বিশ্বজিৎ মাইতি, বরানগর : ভীষ্মের শরশয্যা থেকে চক্রব্যুহ। সবুজের কলতানের পাশাপাশি মাটির টান। কিংবা জমিদার বাড়ি। হরেক থিমে সাজছে কামারহাটি পুরসভা এলাকার বিভিন্ন পুজো মণ্ডপ।
বেলঘরিয়া মানস বাগ সর্বজনীন দুর্গোৎসব এবার ৭৭ বছরে পা দিয়েছে। তাদের থিম ‘সম্ভবামি যুগে যুগে’। মহাভারতের সময় থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত বাঙ্ময় হয়েছে মণ্ডপ নির্মাণের ছত্রেছত্রে। প্রতিটি যুগে ধর্মসঙ্কট ও ভগবানের আবির্ভাব প্রতীকী রূপে তুলে ধরা হয়েছে। একটি বিশাল গ্লোবের উপর রয়েছেন জগজ্জননী। শিল্পীর হাতের গুণে ভীষ্মের শরশয্যার ছবি মণ্ডপে প্রায় জীবন্ত হয়ে উঠেছে। ভেষজ রং, মাটি, ফেলে দেওয়া লোহা, সাইকেলের রিং, সিট, বাইকের চেন, রিং টায়ার, গিয়ার, প্লাইউড, পাটকাঠি ও চট দিয়ে তৈরি মণ্ডপ। পুজোর মুখ্য সংগঠক অভিজিৎ চাকলাদার বলেন, ‘বর্তমানে যুদ্ধবিধ্বস্ত বিশ্ব ও সমাজের সামগ্রিক সঙ্কটে আমরা মায়ের কাছে আকূল প্রার্থনা জানিয়েছে নতুন অবতারে আসার। সেই ভাবনাই মণ্ডপে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।’
পথের সাথী ক্লাবের সর্বজনীন দুর্গোৎসব এবার প্রথম শুরু হল। দেওয়ানপাড়া মাঠে ‘চক্রব্যূহ’ থিম দর্শনার্থীদের চোখ টানবে। বিশালাকার স্টেডিয়ামের আদলে মণ্ডপে শুধুই আবাসনের সারি। মাঝে ফাঁকা একটি গোলাকার। দুর্গার সাবেকি সাজ। ক্লাব সম্পাদক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘মহাভারত থেকে বর্তমান সময়ে চক্রব্যূহে বারবার আটকে যাচ্ছে মানুষ। সামাজিক, রাজনৈতিক, আর্থিক, পারিবারিক সেই ব্যূহ থেকে বের হওয়ার আকুতি তুলে ধরা হয়েছে।’
দক্ষিণেশ্বর ডোমেস্টিক এরিয়া দুর্গাপুজো ও কালীপুজো কমিটির পুজো এবার ৭৬ বছরে পা দিয়েছে। তাদের থিম, ‘সবুজের কলতান’। গাছ, পাখির বাসা ও রংবেরঙের পাখিতে ভরে উঠেছে মণ্ডপ। দুর্গা সাজবেন থিমের সাজে। পুজো কমিটির উদ্যোক্তা অরিন্দম ভৌমিক বলেন, ‘আধুনিক সমাজ প্রকৃতির ধ্বংসলীলায় মেতে উঠেছে। সবুজায়নের স্বার্থে আমরা এই থিম বেছে নিয়েছি।’ আড়িয়াদহ বিবেকানন্দ সঙ্ঘের পুজো এবার ৬২ বছরে পা দিয়েছে। তাদের থিম ‘মাটির আহ্বানে’। হাঁড়ি,কলসি, মাটির সরঞ্জাম, পুতুল, বাঁশের কুলো, ঝুড়ি, হাতপাখা ইত্যাদি সামগ্রী দিয়ে সেজে উঠেছে মণ্ডপ। দুর্গার ডাকের সাজ। পুজো কমিটির সম্পাদক সন্দীপ ঘোষ বলেন, ‘গ্রাম্য সরল সাধারণ জীবন ভুলে শহুরে জীবনের স্রোতে ভাসা মানুষ শান্তির খোঁজে সেই মাটির কাছেই ফিরতে চাইছে।’ পঞ্চাননতলা ইউথ অ্যাসোসিয়েশনের পুজো এবার ১৬ বছরে পা দিয়েছে। বাংলাদেশের পোড়ো জমিদারবাড়ির আদলে গড়ে উঠছে মণ্ডপ। পুজো কমিটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক প্রণব বিশ্বাস বলেন, ‘ওপার বাংলার নকিপুরের জমিদার হরিচরণ রায়ের বাড়িতে মাতৃ আরাধনা হতো। সেই ভগ্নপ্রায় জমিদারবাড়ি ও বন্ধ হয়ে যাওয়া পুজো এবার মণ্ডপে তুলে ধরা হয়েছে।