নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: পুজোয় মিষ্টিমুখ করাতে হরেক মিষ্টান্নের অঢেল আয়োজন দোকানে দোকানে। তারই মধ্যে কোথাও কোথাও মিলছে বিশেষ কিছু মিষ্টি। চন্দ্রপুলি বা দরবেশের সঙ্গে রেকাব সেজে উঠছে সপ্তপদী বা কুমকুমের মতো মিষ্টিতে।
পুজোয় নারকেল আবহামানকাল ধরেই বাঙালির পছন্দের তালিকায় থাকে। সেই নারকেল দিয়েই অভিনব মিষ্টি এনেছে কে সি দাশ। নারকেল ছাপা বা চন্দ্রপুলির সঙ্গেই থাকছে নারকেল কদম্ব। ক্ষীরকদম্বে যেভাবে ছানার মিষ্টির উপর ক্ষীরের আবরণ থাকে, সেভাবেই ক্ষীরের বদলে নারকেলের আস্তরণ থাকবে এই মিষ্টিতে। কে সি দাশের স্পেশাল ডাব সন্দেশ, গন্ধরাজ সন্দেশের সঙ্গেই থাকছে ছানার মিষ্টি ‘ত্রিনয়নী’। রসগোল্লাতেও ব্ল্যাক কারেন্ট, গন্ধরাজ, আনারসের স্বাদ পাবেন ক্রেতারা। এবার পুজোয় মিষ্টির পাশাপাশি থাকছে মোজারোলা চিজ আর সয়াবিন দিয়ে তৈরি মুখোরোচক নোনতা ‘ব্রেড এনভেলপ’। নতুন প্রজন্মের কাছে এটি আকর্ষণীয় হবে, মনে করছেন এখানকার কর্তা ও মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীদের সংগঠন মিষ্টি উদ্যোগ-এর কর্ণধার ধীমান দাশ।
নামজাদা মিষ্টান্ন প্রতিষ্ঠান মিঠাই এবারও এনেছে জনপ্রিয় বেকড মিহিদানা। সঙ্গে বেকড সন্দেশ। চিনির ভাগ কম থাকায় ক্রেতারা এগুলি অত্যন্ত পছন্দ করেন, দাবি করেছেন এখানকার কর্ণধার ও মিষ্টি উদ্যোগের সাধারণ সম্পাদক নীলাঞ্জন ঘোষ। তাঁর কথায়, কুমকুম নামে যে সন্দেশটি তাঁরা বিক্রি করেন, সেটি রসকদম্বের একটি স্পেশাল সংস্করণ, যেখানে রসের মিষ্টি সামান্য শুকিয়ে, তার সঙ্গে ভ্যানিলার রসায়ন তৈরি হয়। নবমী থেকে এখানে থাকবে স্পেশাল খাজা। থাকবে ছোট থেকে বড় আকারের শারদ শুভেচ্ছা সন্দেশও।
কলকাতার চারুমার্কেট এবং হাওড়া মিলিয়ে মোট সাতটি দোকানে কিছু বিশেষ মিষ্টির সম্ভার থাকছে দেশপ্রিয় সুইটসে। এখানকার ডিরেক্টর ও মিষ্টি উদ্যোগের সদস্য সমীর ঘোষের কথায়, তাঁদের দোকানগুলিতে অত্যন্ত জনপ্রিয় মালাই পাতুরি। ছানার মিষ্টির উপর মালাইয়ের আস্তরণ। তার উপর বাটারস্কচের দানা। থাকছে বেকড চমচম, ম্যাঙ্গো চমচম। সবগুলির দাম ২০ টাকা। পুজোয় কেশরভোগ এবং দরবেশের চাহিদাও যথেষ্ট ভালো থাকে, জানিয়েছেন সমীরবাবু। তিনি জানিয়েছেন, শীতের আগেই এই পুজোয় তাঁরা হাজির করছেন নতুন গুড়ের রসগোল্লা। ক্রেতারা তার কদর করবেন, আশা তাঁর। মিষ্টি উদ্যোগের অন্যতম সদস্য কোন্নগরের কালীমাতা সুইটসে পুজোয় থাকবে স্বাদ বদলের বেকড রসগোল্লা আর বেকড কালাকাঁদ। সঙ্গে থাকবে স্পেশাল মালাই চমচম আর রসমাধুরী। দাম ১২ থেকে ১৫ টাকার মধ্যে। এখানে সারাবছরই নিমকির চাহিদা থাকে। পুজোতেও তার অঢেল আয়োজন। দাম কিলো প্রতি ২০০ টাকা। এখানকার কর্ণধার স্বরূপ দত্তের স্বীকারোক্তি, যেভাবে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছে, তাই গুণমান ধরে রাখতে নিমকির দাম সামান্য বাড়াতে বাধ্য হয়েছি। রিষড়ার ফেলু মোদকে এবার পুজোয় একেবারে অভিনব মিষ্টি ‘সপ্তপদী’। ছানার মিষ্টিতে মেশানো হয়েছে জায়ফল, কাজু, কিশমিশ, এলাচ, রাবড়ি ও খোওয়া ক্ষীর। এছাড়াও থাকছে স্পেশাল স্যান্ডউইচ মালাই, মালাই চমচম, কেশর মালাই রাবড়ি। এখানকার কর্তা অমিতাভ দে’র কথায়, পুজো মানেই বাঙালির ঐতিহ্যের মিষ্টি ক্ষীরকদম, দরবেশ, লবঙ্গলতিকা বা গজা। পুজোর ক’দিন হরেক সন্দেশের পাশাপাশি এসবও থাকবে রেকাবে। গার্ডেনরিচ এলাকার ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান সতীশ ময়রা’য় পুজোয় বিক্রি হবে কয়েক কুইন্টাল মিহিদানা ও গজা। তার প্রথমিক প্রস্তুতির পাশাপাশি নানান সন্দেশের আয়োজন থাকছে, জানিয়েছেন এখানকার কর্ণধার অরূপকুমার দাস। তাঁর কথায়, কম দামে উৎকৃষ্ট মিষ্টি আমরা এবারও পুজোয় ক্রেতাদের হাতে তুলে দিতে চাই।