• দেবী দুর্গার আশীর্বাদেই ধনেখালির দেধারা গ্রাম হয়েছিল শস্য-শ্যামলা
    বর্তমান | ১০ অক্টোবর ২০২৪
  • অমিত চৌধুরী, তারকেশ্বর: ধনেখালি থানা এলাকার দশঘড়া পঞ্চায়েতের দেধারা গ্রামের দে পরিবার স্বপ্নাদেশ পেয়ে দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেছিল। সকলের বিশ্বাস ছিল, মায়ের আশীর্বাদেই গ্রাম হয়েছিল শস্য-শ্যামলা। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রত্যন্ত গ্রাম হয়েছে আধুনিক। 

    ৭৯ বছরে পদার্পণ করেছে দে পরিবারের এই পুজো। শান্তিময়ী দেবী যে স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন, তার ভিত্তিতেই বাড়িতে মা দুর্গাকে প্রতিষ্ঠিত করেন তাঁর স্বামী নিতাইচরণ দে। বাড়ির কয়েকশো মিটার দূর দিয়ে বয়ে গিয়েছে কানা নদী। সেই সময় গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল না। মহালয়া শোনার জন্য কেনা হয়েছিল ব্যাটারিচালিত রেডিও। সেই ব্যাটারি চার্জ দেওয়ার জন্য নিয়ে যেতে হতো শ্রীরামপুরে। নিতাইবাবু ছিলেন আধুনিক মনোভাবাপন্ন। এত দূরে ব্যাটারি চার্জ দিতে যাওয়া সম্ভব নয়। তারপর বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে জেনারেটর বসানোর সিদ্ধান্ত নেন। ওই জেনারেটর দিয়ে কি শুধুই রেডিও চলবে? নিতাইবাবু ঠিক করেন, ওই জেনারেটর দিয়েই গ্রামে বিদ্যুতের আলোর প্রচলন হয়। সেই সময় গ্রামের কৃষকদের ধান ভাঙা, তেল বার করা এবং চাষের জলের সমস্যা ছিল। ওই জেনারেটরের মাধ্যমেই চলতে থাকে সব কাজ। শুধু নিজেদের জমিতে চাষ নয়, গ্রামের অন্যান্য কৃষকের জমিতেও সরবরাহ করা ওই জল। তার জন্য অবশ্য কোনও টাকা তিনি নিতেন না গ্রামবাসীদের কাছ থেকে।

    কানা নদী থেকে পাম্পের মাধ্যমে সেচের কাজ, ট্রাক্টরের ব্যবহার শুরু হতেই দেধারা গ্রামে চাষের উন্নতি হল। প্রত্যন্ত গ্রামে কীভাবে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ চলছে, তা দেখতে এখানে এসেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল সেন। গ্রামের কৃষি ও আর্থিক উন্নতির পরিকাঠামো দেখতে এসেছিল বিদেশি প্রতিনিধিদলও। গ্রামের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজন শিক্ষার। নিতাইবাবু নিজেই জমি দিয়ে তৈরি করেছিলেন প্রাথমিক ও হাইস্কুল। তৈরি হয় একাধিক পিচ রাস্তা। গ্রামবাসীদের কথা ভেবে দুর্গা দালানের পাশে তৈরি হয় ডাকঘর। সেই সময় এই দেধারা গোটা রাজ্যের কাছে হয়ে উঠেছিল মডেল গ্রাম।

    গ্রামের লোকসংখ্যা তখন কমই ছিল। হিন্দু-মুসলিম সকলে মিলে দে পরিবারের দুর্গাপুজোয় অংশগ্রহণ নিতেন। এই গ্রামের বেশিরভাগ মানুষের বিশ্বাস, দেবী দুর্গা অধিষ্ঠান করছেন এই গ্রামে। সেকারণেই প্রত্যন্ত গ্রাম শস্য-শ্যামলা হয়ে উঠেছে। পরিবারের সদস্য দুর্গাপদ, পতিতপাবন দে সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বলেন, স্বপ্নাদেশে পাওয়া দুর্গা প্রতিমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই পরিবারে। রীতি মেনে রাধাষ্টমীতে দেবী মূর্তিতে মাটি দেওয়া শুরু হয়। দেবীর আশীর্বাদে গ্রামে ভালো চাষ হতো। সেই চাহিদা পূরণ করতে ধীরে ধীরে হিমঘর তৈরি হয়। বলি প্রথা নেই। লুচি, সুজি, নারকেল নাড়ু সহ বিভিন্ন রকম মিষ্টান্ন ভোগে দেওয়া হয়। জাগ্রত এই দেবীকে বিশ্বাস করেন গ্রামের সকলে। দশমীতে বিসর্জন দেওয়া হয়। ধনেখালি এলাকার পাশাপাশি এই গ্রামের সকলের বিশ্বাস, দেধারা গ্রামের ‘এই বাড়িতে মা রয়েছেন’। তাই গ্রামের ও এই পরিবারের কখনও ক্ষতি হবে না।
  • Link to this news (বর্তমান)