বামপন্থী ডাক্তার নেতারাই অন্যায় বদলিতে কাঁদিয়েছেন চিকিৎসকদের!
    বর্তমান | ১০ অক্টোবর ২০২৪
  • বিশ্বজিৎ দাস, কলকাতা: আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ, ধর্মতলার অনশনমঞ্চ এখন জুনিয়র ডাক্তার আন্দোলনের ভরকেন্দ্র। এইসব জায়গা থেকেই রাজ্য স্বাস্থ্যপ্রশাসনের দুর্নীতি উপড়ে ফেলার উঠছে দাবি। এইসব দাবিতে জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে হাঁটছেন সিপিএমপন্থী ডাক্তার সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স-এর (এএইচএসডি) নেতারাও। তাঁরা ধর্নামঞ্চ ও অনশনমঞ্চেও গিয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তো আছেনই। কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধেই যে দিস্তে দিস্তে অভিযোগ ছিল বাম জমানায়! যাঁরা আজ অনশনমঞ্চে চোখের জল ফেলছেন, স্বচ্ছ প্রশাসনের দাবিতে গলা ফাটাচ্ছেন, অভিযোগ, সেইসব সিনিয়র ডাক্তারদের একাংশই বাম জমানায় এএইচএসডি’র হয়ে রাজ্যজুড়ে চালাতেন শাস্তিমূলক বদলির র‌্যাকেট। অভিযোগ, উপ সহকারী স্বাস্থ্য অধিকর্তা পদে থাকা জনৈক ‘মণ্ডলদা’ এবং সহকারী স্বাস্থ্য অধিকর্তা (পার্সোনাল) পদে থাকা জনৈক ‘মুখার্জিদা’ ছিলেন এএইচএসডি’র নেতৃত্বে চলা ট্রান্সফার প্রোমোশন চক্রের দুই মাথা। অন্যায় বদলিতে কত চিকিৎসক ও তাঁর পরিবারের সদস্য঩দের ক্ষোভ ও কান্নার যে তাঁরা কারণ, ইয়ত্তা নেই। যাঁরা আজ সততার শেষ কথা বলে দুর্নীতিমুক্ত স্বাস্থ্যদপ্তরের দাবি তুলছেন, তেমন কয়েকজন আবার বাম জমানায় ২০০৩-০৪ সালে আর জি কর’এ জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি ভেঙে ফেলে সরকারের মুখ বাঁচানোর চেষ্টার কসুর করেননি। 

    রাজ্যের একাধিক সিনিয়র স্বাস্থ্য প্রশাসক বললেন, রাইটার্স এবং পরে স্বাস্থ্যভবনে ‘মণ্ডলদা’র ঘর এবং আর জি কর’এর অ্যাকাডেমিক বিল্ডিং-এর একতলার ক্যান্টিন। এই দুই জায়গায় হতো ‘পুতুলনাচের খেলা’। তাঁরা ‘শ্রেণিশত্রুদের’ বারবার উত্তরবঙ্গের মালদহ, দুই দিনাজপুর, দার্জিলিং-এ বদলি করতেন হাসিমুখে। আর জি কর-এর ক্যান্টিনে শীর্ষ বাম চিকিৎসক নেতাদের কাছে বদলির তদ্বির করতে ‘দশর্নার্থীদের’ ভিড় লেগে থাকত রোজ।

    ‘থ্রেট সিন্ডিকেট’ নিয়ে গণমাধ্যম ও সোস্যাল মিডিয়ায় গলা ফাটাচ্ছেন বহু বামপন্থী চিকিৎসক নেতা। অংশ নিচ্ছেন প্যানেল ডিসকাশনেও। সেইসব নেতা এবং তাদের সাঙ্গোপাঙ্গোদের বিরুদ্ধেই যে বদলির সিন্ডিকেট চালানোর ভুঁড়ি ভুঁড়ি অভিযোগ ছিল বাম জমানাতে। 

    সালটা ২০০৫। হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালে এএইচএসডি’র এক প্রভাবশালী নেতা তথা শিশু চিকিৎসককে বাঘাযতীন হাসপাতালে বদলির নির্দেশ জারি হয়। কার্যকর হয়নি। ২০০৬ সালে স্বাস্থ্যভবন নির্দেশ জারি করে। তাতেও হয়নি। সেবছরই পূর্ব মেদিনীপুরের সিএমওএইচ নির্দেশ দেন। এরপর অভিযুক্ত স্যাটে চলে যান। স্যাট ২০০৭ পর্যন্ত বদলি স্থগিত করতে বলে। কিন্তু ২০০৭-এর পরও দীর্ঘদিন বদলি কার্যকর হয়নি। 

    ২০০৮ সাল। পিজি হাসপাতালে  এসএফআই সমর্থকদের হেনস্তার শিকার হয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালের দ্বারস্থ হন দীপজ্যোতি চৌধুরি নামে এক এমবিবিএস পড়ুয়া। শুধু তিনিই নন, তাঁর বান্ধবীকে এসএফআইয়ের কুরুচিকর আক্রমণের মুখে পড়তে হয় বলে অভিযোগ। সেই এসএফআই, যাঁরা কথায় কথায় রাজ্যে মহিলারা আক্রান্ত, পীড়িত বলে সোচ্চার হচ্ছে! এসএফআই-এর সর্বভারতীয় যুগ্ম সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য বলেন, কেউ কেউ এও বলেন, বামপন্থীরা নাকি বিশ্বযুদ্ধও লাগিয়েছিলেন! আর আগে হয়েছে বলে এখনকার অপরাধ লঘু হয় না। বামপন্থী চিকিৎসক সংগঠন এএইচএসডি’র রাজ্য সম্পাদক ডাঃ উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রথমত, আমাদের সংগঠন কোনও রাজনৈতিক দলের নয়। নিরপেক্ষ সংগঠন। দ্বিতীয় যদি এতই অভিযোগ থাকে, তাহলে চিকিৎসকরা প্রমাণসহ স্বাস্থ্যদপ্তরে জমা দিতেই তো পারেন। সরকার তদন্ত করুক।
  • Link to this news (বর্তমান)