• দশপ্রহরণ নয়, দুর্গার দশ হাতে ধরা রান্নার বাসন
    এই সময় | ১১ অক্টোবর ২০২৪
  • গৌতম ধোনি, কৃষ্ণনগর

    বাসনও হয়ে উঠতে পারে আত্মরক্ষার অস্ত্র! প্রয়োজনে বাসন-অস্ত্রে সজ্জিত হয়েই সমাজের অসুরের সঙ্গে লড়াই করতে হবে মহিলাদের। এমন ভাবনা থেকেই বাসন দিয়ে অভিনব দুর্গা গড়েছেন নদিয়ার গয়েশপুরের এক শিল্পী তপন পাল। তাঁর তৈরি দুর্গা দশপ্রহরণের বদলে হাতা-খুন্তি, বটি, বেলনি, গ্যাস লাইটার, কাঁটা চামচ-সাঁড়াশি ধারণ করে রয়েছেন। এগুলিই তাঁর যুদ্ধাস্ত্র। শুধু অস্ত্রই নয়, দেবী দুর্গা নিজেও তৈরি হয়েছেন বালতি, থালা, গ্লাস দিয়ে। সিংহ ও অসুরের তেজ বোঝাতে দু’জনকেই গ্যাস ওভেনের ওপর রেখেছেন শিল্পী। মানে সেখানেও সেই রান্নাঘরের সরঞ্জাম। থালা-বাসনের এমন দুর্গা এ বার দেখা যাবে চাকদহের একটি মণ্ডপে।তপন হাওড়ার একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিল্পকলার শিক্ষক। শিল্পের টানে প্রতি বছরই নতুন নতুন আইডিয়া মাথায় এনে অভিনব দুর্গা গড়েন তিনি। ছুটির দিনে ও রাতের দিকে বাড়িতে বসে বসে আপনমনে কাজ করেন। কোনও বার বিভিন্ন গাছের শুকনো পাতা দিয়ে পরিবেশবান্ধব দুর্গা গড়েছেন। কোনও বার আবার পেন-পেন্সিল-ইরেজ়ার দিয়ে গড়েছেন প্রতিমা। কখনও ব্যবহার করেছেন পাট, কাগজের মণ্ড, কাচের টুকরোও। ২০২০ সালে আস্ত একটা থান ইট খোদাই করে মিনি দুর্গা গড়ে বেশ প্রশংসা পেয়েছিলেন। সে বার ওই কাজের জন্য তাঁর নাম উঠেছিল ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসে।

    তপন বলেন, ‘আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে আমার শিল্পী মন এমন ভাবনা জুগিয়েছে। রান্নাঘরের যাবতীয় সরঞ্জাম দিয়েই অসুর দলনী মাকে সাজিয়েছি। দেবী দুর্গার দশ হাতের অস্ত্রগুলো কারও চোখে হতে পারে প্রতীকী। আবার সমাজের অসুরদের সঙ্গে লড়াই করে নিজেকে বাঁচানোর জন্য মহিলাদের হাতের অস্ত্রও হয়ে উঠতে পারে এই সরঞ্জামগুলো।’

    কড়াই উলটো করে সাজিয়ে দেবদেবীর মুখমণ্ডল বানানো হয়েছে। বালতির হাতল খুলে সেটি মাথার ওপরে লাগিয়ে গড়া হয়েছে দেবীর মুকুট বা গয়না। আর মাথার দিক থেকে কাঁটাচামচ উলটো করে এমনভাবে ঝোলানো হয়েছে যে দেখে মনে হচ্ছে, সেগুলো প্রতিমার কেশসজ্জা। সোজা করে রাখা একটি বালতির ওপর উপুড় করে আর একটি বালতি আটকে গড়া হয়েছে শরীর। একটা গ্লাসের মধ্যে আরেকটা গ্লাস আটকে গড়া হয়েছে হাত। ৬ ফুট উঁচু, ১৪ ফুট চওড়ার সপরিবার এই দুর্গা গড়তে সাড়ে চার মাসের বেশি সময় লেগেছে বলে জানিয়েছেন শিল্পী।

    ঠাকুর দেখে কচিকাঁচারা যাতে মজা পায় সে দিকেও ভেবেছেন শিল্পী। গণেশের ভুঁড়ি গড়েছেন বড় হাঁড়ি দিয়ে। ইঁদুর তৈরি করেছেন শিল-নোড়া দিয়ে। সরস্বতীর হাঁস গড়া হয়েছে কেটলি দিয়ে। চাকদহ খোসবাস মহল্লার মিলন মন্দির যুব সংঘের মণ্ডপে দর্শন মিলবে এই প্রতিমার।
  • Link to this news (এই সময়)