• চিকিৎসকদের ‘গণ ইস্তফা’র ধুম, নিয়মই মানা হয়নি, বলছেন স্বাস্থ্যকর্তারা  
    বর্তমান | ১০ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: অনশনকারী চিকিৎসকদের দাবির সমর্থনে রাজ্যজুড়ে চলছে ‘ইস্তফা-পর্ব’! রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে স্বাস্থ্য অধিকর্তা (শিক্ষা)-কে লেখা নির্দিষ্ট বয়ানের একটি চিঠিতে পরপর সই করে সবাই বেরিয়ে আসছেন আর হাততালি পড়ছে। টিভিতে সম্প্রচার চলছে। বুধবার রাত পর্যন্ত এই ‘গণ-ইস্তফা’য় শামিল হয়েছেন প্রায় ৫০০ সরকারি চিকিৎসক। যদিও স্বাস্থ্যদপ্তরের আধিকারিকরা বলছেন, এগুলির একটিও ইস্তফাই নয়। গণ-ইস্তফা দিলেন বলে যাঁরা সই-সাবুদ করছেন, টিভিতে বক্তব্য রাখছেন, তাঁরা নিজেরাও জানেন, এটা ইস্তফা নয়। অভয়া-কাণ্ডে ধৃত আর জি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ডাঃ সন্দীপ ঘোষও ঘটনার পর বলেছিলেন, ‘আমি ইস্তফা দিলাম। স্বাস্থ্যভবনে ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দিচ্ছি।’ তখন সরকারি সিনিয়র ডাক্তাররাই প্রতিবাদ করে জানিয়েছিলেন, এভাবে সরকারি চাকরি থেকে ইস্তফা দেওয়া যায় না। ইস্তফা দেওয়ার নিয়ম আছে। 

    স্বাস্থ্যকর্তারা জানান, দু’ধরনের ইস্তফা হয়। একটি হল স্বেচ্ছাবসর বা ভলান্টারি রিটায়ারমেন্ট। এর জন্য আবেদন ২০ বছর টানা চাকরি এবং ৫০ বছর বয়স হলে তবেই করা যায়। সেক্ষেত্রেও সরকার মান্যতা দিলে তবেই মিলতে পারে স্বেচ্ছাবসরের সুযোগ। তাঁর চাকরিগত সুযোগ-সুবিধা (গ্র্যাচুইটি, পেনশন এবং স্বাস্থ্যবিমা) এক্ষেত্রে অক্ষুণ্ণ থাকবে। দ্বিতীয় পদ্ধতিটি হল রেজিগনেশন বা ইস্তফা। এক্ষেত্রে সরকারি আবেদনপত্র আছে। স্বাস্থ্যদপ্তরের প্রধান সচিবকে উদ্দেশ করে শিক্ষক-চিকিৎসককে সেই আবেদন করতে হবে। সেই আবেদন ‘ফরোয়ার্ডিং’ করা আবশ্যিক। মানে আবেদন হতে হবে ‘থ্রু প্রপার চ্যানেল’। তা জমা পড়বে কোনও মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ বা উপাধ্যক্ষের কাছে। এক্ষেত্রে প্রত্যেককে আলাদাভাবে আবেদন করতে হবে। প্রতিটি আবেদন সরকারিভাবে লিপিবদ্ধ হবে। অধ্যক্ষ বা উপাধ্যক্ষ মনে করলে সেই চিঠির উপরে মন্তব্য সমেত ‘ফরোয়ার্ডিং’ করতে পারেন বা নাও পারেন। ‘ফরোয়ার্ডিং’ করলে সেই চিঠি যাবে প্রধান সচিবের কাছে। তিনি মঞ্জুর করলে তখন গৃহীত হবে ইস্তফার আবেদন। স্বাস্থ্যদপ্তরের ওয়েবসাইটে সেই ইস্তফা সংক্রান্ত নির্দেশও জারি হবে। গোটা প্রক্রিয়ায় কমপক্ষে এক মাস সময় লাগে। এক্ষেত্রে চাকরি সংক্রান্ত কোনও সরকারি সুযোগ-সুবিধা মিলবে না। এদিকে, বুধবার সন্ধ্যায় মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ জুনিয়র ডাক্তারদের স্বাস্থ্যভবনে বৈঠকে আহ্বান জানান। বৈঠকের পর মুখ্যসচিব জানান, এর আগের বৈঠক ও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের প্রেক্ষিতে সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন তুলে নেওয়ার আবেদনও করেন মুখ্যসচিব। রাত প্রায় সাড়ে বারোটা নাগাদ সেই বৈঠক শেষ হয়। স্বাস্থ্যভবন থেকে আন্দোলনরত চিকিত্সকরা বেরিয়ে এসে জানান, বৈঠক নিষ্ফলা হয়েছে। এদিন শহরের বিভিন্ন পুজোয় জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি সম্পর্কে সচেতনতা প্রচারে ‘অভয়া পরিক্রমা’র আয়োজন করেছিলেন ডাক্তাররা। দক্ষিণ কলকাতার ত্রিধারার সামনে নাগরিকদের পরিক্রমা মিছিল আটকে দেওয়া হয়। পুলিস সূত্রে খবর, ঘটনায় ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

     
  • Link to this news (বর্তমান)