• রাতেই CCU-তে ভর্তি করাতে হলো অনশনরত অনিকেতকে
    এই সময় | ১১ অক্টোবর ২০২৪
  • অনশনরত জুনিয়র চিকিৎসক অনিকেত মাহাতোর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় বৃহস্পতিবার রাতেই তাঁকে আরজি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁকে ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ)-তে ভর্তি করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, রাতে অনিকেতের শারীরিক পরীক্ষা করা হয়। তারপরেই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসক অনিকেত মাহাতোর শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। প্রতিদিন চিকিৎসকদের একটি প্রতিনিধি দল অনশনরত জুনিয়র ডাক্তারদের শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করে দেখেন। রক্তচাপ, শরীরে শর্করার মাত্রা কত, কিডনির উপর কোনও প্রভাব পড়ছে কি না, সবটাই নজরে রাখা হচ্ছিল।

    এ দিন আরজি কর হাসপাতালের চিকিৎসক সৈকত নিয়োগী জানিয়েছিলেন, অনিকেতের মূত্রে কিটোন বডি পাওয়া গিয়েছে, যা অত্যন্ত চিন্তার। কারণ শরীরে গ্লুকোজ এবং গ্লাইকোজ়েন শেষ হয়ে গেলে মূত্রে কিটোন বডি মেলে। অর্থাৎ অনিকেতের লিভার ঠিকমতো কাজ করছে না বলে জানিয়েছিলেন তিনি।

    এই চিকিৎসক আরও বলেন, 'শরীরে যদি এই কিটোন বডি জমা হয় সেক্ষেত্রে যে কোনও সময় রোগী কোমায় চলে যেতে পারেন।' অনিকেতকে সকালেই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শও দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু তিনি অনশন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত অনড় থাকেন এবং হাসপাতালে যেতে চাননি। বৃহস্পতিবার রাতে অনিকেতের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। সেই সময় চিকিৎসকরা তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নেন। রাতেই অনশনের মঞ্চ থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। আপাতত সেখানেই চিকিৎসারত তিনি।

    আরজি করে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় সুবিচার চেয়ে আন্দোলনে নেমেছেন রাজ্যের জুনিয়র ডাক্তাররা। আর এই আন্দোলনের অন্যতম মুখ অনিকেত। ঝাড়গ্রাম জেলার শিলদার বাসিন্দা অনিকেত ছোট থেকেই মেধাবী। ২০১২ সালে এসএসকেএম হাসপাতালে এমবিবিএস-এ ভর্তি হন তিনি। ২০১৭ সালে পাশ করেন। এরপর ২০২২ সালে তিনি নিট পিজিতে উত্তীর্ণ হন এবং অ্যানস্থিসিওলজিতে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হন।

    উল্লেখ্য, শনিবার রাত সাড়ে আটটা থেকে ধর্মতলায় আমরণ অনশনে বসেন ছয় জন জুনিয়র চিকিৎসক। রবিবার তাঁদের যোগদান করেন অনিকেত। এই মুহূর্তে আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন তনয়া পাঁজা, অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়, অর্ণব মুখোপাধ্যায়, স্নিগ্ধা হাজরা, সায়ন্তনী ঘোষ হাজরা এবং পুলস্ত্য আচার্য। তাঁদেরও শরীর ভাঙছে ক্রমশ।

    আরজি করে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় সুবিচার-সহ ১০ দফা দাবিতে এই আমরণ অনশন কর্মসূচি নিয়েছেন তাঁরা। বুধবার রাতেই মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের সঙ্গে বৈঠক করেন জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিরা। কিন্তু ১০ দফা দাবি পূরণের দাবিতে অনড় জুনিয়র চিকিৎসকরা। তাঁরা অনশন জারি রেখেছেন।

    মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর অনিকেত একটি ভিডিয়ো বার্তায় বলেন, ‘আমার মনে হয় এই বৈঠক করার প্রয়োজন ছিল না। এই বৈঠক ফলপ্রসূ হলো না। আমরা আশা করেছিলাম এই বৈঠক সফল হবে। আমি এখনও মনে করি যে লড়াইয়ে নেমেছি তা শেষ পর্যন্ত লড়ব। রাজ্য প্রশাসনের কাছে সদর্থক পদক্ষেপ করার আবেদন করব।’ জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে দাঁড়িয়েছেন বহু সিনিয়র চিকিৎসকরাও।

    তথ্য সহায়তায়: অনির্বাণ ঘোষ
  • Link to this news (এই সময়)