• ‘কতক্ষণ দাঁড়াব!’ পার্সেল করা খাবার নিয়েই মণ্ডপের লাইনে
    বর্তমান | ১০ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বিধাননগর: ‘কী কী কিনলে?’ বান্ধবীর প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই তরুণের উত্তর, ‘মটন রোল আর চিকেন মোমো নিলাম।’ পার্সেলে ভরা খাবার। তা দেখিয়ে তরুণ বলেন, ‘কতক্ষণ দাঁড়াতে হবে জানি না। তাই কিনে রেখে দিলাম। কোল্ড ড্রিংক্সের বোতলও নিয়ে নিয়েছি।’ রুমাল দিয়ে ঘাম মুছলেন তিনি। তরুণী স্মার্টফোনের ফ্রন্ট ক্যামেরা ওপেন করলেন। ঠোঁটে লিপস্টিপের টাচ দিয়ে প্রশ্ন, ‘একবার দেখ তো। ঘেঁটে গেল না তো।’

    মহাষষ্ঠীর সন্ধ্যা। লেকটাউনের ঘড়ির মোড়ের কাছে এসে ঠেকেছে শ্রীভূমির ভিড়। জনস্রোত সুনামির মতো বইছে। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে সবাই। কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে, কেউ জানে না। তাই ঝুঁকি না নিয়ে পার্সেলে প্যাক করে খাবার নিয়ে লাইন দিয়েছেন একাধিক দর্শনার্থী। ‘খিদে পেলে প্যাকেট খোল, খাও, নো চাপ।’ তারপর ফের ক্লান্তিহীন অপেক্ষা। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বোর হয়ে ফেরিওয়ালাকে ডাকলেন একজন। তারপর কিনে ফু দিয়ে বুদবুদ উড়িয়ে দিলেন হাওয়ায়। বাকিরা সবকটি মুহূর্ত ক্যামেরা বন্দি করেই চলেছেন। ভিড়ে দাঁড়িয়ে সত্তর বছরের এক বৃদ্ধ। বলেন, ‘তিরুপতির বালাজি মন্দির এ জীবনে আর যেতে পারব কি না জানি না। তাই শ্রীভূমিতেই এলাম। দেখে শান্তি পাবে মন।’

    খান্না মোড় থেকে হাতিবাগানমুখী রাস্তায় একাধিক খাবারের দোকান। পুজোর জন্য সেখানে অটো ও বাস ঢুকছে না। হাঁটা পথে একের পর এক ঠাকুর দেখে চলেছেন দর্শনার্থীরা। সঙ্গে বিরামহীন পেটপুজো চলছে। নলিন সরকার স্ট্রিটের পুজো দেখে বেরিয়েই একের পর খাবারের স্টল। কেউ দাঁ঩ড়িয়ে খাচ্ছেন। কেউ পার্সেল করে নিচ্ছেন। তারপরই দাঁড়িয়ে পড়া নবীন পল্লির লাইনে। সেখানেও দীর্ঘ লা‌ইন। তবে পার্সেল থাকায় নিশ্চিন্ত অধিকাংশ দর্শনার্থী। সুযোগ বুঝে বের করছেন চিকেন পকোড়া, ফিস ফ্রাই, ঠান্ডা পানীয়। খেয়ে আবার হাঁটা। এবার হাতিবাগান সর্বজনীন। ওই জায়গায় রেস্তরাঁ আছে কয়েকটি। বহু রাত পর্যন্ত খোলা। মণ্ডপের মতো সেখানেও ডিনারের লম্বা লাইন।

    সল্টলেকের এফ ডি ব্লকের লাইনে দাঁড়িয়ে মোবাইলে চোখ তরুণের। পুলিসের কিউআর কোড স্ক্যান করে দেখে নিচ্ছেন পুজোর গাইডম্যাপ ও পার্কিং প্লেস। এফ ডি দেখে দ্বিতীয় জায়গায় যাওয়ার পরিকল্পনা। মণ্ডপের পাশে বসেছে মেলা। ফলে রথ দেখা কলা বেচা হল। ঠাকুর দেখে পেটপুজোও হল সঙ্গে কেনাকাটাও। এ কে ব্লকের মণ্ডপের বাইরেও পসরা সাজিয়ে বসে বিক্রেতারা। সেখানে ছোট পেঁচা থেকে বড় কাঠের বড় ডাইনিং টেবিল পর্যন্ত মিলছে।

    নিউটাউনের সিটি স্কোয়ার। সন্ধ্যার পরই আস্ত মাঠ ভরে গিয়েছে কানায় কানায়। এই পুজোর বয়স মাত্র তিন বছর। কিন্তু কলকাতার বিগ বাজেটের পুজোকে টেক্কা দিচ্ছে নিউটাউন সর্বজনীন। অন্য স্বাদের থিম, অপরূপ প্রতিমা। সেখানেও বাড়তি পাওয়া মেলার কেনাকাটা আর ভরপেট সুখাদ্য।
  • Link to this news (বর্তমান)