কৃশানু মজুমদার: ওপাড় থেকে এপাড়। ঠিকানা বদলে গিয়েছে অস্কার ব্রুজোঁর। বসুন্ধরা কিংসের প্রাক্তন কোচের হাতেই এখন ইস্টবেঙ্গলের জিয়নকাঠি। লাল-হলুদ সমর্থকরা আশায় বুক বাঁধছেন, দুঃসময় কাটিয়ে স্প্যানিশ কোচ অস্কার সুসময় ফেরাবেন ইস্টবেঙ্গলে। জমকালো মঞ্চে সোনালি রঙের খাম খুলে বিখ্যাত তারকারা বলে থাকেন, ''অ্যান্ড দ্য অস্কার গোজ টু...।''
অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসের এই ছবি বহু চেনা। আর বাক্যবন্ধনীও বহু শ্রুত, বহু পরিচিত। সেই সুরেই কেউ আবার বলছেন, ''অ্যান্ড অস্কার গোজ টু...।'' ফুটবলের মক্কায় পা রাখার আগেই অস্কার ব্রুজোঁকে নিয়ে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে লেসলি ক্লডিয়াস সরণীর ক্লাবে।
স্প্যানিশ কোচের ছোঁয়ায় কি বদলে যাবে লাল-হলুদ? মশাল কি ফের জ্বলে উঠবে? কলকাতায় নেমেই বড় পরীক্ষায় বসতে হবে স্প্যানিশ কোচকে। নেমে পড়তে হবে চির আবেগের ডার্বিতে। যে ম্যাচ নিমেষে একজনকে প্রতিষ্ঠা দিয়ে যায়। আবার যে ম্যাচে খসে পড়ে তারা।
নিঃসন্দেহে কোচিং জীবনের অন্যতম কঠিন মুহূর্তের সামনে অস্কার ব্রুজোঁ। ভাল করে কলকাতার জলহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে উঠতে না উঠতেই নেমে পড়তে হবে বাংলা ভাগ হয়ে যাওয়ার সেই ম্যাচে।
ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের মতোই সর্বশক্তিমানের কাছে লাল-হলুদের নব্য কোচের জন্য প্রার্থনা শুরু করে দিয়েছেন বসুন্ধরা কিংসের প্রেসিডেন্ট ইমরুল হাসান। আজকাল ডিজিটালকে ইমরুল বলছেন, ''আমি নিজে ইস্টবেঙ্গলের শুভানুধ্যায়ী। একজন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকও বটে। অস্কার ব্রুজোঁ আমার ক্লাবে কোচিং করিয়েছেন। আমি চাইব, অস্কার যেন ইস্টবেঙ্গলকে উতরে দেন।''
বসুন্ধরার সঙ্গে অস্কারের সম্পর্ক বহুদিনের। ৬ বছরের সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটেছে চলতি বছরের জুলাইয়ে। ১২টা ট্রফি তিনি দিয়েছেন পদ্মাপাড়ের ক্লাবকে। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ১০৮টি ম্যাচের মধ্যে ৯১টিতে জিতেছেন তিনি। পরাজয় মাত্র ৫টিতে।
অনেক স্মরণীয় মুহূর্ত রয়েছে। সুখের স্মৃতিও বহু। বসুন্ধরার সঙ্গে বিচ্ছেদ হলেও তিনি রয়ে গিয়েছেন অনেকের স্মৃতিতে। এখনও সে দেশের ফুটবলের শ্বাসপ্রশ্বাসে অস্কার। স্মৃতিরোমন্থন করে ইমরুল হাসান বলছেন, ''অস্কার একবার আমার জন্য এল ক্লাসিকোর টিকিট জোগাড় করে রেখেছিল। সেবার অবশ্য আমার আর যাওয়া হয়নি।''
স্পেনে ছুটি কাটিয়ে বাংলাদেশে ফেরার পরে কখনও রিয়াল মাদ্রিদের জার্সি, আবার কখনও বার্সেলোনার জার্সি উপহার হিসেবে দিয়েছেন ইমরুলকে।
একবার এক টুর্নামেন্টে সেরা কোচের পুরস্কার হিসেবে মোটরবাইক উপহার পেয়েছিলেন স্প্যানিশ কোচ। সেই মোটরবাইক নিজে না নিয়ে এক মাঠকর্মীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন তদানীন্তন বসুন্ধরা কোচ। বাংলাদেশ ছেড়ে চলে আসার আগে তাঁর বাড়ির যাবতীয় আসবাব, জিনিসপত্র বিক্রি না করে দিয়ে এসেছেন ক্লাবের একাধিক কর্মীকে। ইমরুল বলছেন, ''আইএসএলে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান আর মহামেডান স্পোর্টিংয়ের খেলা দেখেছি। ইস্টবেঙ্গল এখনও পর্যন্ত জয় না পেলেও ওদের খেলা মন্দ লাগেনি। অস্কার দায়িত্ব নিয়ে নিশ্চয় দলটাকে গুছিয়ে নেবে। আইএসএলে তো অবনমন নেই। তাই অস্কার মুক্তমনে কোচিং করাতে পারবেন। ইস্টবেঙ্গলে অস্কারের সাফল্য কামনা করি।''
অতীতে ভারতে কোচিং করেছেন অস্কার। স্পোর্টিং ক্লুবে দ্য গোয়ার কোচ ছিলেন। মুম্বই সিটির সহকারী কোচ হিসেবে কাজ করেছেন। মুম্বই এফসির হেড কোচ হিসেবে দেখা গিয়েছে অস্কার ব্রুজোঁকে। ভারতীয় ফুটবল সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান রয়েছে ভালই।
সূত্রের খবর, লাল-হলুদ নিয়ে হোমওয়ার্ক ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছেন তিনি। স্পেন থেকে কলকাতা নেমে পড়ার পরই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ শুরু করে দেবেন স্প্যানিশ কোচ।
তাঁর অধীনে জাতীয় দলে এবং বসুন্ধরাতে খেলেছেন আতিকুর রহমান। প্রাক্তন কোচ সম্পর্কে শ্রদ্ধাশীল আতিকুর বলছেন, ''অস্কার ব্রুজোঁ সবসময়ে জিততে চান। হেরে গেলে ওকে হতাশা গ্রাস করে। নতুন ক্লাবে স্যারের সাফল্য কামনা করি।''
বিশ্বফুটবলে রিয়াল মাদ্রিদের প্রত্যাবর্তনের কথা কে না জানেন! সাজঘরে ছেলেদের তাতিয়ে দেওয়ার জন্য মাদ্রিদের বিখ্যাত ক্লাবের উদাহরণ দিতেন অস্কার। শেষ পরযন্ত লড়াই করার কথা বলতেন অস্কার। টাইম মেশিনের সাহায্য না নিয়ে ফর্টিস এফসি লিমিটেডের ফুটবলার আতিকুর বলছেন, ''স্যারের পরিবর্তনগুলো খুব কার্যকরী হত। গেম রিডিং খুবই ভাল। একবার আমরা শেখ জামালের বিরুদ্ধে ৩-১ গোলে পিছিয়ে পড়েছিলাম। ষাট মিনিটের মাথায় তিনটি পরিবর্তন এনেছিলেন কোচ। ওই তিনটি পরিবর্তন ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল।''
বাংলাদেশের সাংবাদিকদের বহুবার অস্কার ব্রুজোঁ বলেছেন, ''আমি ম্যাজিশিয়ান নই, আমি একজন যোদ্ধা।''
বহুযুদ্ধের সেই সৈনিক নতুন করে পরীক্ষায় বসতে চলেছেন নতুন ক্লাবে। পদ্মাপাড়ের ফুটবলমহল তাকিয়ে অস্কারের দিকে। কঠিন এই যুদ্ধে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের সঙ্গে অস্কার পাশে পাচ্ছেন বাংলাদেশকেও।