পুজো প্যান্ডেলের ভেতর দিয়ে দৌড়চ্ছে মেট্রো রেল, গঙ্গার নিচে ঢুকলেই নীল আলো
আজকাল | ১১ অক্টোবর ২০২৪
আজকাল ওয়েবডেস্ক: নিচে কল্লোলিনী গঙ্গা। ওপরে হাওড়া ব্রিজ। ব্রিজের একপাশ থেকে দেখা যাচ্ছে দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরের চূড়া। ব্রিজ থেকে সিঁড়ি বেয়ে নামলেই প্ল্যাটফর্ম। দাঁড়িয়ে আছে মেট্রো রেল। সর্বসাধারণের জন্য। ঝকঝকে তকতকে ট্রেনের ভিতরে ঢুকে পড়া যায় সহজেই। ঢুকলেই ভেতর থেকে দেখা যাবে গঙ্গার নিচ দিয়ে ছুটে চলার সময় কামরার নীল আলো। না, এটা আমাদের চিরপরিচিত হাওড়া স্টেশন নয়। গোটাটাই একটি 'থিম'। যা তৈরি করেছে উল্টাডাঙার কবিরাজ বাগান সর্বজনীন। উল্টাডাঙা মুচিবাজার রোডে। এবছর এই পুজো পা দিল ৫৯ বছরে। পূজার মূল আয়োজক কলকাতা পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেসের কাউন্সিলর অমল চক্রবর্তী। থিম পরিকল্পনা থেকে পুজোর সমস্ত আয়োজন, প্রাণপুরুষ তিনিই।
কখনও দার্জিলিংয়ের টয় ট্রেন আবার কখনও আস্ত একটা বিমান। এবার হাওড়া ব্রিজের সঙ্গে মেট্রো রেল। প্রতি বছরই বিশেষ বিশেষ থিম এই পূজার বৈশিষ্ট্য। কারণ জানাতে গিয়ে অমল জানিয়েছেন, 'আমার এলাকায় অনেক গরিব মানুষ বাস করেন। তাঁদের সকলের পক্ষে সম্ভব হয় না টিকিট কেটে বিমান বা মেট্রোতে চড়ার। অনেকেই আছেন যারা দার্জিলিং বা সেখানকার টয় ট্রেনের কথা শুধুই শুনেছেন। এই লোকগুলোকে অন্তত একটি দিনের জন্য আমি চেষ্টা করি এই জিনিসগুলো উপভোগ করবার। সে কারণেই আমি এই ধরনের থিম তৈরি করি। তাঁরা যখন এগুলো উপভোগ করেন তখন আমার দারুন লাগে।' যত্ন নিয়ে ধীরে ধীরে তৈরি করা হয় এই থিম। এবছর গোটা বিষয়টি তৈরি করতে লেগেছে ৭৪ দিন।
তৃতীয়ার দিন কবিরাজ বাগান সর্বজনীনের পুজো উদ্বোধন করেছেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। খুলে দেওয়া হয়েছে পুজো মণ্ডপ সকলের জন্য। প্রায় সাড়ে ছ'কাটা জমির ওপর আয়োজন করা হয় এই পূজার। একসঙ্গে ভেতরে ঢোকানো হয় ২৫০ জন দর্শনার্থীকে। প্রতিদিন কত দর্শক আসছেন? উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, দুই থেকে আড়াই লাখ দর্শক গড়ে প্রতিদিন তাঁদের পুজোয় আসছেন।
আর শুধু পুজোর আয়োজনই নয়। মহালয়া এবং তৃতীয়াতে মহিলা, শিশু ও বয়স্কদের জন্য ছিল বস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি। পূজায় প্রতিদিন ব্যবস্থা থাকছে ভোগ-এর। অষ্টমীর দিন সেই ভোগ বিতরণ করা হয় সর্বসাধারণের মধ্যে। ২০,০০০-এর কাছাকাছি মানুষকে ওইদিন খাওয়ানো হয় পোলাও, আলুর দম, চাটনি ও পায়েস। এলাকার বাসিন্দারা ছাড়াও দর্শনার্থী যারা আসেন তাঁদের সকলের হাতেই তুলে দেওয়া হয় এই ভোগের প্যাকেট। তবে বিসর্জন কিন্তু দশমীতে হয় না। এই পুজোর প্রতিমা বিসর্জন হয় দ্বাদশীর দিন। অবশ্যই দশমীতে হয় সিঁদুর খেলা। যেখানে মেতে ওঠেন মহিলারা। হয় বরণ। দ্বাদশীর বিসর্জনের পরে ফের শুরু হয় নতুন থিম-এর ভাবনা। পরের বছরের জন্য।