কলকাতার প্রাচীন দুর্গাপুজোগুলির সিংহভাগ ছড়িয়ে আছে উত্তর কলকাতাতেই। যা দেখতে শুধু এ শহর নয়, আশপাশের সব জেলা ও রাজ্য থেকেও ছুটে আসেন মানুষ। সেখানকার এক চেনা গলিতেই দাঁড়িয়ে ১৯০ বছরের পুরনো কুণ্ডু বাড়ি। বাড়ির বয়স ২০০ ছুঁই ছুঁই হলেও এ বাড়ির পুজোর বয়স কিন্তু মাত্র ১৬ বছর!
এ বাড়িতে আগে পুজো হত না। দুর্গাপুজোর প্রচলন শুরু এ বাড়ির বর্তমান কর্তা জয়দীপ কুণ্ডু ও তাঁর পরিবারের হাত ধরে। বলতে গেলে এক নবীন পুজো, তা হলে এই পুজোকে নিয়ে মানুষের উন্মাদনা কেন?
এ বাড়ির পুজোর একটি বিশেষত্ব রয়েছে। প্রতি বছর এই পুজোর মাধ্যমে এই পরিবার বাঘ ও পরিবেশ রক্ষার বার্তা প্রদান করে আসছেন প্রথম থেকেই। আর সেটাই মন কেড়েছে বাঙালির।
গৃহকর্তা জয়দীপ কুণ্ডু নিজে এক সংস্থার সাথে যুক্ত, যারা বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ ও বিশেষত ব্যাঘ্র সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করে। শুধু জয়দীপ নন, তাঁর স্ত্রী-ও যুক্ত এই কর্মকাণ্ডে। বন্যপ্রাণের প্রতি তাঁদের এই টান বোঝা যায় কুণ্ডু বাড়ির পুজোয় গেলেই। দুর্গা এখানে সিংহবাহিনী নন, ব্যাঘ্রবাহিনী।
জয়দীপ বলেন, “আমাদের এই পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ আজ আশঙ্কার মুখে। তাই যে ভাবেই হোক, এই পরিবেশ ও বন্যপ্রাণকে রক্ষা করতে মানুষের কাছে সঠিক বার্তা পৌঁছে দিতেই এই ভাবনা। আর মানুষের অত্যাচারে যে বন্যপ্রাণ ধ্বংসের মুখে, তাকে রক্ষা করতে একমাত্র মহামায়াই পারেন। তাই এখানে দুর্গা ব্যাঘ্রবাহিনী।” জয়দীপ আরও জানান, মানুষকে এ দেশের জাতীয় সম্পর্কে পশু সম্পর্কে সচেতন করতেও সিংহের বদলে বাঘকে বাহন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
একচালার পুজো। প্রতিমার নানা প্রাকৃতিক চালচিত্র ও বাঘের হরেক দৃশ্য। দেব-দেবীদের ঘিরে নানা প্রাণী, পশু, পাখি, মাছ, সরীসৃপ ও পতঙ্গ। এ বছর থাকছে আরও এক বিশেষ উদ্যোগ। পুজো উপলক্ষে ১২টি পিকচার পোস্ট কার্ড প্রকাশ করছেন জয়দীপরা। যেখানে মূলত ব্যাঘ্রবাহিনীকে নিয়ে নানা উপস্থাপনা তুলে ধরা হয়েছে। যাঁরা এ বছর কুণ্ডু বাড়ির পুজো দেখতে যাচ্ছেন, তাঁদের সীমিত সংখ্যায় এই পোস্টকার্ড বিতরণ করা হচ্ছে।