নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কখনও রোদ, আবার কখনও আকাশ কালো করে ডেকে উঠল মেঘ। ষষ্ঠীর সকালটা ছিল এমনই দোলাচলের। তবে সেটা শুধু আকাশের জন্যই বরাদ্দ। বঙ্গবাসীর মনে কোনও টানাপোড়েন ছিল না। কারণ, দেবীর বোধন হয়ে গিয়েছে। আর ভাবনার অবকাশ নেই। যেভাবে হোক উত্তর থেকে দক্ষিণ ঠাকুর দেখে ফেলতেই হবে। যত দ্রুত সম্ভব। এমন সময় কান ফাটা বাজের আওয়াজে কেঁপে উঠল গড়িয়াহাট। কয়েক সেকেন্ডের জন্য থতমত হয়ে গেলেন সকলে। পরক্ষণেই ভেঁপু বাজিয়ে ‘বল দুগ্গা মাই কি...’ বলতে বলতে এগিয়ে গেলেন দর্শনার্থীরা। উত্তর থেকে দক্ষিণের ভিড় দেখে বলতেই হল, বোধনেই পুজো মধ্যগগনে।
তবে এখনও পর্যন্ত দক্ষিণের তুলনায় পুজোর ক্রেজ ধরে রেখেছে উত্তরই। দর্শনার্থীরাই সেকথা বলছেন। পঞ্চমী রাতে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার দেখে আসা বিক্রম রায় দক্ষিণের ত্রিধারায় এসে যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। বলছিলেন, ‘ভেবেছিলাম ত্রিধারাতে গা গলানোর জায়গা থাকবে না। এসে দেখছি, ভিড় ভালোই রয়েছে। কিন্তু কষ্ট হচ্ছে না।’ ত্রিধারা থেকেই মানুষের ঢল কার্যত গড়িয়ে চলে যাচ্ছে বালিগঞ্জ কালচারালে। একডালিয়ার সামনে এদিন দেখা গেল, পুলিসের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিকের কাছে দক্ষিণের ম্যাপ বুঝে নিচ্ছে একদল তরুণ। আর সেই আধিকারিকও নিজের ছেলের মতো তাঁদের বুঝিয়ে দিচ্ছেন। দক্ষিণের অন্যতম আকর্ষণ ম্যাডক্স স্কোয়ার। সেখানে গেলেই দেখা হয়ে যায় স্কুল-কলেজের বন্ধুদের সঙ্গে। মণ্ডপের ভিতরে তরুণ-তরুণীরা বসে গল্পে মেতেছেন। ভিড়ের স্রোতে আর মোবাইল ম্যাপের ঠিকানা মেলানো যাচ্ছে না। তাই মাইকের গান আর সানাইয়ের আওয়াজ শুনতে শুনতেই হঠাত্ চোখের সামনে ফুটে উঠছে দেশপ্রিয় পার্ক কিংবা একডালিয়া। ঢাকের আওয়াজ-গানের সুরের মাঝেই কানে আসে, ‘ও মা একটা আইসক্রিম কিনে দাও না!’ আবার গম্ভীর উত্তর, ‘এখনই তো খেলি একটা’। কান্না জড়ানো সুরে মিলিয়ে যায় কচি গলা... ‘সে তো অনেক সকালে।’
ঠাকুর দেখতে দেখতে হঠাত্ গভীর রাতে খিদে পায়। রাত ১২টায় বাগবাজারে এগ রোল পেতেই কালঘাম ছুটল কাকলিদের। বন্ধুরা মিলে বলছেন, ‘এখানে আসার সময় দেখলাম এগ রোল আর বিরিয়ানির গন্ধ বেরচ্ছে। এখন আর রাস্তাটা খুঁজে পাচ্ছি না। কী যে করি!’ কী আর করা যাবে! দুপুরেই গড়িয়াহাটের একটি রেস্তরাঁর বাইরে দেখা গেল ফুটপাতে চেয়ার পেতে অপেক্ষারত ক্ষুধার্ত দর্শনার্থীরা। খিদে পাবে নাই বা কেন? পরিশ্রম তো কম নয়। উল্টোডাঙায় নেমে অটো নেই। তাই ভিড় বাসে উঠেই উল্টোডাঙা সংগ্রামী, করবাগান, তেলেঙ্গাবাগান দেখে হাতিবাগানমুখী হচ্ছেন। হাতিবাগান নবীন পল্লি, নলিন সরকার স্ট্রিট, হাতিবাগান সর্বজনীন, কাশী বোস লেন, সিকদার বাগানেই তিল ধারনের জায়গা নেই। অন্যদিকে উত্তরের তাক লাগানোর মত ভিড় টানছে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের অভিনব মণ্ডপ। ভোর থেকেই সেখানে কার্যত জনপ্লাবন। আর মাত্র ক’টা দিন। ফের সেই একই দিনযাপন।